অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রের এ ছবির ঘটনা নিয়ে আদালতের আগে গত এপ্রিল মাসেই প্রশাসন ক্যাডারের দুই কর্মকর্তা বরিশালের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস এবং বর্তমান জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান ইউএনও গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ জন্য প্রথমে তারিক সালমনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। তারিক নোটিশের জবাবও দেন। পরে এই জবাব যায় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার নোটিশ সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান। গত ৩ এপ্রিল বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান গাজী তারিক সালমনকে কারণ দর্শানোর নোটিশটি দেন। আর বিভাগীয় কমিশনার ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র দেন।
গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী তারিক সালমন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ পাওয়া এবং নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা জানান।
জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে তিনি শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন এবং যে জবাব পাওয়া গিয়েছিল, সেটা কমিশনারের কাছে দিয়েছিলেন। আর বরিশালের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস (বর্তমানে জনপ্রশাসনে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বলেন, আমন্ত্রণপত্রে জাতির পিতার ছবি প্রথম পেজে না ছাপানোয় জেলা প্রশাসক তাঁকে (ইউএনও) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ইউএনও জবাব দিলে সেটি জেলা প্রশাসক তাঁর কাছে পাঠান। কিন্তু জবাবটি তাঁর কাছে যথাযথ মনে না হওয়ায় সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান। এরপর আর কিছু তিনি জানেন না।
পরে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ গত ৭ জুন বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারিক সালমনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেন। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে তারিক সালমনকে বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়। গত বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেন তারিক। আদালত প্রথমে তা নামঞ্জুর করেন। পুলিশ ইউএনওর দুই হাত শক্ত করে ধরে আদালতের হাজতখানায় নেয়। অবশ্য দুই ঘণ্টা পর তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করে মানহানিকর আদেশ প্রদান, পুলিশের ‘আইনবহির্ভূত’ কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় কর্মকর্তাদের আরেকটি সভায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কবির বিন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, তারিক সালমনের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা খুবই অন্যায়।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ইউএনও থাকাকালে তাঁর কিছু সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই সময় তিনি স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে ডিগ্রি পরীক্ষায় বহিষ্কার করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়াসহ কিছু ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ।
জানতে চাইলে বিসিএস ২৮তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমন প্রথম আলোকে বলেন, আগৈলঝাড়ায় থাকতে তিনি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হতে দেননি। নকল প্রতিরোধে অভিযান চালিয়েছেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম ও দুর্নীতি হতে দেননি। এসব কারণে একটি মহল ক্ষুব্ধ ছিল, তারাই হয়তো এসব করেছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই কর্মকর্তার সঙ্গে আইনের আবরণে অন্যায় কাজ হয়েছে। পুলিশের আচরণও বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় মামলার বাদী ওবায়েদুল্লাহকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তাঁকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না, এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ধানমন্ডি কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।