বাংলাদেশ দলের টেস্ট ও ওয়ানডেতে তিন নম্বর পজিশনে খেলা সেরা ক্রিকেটার কে? এই পজিশনে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান কার? একটু অবাক হলেও সত্যি টেস্টে এখনো ৯ বছর আগে জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়া হাবিবুল বাশাল সুমন ২৫২৩ রান করে রয়েছেন শীর্ষে। বর্তমান তারকাদের মধ্যে ১৩ টেস্টে মুমিনুল হক ৮১১ রান করে আছেন দ্বিতীয় স্থানে। তারপরে ২০১০ সালে জাতীয় দল থেকে বাদপড়া জুনায়েদ সিদ্দিকী ও চতুর্থ স্থানে ২০১২ তে বাদপড়া শাহরিয়ার নাফীসের অবস্থান। ওয়ানডেতেও ১৩০৩ রান করে শীর্ষে ৭ বছর আগে জাতীয় দল থেকে বিদায় নেয়া আফতাব আহমেদ। তারপর মো. আশরাফুল দ্বিতীয়, জুনায়েদ তৃতীয়, বাশার চতুর্থ ও মুমিনুল হকের অবস্থান ৫ম স্থানে। কিন্তু টেস্টে মুমিনুল থাকলেও ওয়ানডেতে তিনে এখনো অস্থিরতা। সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমানকে দিয়ে চেষ্টা হয়েছে। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দেখা গেল ইমরুল কায়েসকেও। কিন্তু এই সবার মাঝে কিছুটা সফল ধরে নেয়া যেতে পারে সাব্বিরকে। ১৫ ম্যাচে এই পজিশনে ২৬.৭১ গড়ে করেছেন ৩৭৪ রান। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় টাইগারদের জন্য তিন নম্বর পজিশনে খেলা সত্যি চ্যালেঞ্জের।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন দুই টেস্টে এই পজিশনটা নিয়ে থাকবে টাইগারদের বাড়তি চিন্তা। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গেম ডেভেলপমেন্টের ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘তিনে খেলাটা সত্যি চ্যালেঞ্জের। কারণ ওপেনার যখন মাঠে নামেন তার সামনে অনেক দরজা খোলা থাকে। আর ওপেনার যখন দ্রুত আউট হয়ে যায় বা অনেক বেশি বলে কম রান করে আউট হয় তখন তিনে যে নামবে তাকে পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। আগে ব্যাট করতে নামলে যেমন দলের রান বাড়ানোর দায়িত্ব নিতে হয়। তেমনি পরে ব্যাট করতে নামলে লক্ষ্য তাড়া করার কঠিন চ্যালেঞ্জ থাকে।’
টাইগারদের বর্তমান টেস্ট দলে তিন নম্বরে এখনো মুমিনুল হককেই অপরিহার্য ধরা হয়। মাত্র ২৩ ইনিংসে ৩৬. ৮৬ গড়ে ৬টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে করেছেন ৮১১ রান। ওয়ানডেতেও মুমিনুল রয়েছেন বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার উপরে। ১৫ ওয়ানডেতে ৩ ফিফটিতে করেছেন ৪২১ রান। তবে মুমিনুল ওয়ানডের ক্রিকেটার নয়- এই অযুহাতে তাকে দলেই রাখা হয় না এখন। তারপর সাব্বির রহমানকে খেলানো হয়। কিন্তু সমান ম্যাচ খেলে এই পজিশনে সাব্বির ২৬.৭১ গড়ে ৩ ফিফটিতে করেছেন ২৭৪ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তাই সবার ধারণা ছিল এই পজিশনে খেলানো হবে সাব্বিরকেই। কিন্তু হঠাৎ করেই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন। ৬৫ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ৭ ম্যাচেই যার তিনে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। সেখানে তিনি করেছিলেন মাত্র ৮০ রান। ফলাফলটাও হলো তেমনই। প্রথম ম্যাচে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯ আর পরের ম্যাচে একই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৩ করে আউট হলেন। অথচ গোটা ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়া আর কোনো ম্যাচেই খেলানো হয়নি তাকে। নিজের প্রসঙ্গে ইমরুল বলেছেন হঠাৎ করেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো জায়গাতে খেলা ছিল কঠিন।
এই বিষয়ে নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি ইমরুল ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমাদের ব্যাকআপ ক্রিকেটার। আপনি দেখবেন ব্যাকআপ ক্রিকেটারদের কিন্তু হঠাৎ করেই খেলতে হয়। সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। সেটি ইমরুল পারেননি। কিন্তু আবার পরিস্থিতিও দেখতে হবে। ৩ নম্বর পজিশনে যখন তাকে পাঠানো হলো তখন দলের পরিবেশটা কী ছিল! তার উপর দলের অবস্থা কতটা ছিল। আমি মনে করি যখন কাউকে তিনে পাঠানো হবে তার উপর দল যেন ভরসা করে। তাকে যেন এমন বুঝতে না দেয় যে তুমি ২ ম্যাচে ফ্লপ হলেই বাদ। তিনে সাব্বির খেলছিল তাকে মনে হয় শেখানো উচিত ছিল।’
চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ ছিলেন সৌম্য সরকার। সাব্বির যে কয়টা ম্যাচ খেলেছেন তিনিও ব্যর্থ। দলের তরুণ দু’জন ক্রিকেটারের ব্যর্থতা নিয়ে নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘সৌম্যকে দেখে মনে হয়েছে ওর আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা এখন অনেক কমে গেছে। এই জায়গাতেই ওকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আর সাব্বিরকে স্থান পরিবর্তন হওয়াতে কিছু নড়বড়ে বলে মনে হয়েছে। টেকনিকেও কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে আশা করি তারা একটু সময় নিয়ে নিজেদের ঠিক করবে। ওয়ানডেতে তিনে সাব্বিরকে আরো একটু দেখা যেতে পারে।’
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। কেমন হতে পারে আমাদের একাদশ। কেমন হতে পারে আক্রমণের কৌশল? এ নিয়ে এরই মধ্যে ক্রিকেটভক্ত থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজম্যান্ট ও ক্রিকেটারদের মধ্যেও চলছে নানা রকম চিন্তা। এই বিষয়ে নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘দলে ১৫ জন ক্রিকেটার থাকে তাদের থেকে ১১ জনকে নিয়ে একাদশ বাছাই করতে হয়। যেটা করা খুব সহজ নয়। ব্যাকআপ ক্রিকেটার যাদের রাখা হবে তাদেরও সেই ভাবে চিন্তা করে রাখতে হয়। আমি টেস্টে আসলে সৌম্য ও সাব্বিরকে নিয়ে ভাবছি না। যদিও শেষ টেস্ট গুলোতে সৌম্য খেলেছে ইমরুলের ইনজুরির কারণে। আর সাব্বিরকে যদি খেলাতে হয় উপরের দিকে হলে ভালো, নিচে নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা জিতেছিলাম স্পিন আক্রমণে। আমাদের দলের সেই শক্তিটাই থাকতে হবে। সাকিবের সঙ্গে মিরাজ, তাইজুলদের নিয়ে স্পিন শক্তি বাড়াতে হবে। তবে ব্যাটিংটাও ভালো হতে হবে। নয়তো অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণতো আছেই স্পিন আক্রমণও খারাপ নয়। যদিও ওদের চেয়ে আমরাই এগিয়ে থাকবো। তারপরও ভালো চাইলে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।