খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে বানভাসি মানুষ

Slider সারাদেশ

base_1499452486-(7)

 

 

 

 

 

প্রায় এক মাস ধরে পানিবন্দি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সেখানকার বেশির ভাগ নলকূপ। এতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সংকট। এদিকে বন্যায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না কেউ, ত্রাণসামগ্রীও পর্যাপ্ত নয়। ফলে রয়েছে খাদ্য সংকটও।

বন্যাকবলিত ওই এলাকার বাসিন্দা আসদ্দর আলী বলেন, মাঝে মধ্যে ত্রাণ আসে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। একবেলা খেলে তো আরেক বেলা উপোস থাকতে হয়। এছাড়া ত্রাণসামগ্রীতে বড়দের জন্য খাবার দেয়া হলেও শিশুদের খাবার দেয়া হয় না। ফলে পরিবারের শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সবাই।

এ এলাকার বাসিন্দা কাজল দাশ বলেন, কষ্ট করে খাবারের অভাব পুষিয়ে নিলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব কোনোভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও সহজলভ্য নয়। ফলে বিপাকে পড়ছেন বন্যার্তরা।

একই সংকটের কথা জানান সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা এলাকার বন্যাকবলিতরা। অপর্যাপ্ত ত্রাণের কারণে দরিদ্র লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে অভিযোগ এ এলাকার বাসিন্দাদের।

বরুঙ্গা এলাকার স্কুলশিক্ষক শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বন্যাকবলিত অনেক দরিদ্র মানুষ সরকারি ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বজনপ্রীতি করে তালিকায় তাদের নাম তোলেননি। আবার বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে ত্রাণ দিলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা পাচ্ছে, তারাই বারবার পাচ্ছে; যারা বঞ্চিত তারা একবারও পাচ্ছে না। এ সমন্বয়হীনতার কারণে অনেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানিয়েছেন, বন্যাকবলিতদের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে আগে ১২৭ টন চাল ও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। নতুন করে ১৫০ টন চাল ও নগদ ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রাণমন্ত্রী সিলেট এসে বন্যার্তদের জন্য ৫০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন। সেগুলোও মজুদ আছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ পাচ্ছে।

গতকাল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ত্রাণ বিতরণকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছেন, বন্যার্তদের সরকারের তরফ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এ সহায়তা আরো বৃদ্ধি করা হবে।

আর গোলাপগঞ্জে ত্রাণ বিতরণকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় চন্দ্রিপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। চন্দ্রিপ্রসাদে ৯২ জন ও ফরিদপুরে ২৩ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় ত্রাণ অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন এখানকার আশ্রয়গ্রহীতারা।

ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া সায়েরা খাতুন বলেন, সরকারের তরফ থেকে যে সাহায্য দেয়া হয়, তা দিয়ে আমাদের পরিবারের একবেলার খাবার  জোটে। আরেক বেলার খাবার জোগাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। পরিবারের সদস্য অনুযায়ী ত্রাণের পরিমাণ নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

চন্দ্রিপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া আনা মিয়া বলেন, সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হয় টয়লেটের জন্য। শ’খানেক মানুষের জন্য এখানে মাত্র একটি টয়লেট। তাও খুবই নোংরা। টয়লেটের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবেলায় যথেষ্ট পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল। তিনি বলেন, উপদ্রুত এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় ৭৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া আরো ৭০টি মেডিকেল টিম প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে দেখা দিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। প্রায় এক মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে সিলেটের অন্তত ছয় উপজেলা।

এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী সিলেটে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলো— জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও কানাইঘাট উপজেলা আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। আর জেলার ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪৫টি পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *