মালয়েশিয়ায় তিন দিনের অভিযানে যখন দেখা যায় গ্রেপ্তার হওয়া ১ হাজার ৫০৯ জন বিদেশির মধ্যে ৭৫২ জনই বাংলাদেশের নাগরিক, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করা কঠিন নয়। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কার্যকর তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার সরকার অবৈধ অভিবাসীদের এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ৩০ জুন পর্যন্ত দেশটিতে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী ৬ লাখ বিদেশি কর্মীর মধ্যে মাত্র দেড় লাখ ই-কার্ড নিয়েছেন। ৩০ জুন মধ্যরাত থেকে সেখানে অবৈধ বিদেশি কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করে এবং যাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই, তাঁদের আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।
সরকারি হিসাবে মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ২ লাখ ৮৭ হাজার বাংলাদেশি কাজ করছেন। বেসরকারি হিসাবমতে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সরকারি হিসাবের বাইরে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের বৈধ কাগজপত্র নেই। মালয়েশীয় কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশে দেশীয় জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা পর্যটক ও স্টুডেন্ট ভিসায় লোক পাঠায়। অনেক মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান কম মজুরিতে পাওয়া যায় বলে এ ধরনের কর্মী নিয়োগ দিতে উৎসাহী।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সেখানে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতার সুযোগ দিতে ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। এতেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রথমআলোর খবর অনুযায়ী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব দেশের বাইরে। মন্ত্রী-সচিব দুজনই বাইরে থাকলে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কে সিদ্ধান্ত নেবেন?
যেখানে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন বিকাশমান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়া ছিল জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম ভরসা। অতীতে কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এবার সেখানে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, অবিলম্বে সেটি কাটিয়ে না উঠতে পারলে জনশক্তি রপ্তানি খাতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই ‘আমাদের অনুরোধে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আশা করছি’ বলে বসে না থেকে এখনই পদক্ষেপ নিন।