এখনো আতঙ্কগ্রস্ত কবি, প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। তিনি ভালোভাবে কাউকে চিনতে পারছেন না। একটু উচ্চস্বরে কথা বললে ভয় পেয়ে যান। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কখনও কেঁদে দিচ্ছেন। খাবারে রয়েছে তার অরুচি। তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। ভয়, আতঙ্কগ্রস্ততা কাটাতে এবং মনোবল অটুক রাখার জন্য তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল এসব কথা জানান, ফরহাদ মজহারের বোন সীমা। ফরহাদ মজহার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের ১১০৬ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে আরো কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাসায় যাবেন না। চিকিৎসকেরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এদিকে, ফরহাদ মজহারের অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে ডিবি পুলিশ। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এদিকে, খুলনায় শিববাড়িতে ফরহাদ মজহারের কাছে বাসের টিকিট বিক্রয়কারী হানিফ এন্টার প্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার নাজমুস সাদাত সাদী ঢাকায় এসে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার ভোরে ফরহাদ মজহারের আদাবরের বাসার কাছ থেকে কে বা কারা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ভোরে তিনি ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছিলেন। অপহরণকারী চক্র তার কাছে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণের প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগর থেকে তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ ঘটনায় ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৪। মামলাটি থানা পুলিশ ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগে স্থানান্তর করেছে। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
গতকাল সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওই হাসপাতালের ১১০৬, নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন ফরহাদ মজহার। তিনি বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক প্রফেসর ডা. একেএ মূসার অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের কেবিনের সামনে ও বাইরে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি রাখছেন। কেবিনের সামনে যারাই যাচ্ছেন তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাক্ষাৎকারীদের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় লিপিবদ্ধ করে রাখছেন তারা।
বারডেম হাসপাতালে ফরহাদ মজহারের বোন সীমা মানবজমিনকে জানান, বুধবার রাত থেকে তার ভাইকে একাধিক স্যালাইন দেয়া হয়েছে। তিনি কিছু খেতে পারছেন না। তিনি আরো জানান, তিনি এখনো মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। হতাশাগ্রস্ত। এমন ঘটনার শিকার হতে হবে তা তিনি কল্পনায় আনতে পারেননি। একটু উচ্চস্বরে কথা বললে তিনি ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। মাঝেমধ্যে তিনি কেঁদে দিচ্ছেন। তার ভয় ও আতঙ্ক কাটাতে মানসিক রোগের চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সিলিং করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, তার শরীরে হালকা জ্বর আছে। এছাড়াও বার্ধক্যজনিত রোগ রয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ না হলে তিনি বাসায় যাবেন না। পুলিশ বলছে, বাসা থেকে ফরহাদ মজহার যখন বের হচ্ছিলেন তখন তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি বাসা থেকে বাম হাতে লুঙ্গি ধরে নিচে নামছিলেন। পুলিশ এই তথ্যটি কোন স্থান থেকে পেলো পুলিশই এটি ভালো বলতে পারবেন। মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর পশ্চিম গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার শাহদাৎ হোসেন জানান, তাদের বিভাগে মামলাটি রয়েছে। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।