বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে ৫টি দেশের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-চীন, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, চেক রিপাবলিকান ও ইতালি। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীন থেকে আনা হয়েছে ১৬টি এফ-৭বিজি ওয়ান যুদ্ধবিমান, ৯টি কে-৮ডব্লিউ জেট ট্রেইনার বিমান, ২৩টি পিটি-৬ বিমান। রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে ১৬টি ইয়াক-১৩০ বিমান, ৮টি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, ১টি এমআই-১৭১ই ভিআইপি সেলুন হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে। ইতালি থেকে ২টি এডব্লিউ-১১৯ কেএক্স হেলিকপ্টার ট্রেইনার বিমান, ২টি মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে। চেক রিপাবলিক থেকে ৩টি এল-৪১০ ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার এয়ারক্রাফট কেনা হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে এমআই-১৭/১৭১ সিরিজ হেলিকপ্টারের ১টি সিমুলেটর কিনেছে সরকার। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২টি শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (সোর্ড), বিমান বাহিনী পাহাড়কাঞ্চনপুর, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ৭৫ স্কোয়াড্রন ও ৭৪ স্কোয়াড্রন-এর জন্য ৫টি এয়ার ডিফেন্স রাডার, ১টি জিসিএ রাডার (বিমান বাহিনী মতিউর রহমান), ১টি লং রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স রাডার (বরিশাল) কেনা হয়েছে। সম্প্রতি সংসদ কার্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি সংসদে এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ৪ হাজার ৫৯৬ জন। এর মধ্যে বিমান বাহিনীতে আছে ১৭ হাজার ৩৯০ জন। এর মধ্যে সামরিক সদস্য রয়েছেন ১৩ হাজার ৬৯৪ জন এবং বেসামরিক ৩ হাজার ৬৯৬ জন। মন্ত্রী জানান, বিমান বাহিনীর পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি ৫ জন মহিলা কর্মকর্তা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সামরিক বৈমানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করছে। এছাড়া, আরো বেশ কয়েকজন মহিলা সামরিক বৈমানিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বিভিন্ন পেশায় সর্বমোট ৮০ জন মহিলা বিমান সেনা নিয়োগের কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘে বিমান বাহিনীর অবদান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১২টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার (৬টি কঙ্গোতে, ৩টি হাইতিতে এবং ৩টি মালিতে) এবং ১টি সি-১৩০ পরিবহন বিমান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে উড্ডয়ন পরিচালনা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৭৫০ জন সদস্য বিশ্বের ১০টি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। বিমান বাহিনীর উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মন্ত্রী সংসদকে জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ বিবেচনায় এবং বাহিনীত্রয়ের সর্বোচ্চ/প্রধান পদে সমতা আনতে গত বছরের ১৩ই জানুয়ারি বিমান বাহিনী প্রধানের পদটি এয়ার মার্শাল থেকে এয়ার চিফ মার্শাল পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার (৪ঠা নভেম্বর ২০১৩), বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক (৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৫)-এর এয়ার অফিসার কমান্ডিং এর পদের পদমর্যাদা এয়ার কমোডর থেকে এয়ার ভাইস মার্শাল পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, বাহিনীত্রয়ের সদর দপ্তরে বিদ্যমান পরিচালক পদে সামঞ্জস্যতা আনতে ও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিমান সদরের ৫টি পরিদপ্তরের পরিচালকের পদমর্যাদা গত বছরের ১০ই মে গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে এয়ার কমোডর পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। বিমান বাহিনী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, বিমান বাহিনীর ক্রমবর্ধমান অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, বর্ধিত সমুদ্রসীমাসহ বাংলাদেশের সামুদ্রিক আকাশসীমার উপর হুমকি বিবেচনা করে বিমান বাহিনীর আ্যারোস্পেস রেসপন্সসিবিলিটিকে ২টি কমান্ড (নর্দার্ন এয়ার কমান্ড অ্যান্ড সাউদার্ন এয়ার কমান্ড) এ বিভক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সমুদ্রসীমাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পিত সাউদার্ন এয়ার কমান্ড (মেরিটাইম) এর আওতায় বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমান ঘাঁটি স্থাপন এবং কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিকে আরো অত্যাধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির বিমান, রাডার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি দ্বারা আধুনিকায়নসহ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাংশের মেরিটাইম সেক্টরটির পরিধি ব্যাপক হওয়ায় শান্তিকালীন ও যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ধরনের অপারেশনে নিয়োজিত নৌবাহিনীকে কার্যকরী সহায়তা দিতে (এয়ার সাপোর্ট) সাউদার্ন এয়ার কমান্ড এ মেরিটাইম এয়ার সাপোর্ট অপারেশন সেন্টার (এমএএসওসি) স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।