প্রায় সব দম্পতিই স্বপ্ন দেখেন সুন্দর ফুটফুটে একটা শিশুর। ঠিক এমনটাই আশা ছিল অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ভোলা প্যাপাস ও তাঁর স্বামীর। তবে তাঁদের স্বপ্ন যেন একটু তাড়াতাড়িই পৃথিবীর আলো দেখে ফেলে। মাত্র ২৫ সপ্তাহেই জন্ম নেয় ভোলা প্যাপাসের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান দিমিত্রা প্যাপাস। জন্মের সময় প্রায় ৯৫০ গ্রাম ওজন ছিল দিমিত্রার, যা কিনা একহাতের তালুতে সহজেই নেওয়া যায়। গত মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের র্যান্ডউইক রয়াল হসপিটাল ফর উইমেনে জন্ম হয় ‘অকালজাত শিশু’ দিমিত্রার। গুরুতর শারীরিক জটিল অবস্থা নিয়ে জন্মে এখনো বেঁচে থাকায় দিমিত্রাকে অলৌকিক শিশু বলে আখ্যায়িত করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেকেই।
সিডনির লিভারপুলের একটি হাইস্কুলের শিক্ষিকা ভোলা প্যাপাস অন্যান্য দিনের মতোই শিক্ষাদানে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে জরুরি ভিত্তিতে সিডনির বিখ্যাত র্যান্ডউইকের রয়াল হসপিটাল ফর উইমেনে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে তাঁকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানেই দিমিত্রার জন্ম দেন প্যাপাস। ঘটনার বর্ণনায় প্যাপাস বলেন, পুরো ব্যাপারটা ৪৫ মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। ডাক্তার ও সমস্ত ধাত্রীরাও একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেছেন।
জন্মের পর গত দুই মাস ধরেই দিমিত্রা হাসপাতালটির নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) গভীর পরিচর্যায় রয়েছে। দিমিত্রা অনেকটা অলৌকিকভাবেই এখনো বেঁচে আছে। রয়াল হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহপরিচালক অধ্যাপক কেই লুই দিমিত্রার ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেন, প্রতি বছর প্রায় ৬০০-র মতো অকালজাত শিশুর জন্ম হয় এই হাসপাতালে। তবে এদের বেশির ভাগই দুই থেকে তিন মাস বেঁচে থাকে। ২৩ সপ্তাহ বয়সী শিশুর জন্মের ঘটনাও রয়েছে যাদের ওজন ছিল মাত্র ৪০০ গ্রামের মতো। তবে এদের ৫০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে বেঁচে থাকার। ২৫ সপ্তাহ বয়সী দিমিত্রার শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর শঙ্কাজনক। এমন শারীরিক অবস্থায় পাঁচ শতাংশ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে নবজাতকের। দিমিত্রাকে এনআইসিইউতে একটি ভেন্টিলেটর ও রক্ত সঞ্চালক ইনকিউবেটরে রাখার এক সপ্তাহের মধ্যেই তার ওজন বেড়ে আড়াই কেজিতে দাঁড়ায় বলে জানান কেই লুই।
নতুন প্রযুক্তিতে ২৩ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও বেঁচে থাকার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছেরয়াল হাসপাতাল ছাড়া এমন ঘটনার নজির পুরো পৃথিবীতে খুবই বিরল বলে জানান অধ্যাপক কেই লুই। তিনি আরও বলেন, দিমিত্রা সত্যিই আমাদের হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের একটি অলৌকিক ঘটনা। দিমিত্রা এখন নিজে নিজেই শ্বাস-নিশ্বাস নিতে পারছে। তবে আরও ছয় সপ্তাহের মধ্যে যদি দিমিত্রা এমনভাবেই শ্বাস নিতে পারে তবে তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে ভোলা প্যাপাস ও তার পরিবার। সেই সুখের প্রত্যাশায় রয়েছে তার পরিবারের সবাই।
তথ্যসূত্র ও ছবি: এবিসি নিউজ, অস্ট্রেলিয়া।