সব সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে অবসরে যাচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী। কওমি মতাদর্শীদের সর্বোচ্চ এই নেতার অবসরে যাওয়ার ফলে কওমিদের শীর্ষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ফলে শীর্ষ পর্যায়ের পরিবর্তন আসছে দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক), সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য গঠিত কওমি শিক্ষা বোর্ড ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এবং দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক পদে। বড় এ পরিবর্তনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আজ হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা বৈঠকে পরিচালক থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন আল্লামা শফী। এরপর পর্যায়ক্রমে সব সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানটি পদ থেকে অবসরে যাবেন এই প্রবীণ আলেম। আল্লামা আহমদ শফীর পুত্র, হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সকাল ৯টার মধ্যে সব শূরা সদস্যকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ওই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। ’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাটহাজারী মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, ‘আল্লামা শফী দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার পর সোমবার মাদ্রাসায় আসেন। বার্ধক্যের কারণে তিনি আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তাই বেঁচে থাকা অবস্থায় হাটহাজারী মাদ্রাসার দায়িত্ব কাউকে দিয়ে যেতে চান। তাই এ শূরা বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক পদ থেকেও অবসরে যাওয়া ঘোষণা দেবেন। ’ কওমি মতাদর্শী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটহাজারী মাদ্রাসার যিনিই পরিচালক হবেন, তিনিই আল্লামা শফী যেসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেসব পদে অসীন হবেন। দীর্ঘ সময় ধরে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা শফী দায়িত্ব পালন করেছেন বেফাকের চেয়ারম্যান হিসেবে। তাই যিনিই হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক হবেন তিনিই বেফাকের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া যিনি বেফাকের চেয়ারম্যান হবেন তিনিই সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য গঠিত আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাই এ মাদ্রাসার পরিচালক পদে যিনিই আসুন তিনিই বেফাক ও আল-হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান হবেন। জানা যায়, হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। রয়েছেন আরেক মুহাদ্দিস ও হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক পরিচালক মাওলানা আবদুল ওহাবের ছেলে মাওলানা আহমদ দিদার, হাটহাজারী মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগের শিক্ষক মুফতি মোহাম্মদ জসিম ও মুফতি নুর আহমদ। এরই মধ্যে মুফতি জসিমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আহমদ শফীর পুত্র আনাস মাদানী ও তার অনুসারীরা। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আনাসবিরোধী শিবির। হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক করতে চাইছে কওমিদের একটি অংশ। আরেকটা অংশ মাওলানা আহমদ দিদার ও মুফতি জসিমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। হাটহাজারীর অধিবাসী হওয়ায় পরিচালক পদে দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মাওলানা দিদার ও মুফতি জসিম।