তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পদত্যাগ দাবি করেছেন চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা। সেসঙ্গে তারা ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। এই জোটের যে দু’জন সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন তাদেরকেও অব্যাহতি নেয়ার পরামর্শ দেন কেউ কেউ।
শুক্রবার সন্ধায় এফডিসিতে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এ বিষয়গুলো উত্থাপন করেন তারা। যৌথ প্রযোজনার ছবির নামে যৌথ প্রতারণা হচ্ছে বলে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা গত বেশ কয়েকদিন ধরেই তুমুল আন্দোলন করছেন। যাতে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আলোচিত-সমালোচিত যৌথ প্রযোজনার দুই ছবি ‘নবাব’ ও ‘বস-টু’-কে। ছবি দুটিকে যেন সেন্সর ছাড়পত্র না দেয়া হয় এ নিয়ে কয়েকদিন আগে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে লিখিত পত্রও দেন চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা। কিন্তু ছবি দুটি আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়ে যায়। আর এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই ঐক্যজোটের নেতারা শুক্রবার বিকেলে এফডিসিস্থ পরিচালক সমিতির কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা ফারুক, আলমগীর, রিয়াজ, মিশা সওদাগর, ডিপজল, জায়েদ খান, অভিনেত্রী রোজিনা, অঞ্জনা, পপি, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, মোহাম্মদ হোসেন জেমী, বদিউল আলম খোকন, শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুসহ আরো অনেকে। বৈঠকে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা সম্মিলিত কণ্ঠে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিসহ একইসঙ্গে শাকিব খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে যৌথ প্রযোজনার নামে দেশের প্রচলিত আইন যারা ভেঙেছে তাদের সঙ্গে জড়িত সব শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীকেও নিষিদ্ধ করা হয়। নায়ক আলমগীর বলেন, শাকিব খানকে আর ক্ষমা নয়। এর আগে শাকিবের ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের ফারুক ভাইকে নিয়ে যে মন্তব্য সে করেছে তা ক্ষমা করা হবে না। তাকে বয়কট নয়, তার শাস্তি চাই। এই অভিনেতা আরো বলেন, দিলীপ কুমার ৪০ বছর সিনেমা করেন না। তাই বলে অমিতাভ কী তাকে খাটো করে কথা বলেন। ফারুক ভাই ২৫ বছর জীবন যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য। তার মতো একটা ছবি শাকিব করুক আগে। ওর কীসের অভাব? আল্লাহ শাকিবকে সব দিয়েছেন। টাকা, নাম-যশ। অভিনেতা ফারুক বলেন, আমরা চলচ্চিত্রের ধ্বংস বসে বসে দেখবো না। প্রয়োজনে রাস্তায় না খেয়ে থাকবো বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের জন্য। প্রযোজক-অভিনেতা ডিপজল বলেন, আমাদের জীবন থাকতে বিদেশি ছবি চালাতে দেবো না, দরকার হলে আমার ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ১০০ মেশিন বসাবো সিনেমা হলগুলোতে। তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, যেভাবে চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে সেটা ঠেকাতে করণীয় আজই ঠিক করতে হবে। রিয়াজ বলেন, তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা আবেগ থেকে যাই বলি না কেন, আমাদের চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হলে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। আমি চাই সেন্সরবোর্ড থেকে গুলজার ভাই ও দিলু ভাই অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। তারা সেটা করবেন আশা করি। তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে লিখিত বক্তব্যে আন্দোলনের আহ্বায়ক মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, আপনি আমাদের বাঁচান। এই চলচ্চিত্রের অভিভাবক আপনি। আমাদের কথায় নয়, সবকিছু যাচাই করে আপনিই আপনার তথ্যমন্ত্রীর অনেক ভুল পাবেন। সেই মতো ব্যবস্থা নিন। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, তথ্যমন্ত্রীর অধীনে আর কোনো অনুষ্ঠান, সম্মেলনে যাবে না চলচ্চিত্র পরিবার। আর সেন্সরবোর্ড ও প্রিভিউ কমিটি থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন গুলজার। তিনি জানান, ঈদের পর অফিসিয়ালি তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিবেন। চলচ্চিত্রের স্বার্থে তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন এবং থাকবেন। প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন ধরেই ‘বস-টু’ ও ‘নবাব’ ছবি দুটির বিরুদ্ধে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সঠিকভাবে মানা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে আসছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা। আর এই ঐক্যজোটে রয়েছে পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন।