বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিপিএল) প্রথম আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অন্যতম বক্তব্য ছিল একাডেমি করা। তারা দেশি ক্রিকেটারদের উন্নতি করার নানা পরিকল্পনার ফুলঝুরি ছুটিয়েছিলেন, যা এখনো অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্ণধারের মুখের বুলি। ৫ বছরে ৪টি আসর শেষ হলেও একাডেমিতো দূরে থাক দেশি ক্রিকেটারদের জন্য কোনো কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, অনেকেই মনে করেন শুরু থেকে নানা ভাবে ঠকানো হচ্ছে দেশি ক্রিকেটারদেরই। প্রথম আসর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা এখনো বিভিন্ন দলের কাছ থেকে টাকা পাবেন। কিন্তু অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক দল বিক্রি করে চলে গেছেন, কেউ বা নিষিদ্ধ হয়ে দল ছেড়েছেন। তাই অনেকের পাওনা টাকা এখনো উদ্ধারও হয়নি। এবার ৫ম আসরের আগে দেশি ক্রিকেটারদের জন্য এলো আরো নতুন দুঃসংবাদ। বিপিএল গভর্নি কাউন্সিলের ভাষ্যতে এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দাবিতে একাদশে খেলবে ৫ জন করে বিদেশি। সেই সঙ্গে যখন ইচ্ছা, যতজন সম্ভব বিদেশি রেজিস্ট্রেশন করানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই দুটি নিয়মেই দেশি ক্রিকেটারদের বড় ক্ষতি করা হলো মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট।
কক্সবাজারে মাস্টার্স ক্রিকেটে রাজশাহীর হয়ে খেলতে এসে দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘একাদশে পাঁচজন বিদেশি মানে সেখানে একজন করে দেশি ক্রিকেটারের খেলার সুযোগ থাকছে না। যদি ৮টি দল ৫ জন করে বিদেশি খেলায় তাহলে ৮ জন দেশি ক্রিকেটারকে বসে থাকতে হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো দল বিদেশি নির্ভর হয়ে দেশি তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের খেলাবে না। তাতে আমাদের ছেলেরা বঞ্চিত হবে সবদিক থেকে।’
একটা সময় চিন্তা ছিল বিপিএলে সাঙ্গাকারা, ক্রিস গেইল, রবি বোপারা, ব্রাভোদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেলে, ড্রেসিং রুম শেয়ার করলে দেশি ক্রিকেটাররা বিশেষ করে তরুণরা অনেক কিছু শিখবে তাদের কাছে। বড় বড় নামিদামি ক্রিকেটারদের সঙ্গে থেকে, দেখে তাদের সাহসও বাড়বে। কিন্তু এখন যে নিয়ম হচ্ছে এখানে দেশি ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ কমে যাচ্ছে। তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা। এই বিষয়ে মাসুদ বলেন, ‘আইপিএলের দিকে তাকান, তারা কিন্তু তাদের দেশি ক্রিকেটারদের প্রাধান্যটা আগে দেয়। আমাদের এখানে সাকিব, তামিমরা ছাড়া, নিচের দিকের ক্রিকেটাররা সেভাবে টাকাও পায় না। তারা এখানে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এই নিয়মে। এছাড়া খেলতে যারা পারবে না তারা ধীরে ধীরে নিজেদের আত্মবিশ্বাসটা হারাবে। আমি মনে করি ৪ জন বিদেশি খেলাটাই ঠিক ছিল। একজন বাড়িয়ে আমাদের দেশি ক্রিকেটারদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার রাস্তা করে দেয়া হলো।’
বিপিএলের ৫ম আসর শুরুর তিন/ চার মাস আগে থেকেই দলগুলো বিদেশি ক্রিকেটারদের দলে নিতে শুরু করেছে। কোন দল কোন বিদেশি ক্রিকেটার নিবে তা নিয়ে চলে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা। এতে করে বিপুল অঙ্কের টাকাও চলে যাচ্ছে বিদেশি ক্রিকেটারদের হাতে। এবিষয়ে খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, ‘এই ধরনের নিয়মের বিপক্ষে আমি সব সময় ছিলাম, এখনো আছি। ধরেন গেইলকে ৩০ লাখ টাকায় পাওয়া যেত কিন্তু ওপেন থাকায় এখন তার পিছনে ছুটছে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি। এতে করে তার টাকার পরিমাণও তিনি যেভাবে খুশি নিচ্ছেন। ফলে দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশি ক্রিকেটারদের হাতে। এটা না করে এই টাকা যদি একটা দেশি ক্রিকেটারের জন্য খরচ হতো তাহলে আমাদের ছেলেরা আরো ভালো খেলতে উৎসাহ পেত।’
অন্যদিকে বিপিএলের বেশির ভাগ দলই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পরিচালকদের হাতে। ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচ হিসেবে আছেন বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন, খুলনা টাইটান্সের মালিক আরেক পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, বরিশাল বুলসে আছেন এম এ আউয়াল বুলু, সিলেটের সঙ্গে আছেন বিসিবি পরিচালক শফিউল ইসলাম নাদেল। এতে করে বিপিএলে একটি অদৃশ্য শক্তির খেলা কাজ করছে বলে মনে করেন খালেদ মাসুদ। তিনি বলেন, ‘বিপিএলের দলগুলোর সঙ্গে বোর্ড পরিচালকদের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা ঠিক নয়। এতে করে এখানে এক ধরনের অদৃশ্য পেশিশক্তিও কাজ করে। বিসিবি থাকবে অভিভাবকের ভূমিকাতে। এখানে যদি পরিচালকরা জড়িয়ে থাকেন তাহলে অদৃশ্য যে শক্তির খেলা হবে সেটিও ক্রিকেটারদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।’