দেশ ছাপিয়ে এখন বিদেশেও কদর বেড়েছে রংপুরের ঐতিহ্য ও সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আমের। এ বছর প্রচুর আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও সৌদি আরবে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা থাকায় ওইসব দেশের ফল ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি ফল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দাম বেড়ে গেছে হাঁড়িভাঙার। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। সে আম এখন বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা দরে। সুমিষ্ট স্বাদের হাঁড়িভাঙা আমের একমাত্র চাষ হয় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, ১৪ হাজার ৭৯ একর জমিতে ছোট-বড় মিলে ১০ হাজার বাগানে হাঁড়িভাঙার চাষ হচ্ছে। গত বছর ১৪৭ কোটি টাকা মূল্যের ২১ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি বছর কৃষি বিভাগ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২২ হাজার মেট্রিক টন। হাঁড়িভাঙা আমের বড় মোকাম পদাগঞ্জ হাটের আড়তদার মাহবুবুল হক বাবুল জানান, ‘আমের মৌসুমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আম ব্যবসায়ীরা পদাগঞ্জ থেকে হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে গিয়ে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে রপ্তানি করেন। ’ আম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্রিন অ্যাডভেন্টের পরিচালক রাফিউর রহমান রাফি জানান, ‘জুনের প্রথম সপ্তায় হাঁড়িভাঙা আমের মৌসুম শুরু হয়। চলে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেকটাই কমে গেছে। ’ হাঁড়িভাঙা আমের আরেক মোকাম রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন পিটিসি মোড়। এখানকার ‘গোলাপ ফল ভাণ্ডার’-এর স্বত্বাধিকারী গোলাপ মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ৭০০-৮০০ মণ আম বিক্রি করি। এর বেশির ভাগই জাপান ও আমেরিকায় পাঠানোর জন্য নিয়ে যান রাজধানী ঢাকার ফল ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ কম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। আমের আকারভেদে বাগান মালিকদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মণ দরে আম কিনতে হচ্ছে। মুনাফা ধরে তা সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। ’ এখানে কথা হয় ঢাকার কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী রশিদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ বছর জাপান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবে রাজশাহীর আমের পরিবর্তে রংপুরের হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি। সেখানকার ফল ব্যবসায়ীরাও হাঁড়িভাঙা আমদানি করছেন। রংপুরে সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা মণ দরে আম কিনছি। ঢাকায় নেওয়া পর্যন্ত প্রতি মণে খরচ পড়ে ২০০-৩০০ টাকা। বিমান খরচ দিয়ে আমরা প্রতি মণ আম বিক্রি করছি ৯-১০ হাজার টাকায়। প্লাস্টিকের ঝুড়িতে করে আম পাঠানো হয়। গত ১৫ দিনে ২ হাজার মণ হাঁড়িভাঙা আম জাপান, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছি। ’ কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী আজমত উল্লাহ ও মোখলেস মোল্লা বলেন, ‘স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আম বিদেশি ক্রেতাদের জাদু করেছে। সাত দিন ধরে আমরা রংপুরে আছি। এরই মধ্যে ৩ হাজার মণ হাঁড়িভাঙা আম জাপান ও অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছি। ’