আবুল কাশেমের বাড়ি ভোলায়। পাঁচ বছর ধরে রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকবার। বেশির ভাগ সময়ই স্ত্রী-সন্তানের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে নিজে থেকেছেন রাস্তায়। অভাব তাঁকে ঈদের দিনও ছুটি নিতে দেয়নি।
কিছু মানুষ এভাবেই রাস্তায় ঈদ কাটিয়ে দেন। জীবিকার তাগিদেই রাস্তায় থাকতে হয় তাঁদের। আয়োজন করে নয়, কাজের ফাঁকেই পড়া হয় ঈদের নামাজ।
অবশ্য ঈদের দিন কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায় থাকেন আবুল কাশেম। তিন দিন আগে ঈদের খরচের টাকা পাঠিয়েছেন বাড়িতে। দুই ছেলের জন্য শার্ট-প্যান্ট কিনেছেন স্ত্রী। আবুল কাশেম ঢাকায় যাত্রাবাড়ীতে থাকেন। তিনি বললেন, ঈদের দিন বিকেলে অনেকে ঘুরতে বের হন। তাই ওই সময়টাতেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাহিদা থাকে বেশি। অনেকে ঈদের দিন বলে নির্ধারিত ভাড়ার বাইরেও কিছু বকশিশ দেন।
ঈদের দিন মো. নাছির উদ্দিনের এবারের কর্মস্থল জাতীয় ঈদগাহের সামনে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক কনস্টেবল তিনি। কতবার স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে ঈদের দিনটি কাটিয়েছেন—এ প্রশ্ন করার পর হিসাব করতে বসে গেলেন নাছির। বেশিক্ষণ লাগল না। জানিয়ে দিলেন, ২৫ বছরের কর্মজীবনে মাত্র চারবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়েছেন তিনি।
এর আগেও জাতীয় ঈদগাহের সামনে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন নাছির। ঈদের প্রথম জামাত চলার সময় রাস্তায় ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বেরিয়ে গেলে সুযোগ মিলেছিল নামাজ পড়ার। গতবার যেমন কাকরাইলের একটি মসজিদে কাজের ফাঁকে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
নাছিরের বাড়ি বরিশাল। ঢাকায় থাকেন উত্তরায়। বাড়িতে মা ও ছোট ভাইদের জন্য চার হাজার টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। ছেলে ও স্ত্রীকে কিনে দিয়েছেন ঈদের পোশাক। তবে নিজের জন্য এখনো কিছু কেনা হয়নি।
রমজান মাসে বিকিকিনি ভালো হয়নি আজিজুল হকের। আইসক্রিম বিক্রি করেন তিনি। ঈদের দিন একটু বেশি বিক্রির আশায় আছেন। নামাজ পড়েই আইসক্রিমের গাড়ি নিয়ে বের হবেন আজিজুল। প্রথমেই যাবেন শাহবাগের শিশুপার্কে। এরপর জাতীয় জাদুঘরের সামনে আসবেন। ঈদের দিনটি গাড়ি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকার ইচ্ছা তাঁর।
দিনাজপুরের মোজাম্মেল হক ঈদের দিন সকালে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামবেন। এবারই প্রথম ঈদ কাটাচ্ছেন ঢাকায়। রামপুরায় একটি স্ট্যান্ড থেকে রিকশা নেন তিনি। মোজাম্মেল বলেন, ‘ঈদের দিন রাস্তাঘাট খালি থাকার কথা। এহনই তো অনেক খালি হইয়ে গ্যাছে।’ কোন এলাকায় থাকবেন প্রশ্ন করতে বললেন, ‘যেদিকে খ্যাপ পামু, সেই দিকেই যামু। দেখি ইনকাম বেশি অয় কি না।’