বৃহস্পতিবার অফিস শেষে সোজা শাহাবুদ্দিন চলে আসেন সদরঘাটে। হন্তদন্ত হয়ে উঠে পড়েন ভোলাগামী একটি লঞ্চে। টিকিট কেটে লঞ্চের এক তলায় নিজের আসনে দাঁড়িয়েই জামাকাপড় খুলে পরে ফেলেন লুঙ্গি আর গেঞ্জি।
কিছুক্ষণের মধ্যে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ তুলে তাঁর লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে রওনা হয়।
কেবল শাহাবুদ্দিন নন, তাঁর মতো অনেক যাত্রীর পরনে দেখা যায় লুঙ্গি। ভোলাগামী লঞ্চের যাত্রী আবুল কালাম বলছিলেন, ‘সদরঘাট থেকে ভোলা যেতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। লঞ্চে ওঠার পরপর গরম লাগছিল। তাই ব্যাগ থেকে লুঙ্গি বের করে পরে ফেলি। এখন ভালো লাগছে।’
বালিশ-কাঁথাও দেখা গেল। যাত্রীরা বালিশ মাথায় দিয়ে কাঁথার ওপর শুয়ে আছেন। তরুণেরা শুয়ে মুঠোফোনে গান শুনছেন। আকবর আহম্মেদ চৌধুরী বললেন, ‘লঞ্চের যাত্রা অনেক আনন্দের। ঘুমোতে ঘুমোতে বাড়ি যাই।’ যাত্রীরা জানালেন, রাত নয়টার পর অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে পড়েন। ভোলার লঞ্চগুলো বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল কম। অনেকেই বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছেন। ইফতারের পরপরই তাঁরা খাবার খেতে থাকেন।
আবদুল জব্বারের বাড়ি বরিশাল। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাত আটটার দিকে চলে আসেন সদরঘাটে। ওঠেন লঞ্চে। ভোলার শাহাবুদ্দিনের মতো তিনিও লুঙ্গি পরে নিজের আসনে বসে পড়েন। সময় যত গড়াতে থাকে, ততই লঞ্চের কর্মচারীদের হাঁকডাক বেড়ে যেতে থাকে। সমস্বরে বলছিল, বরিশাল, বরিশাল।
রাত সাড়ে আটটার দিকে বরিশালগামী একটি লঞ্চে কোম্পানির কর্মচারীরা বিনা মূল্যে চানাচুরের প্যাকেট যাত্রীদের মধ্যে সরবরাহ করছিলেন। তখন এক লঞ্চযাত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘ঈদ উপলক্ষে চানাচুর ফ্রি। বাহ কী চমৎকার।’
যাত্রীদের অনেকে তাস খেলছেন। বরিশালগামী লঞ্চের যাত্রী ৬০ বছর বয়সী ভোলার আহাদ আলী বলছিলেন, ঈদে লঞ্চে যাত্রা অন্য রকম। রাস্তায় যাত্রীদের দেখা যায় সাহেব, আর লঞ্চে ঘরের মানুষ। চেনা বড় দায়। তাঁর কথা, লঞ্চ মনে হয় বাসা, টেনে নিয়ে যায় চিরচেনা সেই গ্রামে, যে গ্রাম সবাইকে টানে।