ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলেই তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস রচনা করেছিল বাংলাদেশ। সেই পথ ধরেই ৫ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে এগুতে শুরু করেছে টাইগররা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দল দুটি। শিশিরের কারণে ম্যাচের সময়েও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। দেড়টার পরিবর্তে ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর সাড়ে ১২টায়। আর এটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বেসরাকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল গাজী টেলিভিশন।
এই সিরিজের শুরু থেকেই শিশিরকে ধরা হচ্ছে প্রধান নিয়ামক হিসেবে। হয়তো শীতের মৌসুমে দিবারাত্রির ম্যাচ বিধায় বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে শিশির। যে কারণে ম্যাচ জয়ের জন্য টস জেতাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। যদিও শুক্রবারের ম্যাচে এর প্রমাণ খুব একটা পাওয়া যায়নি। শিশিরই যদি প্রধান নিয়ামক হতো তাহলে পরে বোলিং করে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ৪২.১ ওভারে ১৯৪ রানে অল আউট করা হয়তো সম্ভব হতো না। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে অধিনায়ক মাশরাফি টসে হারার পরও। বাস্তবতা হচ্ছে, পরে বল করলেও বাংলাদেশি বোলারদের ওপর শিশিরের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। নিয়মিত বিরতিতে জিম্বাবুয়ের উইকেট নেওয়া, বড় জুটি হতে না দেয়া বলতে গেলে সবকিছুতেই সফল টাইগাররা। তবে একেবারেই যে সমস্যা হয়নি তাও না। মাহমুদুল্লাহর বলে ব্রেন্ডন টেলরের ক্যাচটা যে ডিপ ফাইন লেগে আরাফাত সানির হাতে ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল, সেটার পেছনে শিশিরের একটা কারণ থাকতে পারে।
এবারের সিরিজের বড় সফলতা হচ্ছে সাকিব আল হাসানের একের পর এক নজর কাড়া পারফর্মেন্স। যদিও দুইবার বড় দুটি রেকর্ড ফস্কে গেছে সাকিবের হাত থেকে। টেস্ট ক্রিকেটে ২৫০ রান ও ২০ উইকেট সংগ্রহ করে অসাধারণ একটি মাইলফলকে পৌছার সুযোগ সৃষ্টি হলেও রানের কোটা পুরণ করা সাকিব, পুরণ করতে পারেনি উইকেটের কোটা। শুক্রবার সাকিবময় হয়ে ওঠা সিরিজের ১ম ওডিআই ম্যাচের চিত্রও একই। এক ম্যাচে সেঞ্চুরি সহ ৫ উইকেট সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটের বরেণ্য তিন জনের একজন হওয়ার সুযোগটি অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেছে সাকিবের। সেঞ্চুরি পুর্ণ করার পর ৪ উইকেট সংগ্রহ করেই সন্তুষ্ঠ থাকতে হয়েছে সাকিবকে। আদায় করতে পারেননি ৫ম উইকেটটি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তী ভিভ রিচার্ডস ও ইংল্যান্ডের অল রাউন্ডার পল কলিংউডের পাশে তৃতীয় ব্যক্তির আসনটি অলংকৃত করতে পারেননি সাকিব। চেস্টার ত্রুটি ছিলনা অধিনায়ক মাশরাফির। শেষ দিকে চরম আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েও সেই মাইলফলকটায় পৌছে দিতে পারেননি বাংলাদেশী আইকন সাকিবকে। তবে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও চার উইকেট নেওয়া ক্রিকেটারদের ক্লাবের ১২তম সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ শিবিরের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে দলবদ্ধ পারফর্মেন্স। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই দল হয়ে ওঠার লক্ষণটা পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠেছিল। শুক্রবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেটি স্পষ্ট হলো আরও। একটি দল হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মানসিকতা পুরোপুরিই ফিরে এসেছে সবার মধ্যে। মাথা উঁচু করে জেগে ওঠা টাইগারদের কাছে তাই জিম্বাবুয়ে হেরেছে ৮৭ রানে। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর গত এক বছরে ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। তাই গতকালের জয়টিই এ বছরের প্রথম জয়, যার মুল ভুমিকায় ছিলেন সাকিব। সেঞ্চুরির পাশাপাশি মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে নতুন রেকর্ডও গড়েছেন। এই জুটিতে ১১৯ রানের আগের রেকর্ডটি ছিল ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, রাকিবুল হাসানের সঙ্গে সেই রেকর্ডেও ছিলেন সাকিব।
সাকিবের পাশাপাশি দলের অন্য খেলোয়াড়রাও ক্রমে ধারাবাহিক হয়ে উঠছে। আগে থেকেই ধারাবাহিকতায় থাকা মোমিনুলের পাশাপাশি ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাটও এখন হাসতে শুরু করেছে। যদিও সিরিজের প্রথম ওডিআই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি লোকাল হিরো। তারপরও বদলে যাওয়া তামিম টেস্টের মত ঘরের মাটিতেও কিছু একটা দেখাবেন এমন আশা নিয়েই মুখিয়ে আছে বন্দর নগরীর দর্শকরা। টেস্টে মুশফিকুরের ব্যাট কিছুটা গোমড়া মুখে থাকলেও ওডিআই ম্যাচে এসে হাসতে শুরু করেছে। তাই অধিনায়ক মাশরাফির ভাষ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের দুটি ম্যাচে যদি জয় নিয়ে ঢাকায় ফিরতে পারে তাহলে মিরপুরে গিয়ে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য অর্জিত হবে টাইগাররাদের।