রেমিটেন্স: ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

 

72418_b1

 

 

 

 

 

 

রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের নিম্নগতি কোনোভাবেই কাটছে না। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ, যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। আগের অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ১৪.৪৭ শতাংশ। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৩০ লাখ (১২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পরের চার বছরে (২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬) যথাক্রমে ১৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার, ১৪.২২ বিলিয়ন, ১৫.৩১ বিলিয়ন এবং ১৪.৯৩ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের ঈদে প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বগতি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু মাস শেষে তা  হয়নি। প্রবাসী শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোর অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি মোবাইল সেবার মাধ্যমে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বিতরণের কারণেই এ মন্দাবস্থা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকার জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় মন্দাবস্থার কারণেও কমছে প্রবাসী আয়। আয় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত আছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই বছর ধারাবাহিক রেমিটেন্স কমে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই প্রবাসী আয় ১৪০০ কোটি ডলারের ওপরে ছিল। কিন্তু চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হঠাৎ প্রবাসী আয় কমে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে নেমে এসেছে, যা গত ৫ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন রেমিটেন্স।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে জুনে প্রবাসীরা ১২১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি মে মাসের তুলনায় সামান্য কম। মে মাসে গত অর্থবছরের মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি; ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে। যা ছিল গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। রমজান ও ঈদের মাসে বেশি আয় আসবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। তবে জুন মাসে প্রবাসী আয় আসে মাত্র ১২১ কোটি ডলার। যদিও গত বছরের জুন মাসে এসেছিল ১৪৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে মাসভিত্তিতে আয় কমেছে ১৭ শতাংশ। এই দুই মাস ছাড়া বছরের অন্য মাসগুলোতে রেমিটেন্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে কমেছিল। নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১০০ কোটি ডলারেরও কম। বাকি মাসগুলোতে এসেছে ১০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স আসে; যার পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি। ওই বছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিটেন্স প্রবাহ ৭.৬৪ শতাংশ বাড়ে। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরেই রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামে। ওই বছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা। যা আগের বছরের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহ্‌রাইন থেকে। বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ ইনকাম কমে যাওয়া রেমিটেন্স পাঠানো কমে গেছে। এছাড়া বড় কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো প্রক্রিয়া কঠিন হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন।  একই সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার যাতে প্রবাসীদের অনুকূলে থাকে সেদিকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এপ্রিলের শুরুতে প্রতি ডলারের আন্তব্যাংক গড়মূল্য ছিল ৭৯.৬৮ টাকা। চলতি মাসের শুরুতে প্রতি ডলারের আন্তঃব্যাংক গড়মূল্য বেড়ে হয় ৮০.৩৫ টাকা। সর্বশেষ তা বেড়ে ৮০.৬০ টাকায় দাঁড়ায়। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হয়ে পড়ায় বেশি মুনাফা পাওয়ার কথা প্রবাসীদের। কিন্তু ফলাফল মন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *