নামের সঙ্গে তারকা শব্দটি যুক্ত থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় উপস্থাপিকা, মডেল শ্রাবণ্য তৌহিদাকে। একটা সময় দেখা গেল, তিনি প্রশ্ন শুনে তো বিরক্তিবোধ করছেনই না, উল্টো নিজেই প্রশ্নকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গেছেন। শ্রাবণ্যের অতি উপস্থাপনাপ্রীতির কারণে আসলে এমনটিই ঘটেছে। এর পেছনে নিজের ভালো লাগা তো আছেই, সঙ্গে কাজ করছে উপস্থাপনায় স্বতঃস্ফূর্ত সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্য, যে কারণে ডাক্তারির মতো ব্যস্ত পেশা সামাল দিয়েও তিনি বারবার ছুটে আসেন উপস্থাপনার মঞ্চে। তার উপস্থাপিত অনুষ্ঠানগুলোর একটি হলো বিনোদন জগতের সংবাদকর্মীদের নিয়ে। এ অনুষ্ঠানে তার মুখোমুখি হন দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অন্য মিডিয়ার বিনোদন-সংবাদকর্মীরা। মজার ব্যাপার হলো, এত দিন শ্রাবণ্য যাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এসেছেন, তাদেরই এখন তিনি সরাসরি প্রশ্ন করছেন ‘রঙিন পাতা’ নামের একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান মারফত।
বিষয়টি কৌতূহলোদ্দীপক, এ কারণে শ্রাবণ্যকে প্রশ্ন করার সুযোগ নেয়া—
‘রঙিন পাতা’ নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এখন আপনি নিজেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন করছেন। কেমন লাগে বলুন তো?
অবশ্যই ভালো লাগে। আমি তো তাদের প্রশ্ন করে মজা পাই। কারণ এতকাল সাংবাদিকরা শুধু আমাকে প্রশ্ন করেছে। এখন আমিই তাদের প্রশ্ন করছি। (হাসি)। তবে সবচেয়ে ভালো লাগার কারণ হলো, এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান আমাদের দেশে এর আগে কখনই হয়নি। এ নতুন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে ভালো লাগছে।
এ অনুষ্ঠানকে আপনি ব্যতিক্রম বলছেন কেন?
আসলে সাংবাদিকদের ওভাবে টিভি পর্দায় খুব একটা দেখা যায় না। একজন তারকার সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন, সেটা কতটুকু শ্রদ্ধার— সবকিছু মিলিয়ে এ অনুষ্ঠানকে আমার ব্যতিক্রমই মনে হয়।
এর বাইরে আপনার অন্য উপস্থাপনা কেমন চলছে?
এশিয়ান টিভিতে একটা কাজ করি ‘এশিয়ান কিচেন’ নামে। বিটিভিতে একটি চলছে। আর আগামী ঈদ উপলক্ষে নতুন কাজের ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। আগস্টের ১ তারিখ থেকে নতুন কিছু কাজ শুরু করব।
নাটকে আপনাকে এখন খুব একটা দেখা যায় না—
সত্যি বলতে কি, এখন আমি নাটক করি না। কারণ এর পেছনে প্রচুর সময় দিতে হয়, যেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই ধরুন, গত ঈদে কিন্তু কোনো নাটকেই অভিনয় করতে পারিনি। তবে এবারের ঈদের নাটকে অভিনয় করলেও করতে পারি।
ডাক্তারি করছেন, একই সঙ্গে মিডিয়ায় কাজ করছেন। বহুমাত্রিক পরিচয়ের প্রতি আগ্রহ আছে নিশ্চয়ই—
না, বহুমাত্রিক পরিচয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। ডাক্তারি করার পাশাপাশি যতটুকু সময় পাই, ততটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। কারণ উপস্থাপনা, মডেলিং আমার ভীষণ পছন্দের।
খেয়াল তো করছেন, এরই মধ্যে কয়েকজন তারকার বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটছে—
হ্যাঁ, তবে আমি বলতে চাই, যারা এ বিষয়কে ঘিরে অতি আগ্রহ প্রদর্শন করছেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই: আগ্রহ থাকা ভালো, কিন্তু কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া না করাই ভালো। আসলে বিচ্ছেদ কোথায় হচ্ছে না, সবখানেই হচ্ছে। তারকাদের সবাই চেনে বলেই এমন মাতামাতি। এটা ঠিক নয়।
বাংলাদেশের মিডিয়ায় নানা মাত্রিক সংকট চলছে। তরুণ হিসেবে কী বলবেন?
আমি মনে করি না সংকট চলছে। আমাদের নাটক বিশ্বমানের। বেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য নাটক মানুষ কম দেখে। কিন্তু ভালো নাটক তো হচ্ছে। আবার সিনেমার ক্ষেত্রেও একই কথা। সুদিন ছিল, আসবে। আমার মনে হয়, এ দেশে নায়ক-নায়িকার সংকট নেই, সংকট যারা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের পদ্ধতিগত জায়গায়।
যাবতীয় পছন্দের জিনিস…
আমার খুব পছন্দ খিচুড়ি। যেহেতু সেলফোন সবসময় সঙ্গে থাকে, তাই প্রিয় গ্যাজেট ফোন আর ক্যামেরার মাধ্যমে যেহেতু এতদূর আসা, সেহেতু গ্যাজেট হিসেবে এটিও পছন্দ। প্রিয় ঘোরাঘুরির জায়গা সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার; অন্যদিকে দেশের বাইরের মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, নেপাল। প্রিয় বই হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘ বলেছে যাবো যাবো’। প্রিয় সিনেমা অনেক। সর্বশেষ ভালো লেগেছে ‘দ্য রিডার’।
চলার পথে অনুপ্রেরণা—
আমার কাছে মনে হয়, স্বপ্ন দেখার সঙ্গে পরিশ্রম করলে সফলতা হাতে এসে ধরা দেবেই। এ কথাটিই আমার অনুপ্রেরণা।
শ্রাবণ্যের কাজগুলোর বড় সমালোচক তার কাছের মানুষরা, যারা নিয়মিত তার অনুষ্ঠান দেখেন। ‘তাদের বলে দেয়াই আছে, অনুষ্ঠান দেখলে কাগজ-কলম নিয়ে বসে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। আমাকে অনেক সুন্দর লেগেছে কিংবা অনুষ্ঠানটি ভালো হয়েছে— এমন সৌজন্য শুনতে চাই না। নিজের ভুল না ধরতে পারলে শিখব কীভাবে? শেখার কোনো শেষ নেই।’
ডাক্তারি পড়াশোনারও শেষ নেই! এফপিএসের প্রথম ভাগ শেষ। এখন পড়ছেন দ্বিতীয় ভাগ। চিকিত্সা নাকি উপস্থাপনা— কোনটাকে প্রাধান্য দেন?
চিকিত্সা আমার পেশা আর উপস্থাপনা আমার নেশা। যে কাজে থাকি, সেটাতেই ডুবে যাই এবং শতভাগ মনোযোগ দেই। তবে হ্যাঁ, মানের সঙ্গে কখনো আপস করি না। চিকিত্সা মহান পেশা, অনেক পড়াশোনা করতে হয়। দুটোর মধ্যে কখনো তুলনা চলে না। চিকিত্সাসেবা আমার দেহ আর উপস্থাপনা আমার অক্সিজেন। হা হা হা…