৭-৮ জুলাই বসেছে জার্মানির হ্যামবার্গ শহরে ১২তম জি-২০ সম্মেলন। বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলো এ দুদিনের জন্য এখানে এক হয়েছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে এ সম্মেলনের প্রতিবছর নিয়মিত আয়োজন হয়ে আসছে। ২০০৮ সাল থেকে এ সম্মেলনে ২০টি দেশের সরকার প্রধান অংশ নিচ্ছেন। এর আগে এটি ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতো। এই ২০টি দেশ বিশ্বের ৮৫ শতাংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করে। পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এই ২০টি দেশের আওতাভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণে এই ২০টি দেশের সরকার প্রধান ব্যাপক ভূমিকা রেখে থাকেন।
এবার জি-২০ সম্মেলন নানা কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধ, উত্তর কোরিয়ার অসহিষ্ণু মনোভাব, কাতারের প্রতি সৌদি নেতৃত্বে ৮টি দেশের নিষেধাজ্ঞা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া, মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্পের দেয়াল তোলার মনোভাব অক্ষুণœ থাকা, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়া, ইউরোপে বারবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া, অভিবাসী সমস্যা, নানা রাজনৈতিক কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি সমস্ত কিছুই এবারের জি-২০ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনটা থুয়ে কোনটা সামলাবেন বিশ্বনেতারা তাই এখন দেখার বিষয়। এসবের বাইরে ভুটান সীমান্ত নিয়ে চীন ও ভারতের শুরু হয়ছে নতুন উত্তেজনা। দুদেশের সীমান্তেই এখন দুশের সৈন্যরা টাংক, কামান গোলাবারুদ নিয়ে অবস্থান করছে। সম্মেলনে দেখা হয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ছবি তোলার সময় তারা কাছাকাছিই দাঁড়িয়েছিলেন, তবে তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়েছে কি-না এখনো জানা যায়নি। সারাবিশ্বের চোখ অবশ্য তাদের উপর খুব বেশি নিবদ্ধ নেই। এবারের সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ ট্রাম্প ও পুতিনের সাক্ষাৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম দেখা হচ্ছে তাদের। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই দুজন খুব আলোচনায়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই পুতিনকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা আখ্যা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনেও রুশ গোয়েন্দাদের হাত আছে এ নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতকে স্মরণীয় বলে আখ্যা দিলেন ট্রাম্প। সাংবাদিকদের জানালেন, তার সঙ্গে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। ব্যক্তিগত আলোচনায় বসার আগে দুজন খুব উষ্ণ করমর্দন করেছেন, যা দেখে বোঝা গেছে দুজন দুজনের জন্য কতখানি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।
সে যাই হোক, দুদিনের এ সম্মেলনের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ অনেক। ট্রাম্প ও পুতিনের ব্যক্তিগত সাক্ষাতের পর তারা বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কি কি সিদ্ধান্ত নেন তাই এখন দেখার বিষয়। বিশেষ করে সিরিয়া নিয়ে। ক্রিমিয়া দখল নিয়েও রাশিয়ার প্রতি যে বাড়তি ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সে ব্যাপারে দুজনের কী কথা হয় তাও দেখার বিষয়। উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে ট্রাম্প একপ্রকার চূড়ান্ত মতামত জানিয়ে দিয়েছেন, আর ধৈর্য ধরার সময় নেই। উত্তর কোরিয়া সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলেছে। এবার সরাসরি আক্রমণে যাওয়ার হুমকি দিলেন ট্রাম্প। তা নিয়েও উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীনের সঙ্গে কী বৈঠক হয় তাও দেখার বিষয়।
সব মিলিয়ে এবারের জি-২০ সম্মেলন কল্পনাতীত টানটান উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একদিকে যখন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বৈশ্বিক পরিস্থিতি সামলানোর জন্য একত্রিত হয়েছে অন্যদিকে তখন হামবুর্গের রাস্তায় চলছে এসব পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন। হাজার হাজার পুলিশ হাজার হাজার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করছে। তারপরও বিশ্বনেতারা এই বিভাজিত পৃথিবীতে এক করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সিএনএন, গার্ডিয়ান