গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একটার পর একটা সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ দল। পেসারদের নিয়ে আলাদা কাজ করার সুযোগই হয়নি কোর্টনি ওয়ালশের। পেস বোলিং কোচ অবশেষে সুযোগটা পেলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মাঝের এই ফাঁকা সময়ে। পেসারদের নিয়ে মিরপুরে করছেন পেস বোলিং ক্যাম্প। এই ক্যাম্পসহ আরও অনেক কিছু নিয়েই কাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কথা বললেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি—
কেমন চলছে বোলিং ক্যাম্প
অনেকেই বলছেন আমি নাকি বোলারদের অ্যাকশন বদলে ফেলছি। আসলে সে রকম কিছুই করা হয়নি। আমরা শুধু ওদের আরও সাহস দিচ্ছি এবং সাহায্য করার চেষ্টা করছি। যে সমস্যাগুলো ওদের মধ্যে দেখেছি, সেগুলো শোধরানোর এটা একটা সুযোগ। সে জন্যই আমি একটু আগে চলে এসেছি। ভুলগুলো ঠিক করে কিছু জায়গায় উন্নতি আনতে হবে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে কাজটা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। তবু যখনই সুযোগ পাচ্ছি আমরা বাইরে কাজ করছি। অন্য সময় মিটিং করছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে ক্রিকেট মস্তিষ্কটাকে আরও ধারালো করার চেষ্টা করছি।
পেসারদের বয়স ও মৌলিক জ্ঞান
মৌলিক জ্ঞানের অন্যতম হলো ধারাবাহিকতা। যতটা ধারাবাহিক হওয়া উচিত, ততটা ওরা নয়। অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে এটা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সফরও করি কম। তবে ভালো দিক হলো ওরা পরিশ্রম করতে আগ্রহী। সবচেয়ে বড় বিষয়, তারা এখনো তরুণ। গ্রহণ করার ক্ষমতাটা বেশি। মাশরাফি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তরুণদের প্রয়োজনে সেও পরামর্শ দেয়।
তাসকিনের গতি কমে যাওয়া
সে ধারাবাহিক হওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, যেখানে ও বল ফেলতে চায়, সেখানে ফেলতে পারছে না। আমরা চাই ও জোরে বল করুক। কারণ, তার গতি আছে এবং সেটা সে কাজে লাগাতে পারে। তাকে আক্রমণে আরও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে এবং ঠিক জায়গায় বল ফেলতে হবে। তাহলেই গতিটা কাজে লাগবে।
মোস্তাফিজের বোলিং
ইংল্যান্ডে আমি খেয়াল করেছি, ও স্টাম্পের একটু দূরে সরে যাচ্ছিল। চেষ্টা করছি, সে যেন আরও সোজা এবং ভারসাম্যপূর্ণ ভঙ্গিতে বল করতে পারে। তার মানে এই নয় যে ওর বোলিং অ্যাকশন বদলে যাবে। প্রয়োজন না হলে মোস্তাফিজের অ্যাকশন বদলাব না। আমরা তার আগের গতিটা ফেরানোর চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি ওকে স্টাম্পের আরও কাছে নিতে। মোস্তাফিজ বিশেষ এক প্রতিভা। ও চায় তার সেরাটা দিতে। আমি নিশ্চিত, সে ভালো অবস্থায় চলে আসবে।
কামরুল ইসলাম সম্পর্কে
তাকে নিয়ে আমাদের আরও কিছু কাজ করার আছে। সেও ভালো করতে আগ্রহী। ও জানে, দেশের বাইরে হয়তো তার আরও সুযোগ আসবে। তরুণ ফাস্ট বোলাররা দলে আসতে চায়। তাদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে উপকৃত করবে।
জুটি বেঁধে ফাস্ট বোলিং
আজকের (গতকাল) সভায় আমরা এটা নিয়েই কথা বলেছি। ফাস্ট বোলাররা জুটি বেঁধে শিকারে নামে, একে অন্যকে তথ্য দেয়। ফিজ ও তাসকিন একে অন্যকে উৎসাহ দিতে পারে। একজন ফাস্ট বোলার বলেছে সে তার সঙ্গীকে সাহায্য করতে চায়, এটা খুব ভালো। আমরা এখন সেভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছি। মাঝে মাঝে যেটা হয়, একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে ওরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে যায়। আমি ও কার্টলি অ্যামব্রোস একে অন্যকে অনেক সাহায্য করতাম। আমরা ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাতে চাইতাম।
যদি চম্পকা রমানায়েকে আসেন
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করে, এমন সবকিছুর সঙ্গেই আমি আছি। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না, তবে শুনেছি উনি আসছেন। তাঁকে আমি চিনি এবং দুই হাত বাড়িয়েই স্বাগত জানাব। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আমরা একসঙ্গেই কাজ করতে পারি।
ক্যাম্পের পর পেসারদের কাছে প্রত্যাশা
ওদের বোলিংয়ে আরও বেশি ধারাবাহিকতা, নিয়ন্ত্রণ, বৈচিত্র্য এবং চিন্তার ছাপ দেখতে চাইব আমি। ওদের সব সময় বলি, ‘তোমরাই তোমাদের গন্তব্য ঠিক করবে। মাঠে যাও, কাজটা ঠিকভাবে করো। উন্নতির চেষ্টা করো এবং সব সময় শেখো।’ আবার খেলা শুরুর আগে তারা যদি প্রথম অংশ, মানে নিয়ন্ত্রণ আর ধারাবাহিকতাটুকুও অর্জন করতে পারে, আমি খুশি থাকব।
কোচিং কতটা উপভোগ করছেন
আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে আবার আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। বলতে পারেন অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমার মধ্যে যেটুকুই আছে, সেটা এই তরুণদের দিতে পারছি। তাদের উন্নতির অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আমাদের পুরো কোচিং স্টাফই রোমাঞ্চিত। আমরা এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের সঠিক পথ দেখাতে চাই। সেটা শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও।