মৃত্যুফাঁদ পেরিয়ে ইতালিতে যাওয়া এক বাংলাদেশীর গল্প

Slider টপ নিউজ

72629_qqq

 

 

 

 

৫ই মে রাত একটা। লিবিয়ার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেবার জন্য একটি ছোট ট্রলারে উঠেছিলেন প্রায় ৯০০ যাত্রী। তিল ধারণের জায়গা ছিলনা সে ট্রলারে ।
গাদাগাদি করে বসে থাকা ট্রলারের যাত্রীদের দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা। এ যাত্রীদের ভিড়ে ছিলেন বাংলাদেশের বাকের হোসাইন।
ট্রলারের সব যাত্রীর মতো মি: হোসাইনের লক্ষ্য ছিল ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে ঢুকবেন।
আর্থিক সচ্ছলতার আশায় স্বপ্নের ইউরোপে পৌঁছতে যে কোন পরিণতির জন্য তৈরি ছিলেন বাকের হোসাইন।
তার সামনে নিয়তির দু’টো দরজা খোলা ছিল। হয়তো সাগরে ডুবে মৃত্যু নয়তো ইটালিতে পৌঁছানো।
শুধু বাকের হোসাইন নয়, তার মতো আরো প্রায় ২৫০জন বাংলাদেশী ছিলেন সে ট্রলারে।
“জীবনে কিছু করতে পারতেছি না। অনেক কষ্ট ছিল বুকে। চিন্তা করলাম একটা ঝুঁকি নিয়ে দেখি। বাঁচলে তো বাঁচলাম, আর মারা গেলে তো কিছু করার নাই,” বলছিলেন বাকের হোসাইন।
ট্রলারটি লিবিয়া উপকূল ছেড়ে আসার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই উত্তাল সমুদ্রের রূপ দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন যাত্রীরা। ভয়ঙ্কর সে যাত্রার কথা আমৃত্যু মনে থাকবে বাকের হোসাইনের।
তিনি বলছিলেন, ” অনেকে অজ্ঞান হয়ে গেছে। বমি করতেছে। সাগর দেখে অনেকে ভয় পাইছে। মনে হয় নতুন জন্ম নিয়ে আসছি এখানে।”
লিবিয়া উপকুল থেকে ট্রলারে যাত্রা শুরুর পাঁচ ঘণ্টা পরে সেটি ইটালির সমুদ্র সীমায় ঢোকে। কিন্তু সেখানে ইটালির উপকূল রক্ষীদের জাহাজের সামনে পড়ে নৌকাটি।
প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ইটালির উপকূল রক্ষীরা সে ট্রলারের যাত্রীদের বড় জাহাজে তুলে আনা শুরু করে।
প্রায় ৫০০ যাত্রীকে বড় জাহাজে তোলার পর সে কাজ বন্ধ করে দেয় ইটালির উপকূল রক্ষীরা।
১০ ঘণ্টা সমুদ্রে ভাসমান থাকার পর ইটালির সময় রাত তিনটার দিকে একটি বড় জাহাজে তোলা হয় বাকি যাত্রীদের। বর্তমানে ইটালির একটি আশ্রয় শিবিরে আছেন বাকের হোসাইন।
নোয়াখালীর বাসিন্দা মি: হোসাইন বাংলাদেশ থেকে প্রথমে শ্রীলংকা এবং তারপর কাতার পৌঁছান। কাতার থেকে তুরস্ক হয়ে তিনি লিবিয়ায় পৌঁছেছিলেন।
এ পুরো যাত্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করে তিনি শেষ পর্যন্ত ইটালিতে পৌঁছেছেন।
লিবিয়া থেকে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে পৌঁছনোর এ পথ কিভাবে চিনলেন বাকের হোসাইন?
তিনি বলেন, ” অনেক নিউজে দেখছি যে লিবিয়া থেকে ইটালিতে যাওয়া যায়। তখন আমাদের এলাকার এক দালালের সাথে চুক্তি করলাম।”
মি: হোসাইনের মতো শত-শত বাংলাদেশী গত কয়েক বছরে এভাবেই ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালি গিয়েছেন।
আবার ভূ-মধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে অনেকেরই সলিল সমাধি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *