ইংরেজি ঝড়ে বিপর্যস্ত যশোর শিক্ষা বোর্ড। এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পাস করতে পারেননি। যে কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫—উভয় কমে গেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধবচন্দ্র রুদ্র বলেন, ‘এ বছর ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি খারাপ করেছে। অন্যান্য বছর যেখানে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার থাকে ৯০ শতাংশের ওপরে। এবার সেখানে মাত্র ৭২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যে কারণে সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা পদার্থ ও উচ্চতর গণিত বিষয়ে ভালো করতে পারেনি। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে ভালো করলেও এ দুটি বিষয়ে ধরা খেয়েছে। এ কারণে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।’
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যশোর বোর্ড থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯৫ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬৭ হাজার ২০০ জন। জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ২ হাজার ৪৪৭ জন পরীক্ষার্থী। মোট পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ০২ শতাংশ। যেখানে গত বছর ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৭২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৯ জন। জিপিএ-৫ পায় ৪ হাজার ৫৮৬ জন। মোট পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এ বছর জিপিএ-৫ ও পাসের হার—উভয় দিক থেকে যশোর শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয় ঘটেছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ থেকে এ বছর ৬৬০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬১২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫০ জন। যেখানে গত বছর ৩৭৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৩৩২ জন। জিপিএ-৫ পায় ২০৯ জন। সে তুলনায় এ বছর ফল বিপর্যয় ঘটেছে।
জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, জিপিএ-৪ থেকে জিপিএ-৫-এর মাঝখানে অবস্থান করছে ৩১৯ জন শিক্ষার্থী। এরা সবাই জিপিএ-৫ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গণিত ও পদার্থবিদ্যা এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে খারাপ করেছে। যে কারণে সবদিক দিয়ে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমে গেছে।
তিনি বলেন, এ বছর থেকে কোচিং-প্রাইভেট নয়; পাঠদান কার্যকর করার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে, সে বিষয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে ডেকে জবাব চাওয়া হবে।
শহরের ডাক্তার আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ থেকে এ বছর ৬৫৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪৫৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে সাতজন। মোট পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যেখানে গত বছর ৯৪৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। জিপিএ-৫ পায় ১১ জন। সেখানে এ বছর তুলনামূলক ফল খারাপ হয়েছে।
জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত বছরের পদ্ধতি ছিল কোনো বিষয়ের দুই পত্রের নৈর্ব্যক্তিক ও দুই পত্রের রচনামূলক প্রশ্ন মিলিয়ে পাস। ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয়ের এক পত্রে খারাপ করলেও অন্য পত্রের নম্বরের গড়ে পাস করে যেত। কিন্তু এ বছর নিয়ম বদল করে আলাদা আলাদা পত্রে পাসের পদ্ধতি চালু করার কারণে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই ইংরেজিতে খারাপ করছে। সমস্যাটা কোথায়—শিক্ষা কারিকুলামে নাকি কার্যকর পাঠদানে—বিষয়টি এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখা দরকার।’