রাতুল মন্ডল,নুহাশ পল্লী থেকে ফিরে: পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে বইপড়া ও সাহিত্য আলোচনার পাশাপাশি দোয়া মাহফিলের মতো নানা আয়োজনে হিমু ও মিছির আলীসহ জনপ্রিয় অনেক চরিত্রের ¯্রষ্টা প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছে তার ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় জন্ম নেওয়া পাঠকপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ; মৃত্যুর পর যিনি সমাহিত হন গাজীপুরে তারই প্রতিষ্ঠিত নূহাশ পল্লীতে।
সাহিত্যের নতুন পাঠক তৈরির জন্য খ্যাত এই লেখকের পঞ্চম প্রয়ান দিবস ঘিরে কেন্দুয়া ও নূহাশ পল্লী- দুই জায়গাতেই চলছে বিভিন্ন আয়োজন।
বুধবার সকালে নূহাশ পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত এ লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে ‘হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে জানান তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আশা করছি, আগামী ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ওই জাদুঘরের একটা অংশ উদ্বোধন করা হবে।”
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে বাংলাদেশে একটি উন্নত মানের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
প্রয়াণ দিবসে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পরিবারের সদস্য ও ভক্তদের শ্রদ্ধা প্রয়াণ দিবসে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পরিবারের সদস্য ও ভক্তদের শ্রদ্ধা সেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান দেশের নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ ও সহযোগিতার আহ্বান জানান শাওন।
তিনি বলেন, “আমি আমার পক্ষ থেকে জীবন দিয়ে যতটুকু করবার সেটা আমি করব। কিন্তু আমি একা আমার আহ্বানে একটি ক্যান্সার হসপিটাল করা সম্ভব নয়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের একটা আহ্বানে সেটা সম্ভব ছিল।
“এক হুমায়ূন আহমেদের ডাকে বাংলাদেশে তার সমস্ত ভক্ত-পাঠক, তার দর্শকরা যেভাবে একত্রিত হত, আমার ডাকে সেটা হবে না। আমিতো আছিই, আমি সব সময় থাকব। ক্যান্সার হসপিটালের এ উদ্যোগটা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে নিতে হবে।”
এসময় অন্যদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ-শাওন পুত্র নিষাদ ও নিনিত, শাওনের মা তহুরা আলী, বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, হুমায়ুন আহমেদের বোন সুফিয়া হায়দার ও রোকসানা আহমেদসহ অসংখ্য ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে হুমায়ুন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
নূহাশপল্লীতে হিমু পরিবহন ও লেখক সমিতি
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের জনপ্রিয় চরিত্র হিমু ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহনের অর্ধশতাধিক সদস্য লেখকের প্রয়াণ দিবসে তার কবরে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা থেকে নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার পথে ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ এবং শোকবইতে ভক্তদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন তারা।
এছাড়া ‘হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনী’ এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সদস্য ও কর্মকর্তারাও এদিন উপস্থিত হন নুহাশ পল-ীতে। তারা সেখানে প্রয়াত লেখকের কবর জেয়ারতের পাশাপাশি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
প্রয়াণ দিবস লেখকের প্রতিষ্ঠিত শহীদস্মৃতি বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীদের শোকর্যালি প্রয়াণ দিবস লেখকের প্রতিষ্ঠিত শহীদস্মৃতি বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীদের শোকর্যালি নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, সকাল থেকেই ভক্ত-দর্শকরা নুহাশপল্লীতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। বিশেষ করে হুমায়ূন ভক্ত তরুণ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থীরা নূহাশপল্লীতে ভিড় করছেন। সকালে আশপাশের মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা কোরআন তেলাওয়াত শুরু করে। মাদ্রাসা ও এতিম খানার শিক্ষার্থী ছাড়াও নুহাশ পল্লীতে আসা লেখকের ভক্তসহ প্রায় ৬০০ জনের দুপুরের খাবার আয়োজন করা হয় জানান তিনি।
উল্লেখ: জনপ্রিয় এ লেখক ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি।
হুমায়ুন আহমেদ শুধু সাহিত্য রচনা করেননি। তিনি নাটক ও সিনেমায় এ সাহিত্য রূপ দিয়েছিলেন। তার প্রথম টিভি নাটক “এইসব দিনরাত্রি” বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি।