একসময় তাঁকে তাঁর গ্রামে খেলায় নিত না কেউ। ভাইদের কাছে পিটুনিও জুটেছে। না, ক্রিকেট খেলার অপরাধে নয়; ক্রিকেট খুব ভালো খেলার ‘অপরাধে’। ফখর জামান বাকিদের চেয়ে এত বেশি ভালো খেলতেন, তাঁকে এক দলে নেওয়া মানে অন্য দলের সঙ্গে অন্যায় করা! পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল মারদানের গ্রাম থেকে উঠে আসা সেই তরুণ এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকাদের একজন। অথচ কয়েক দিন আগেও তাঁকে খোদ পাকিস্তানেরই কেউ চিনত না।
পাকিস্তান এখন নিশ্চয়ই শোকর করছে প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে নাকানিচুবানি খেয়ে হেরে যাওয়ায়। ওই ম্যাচের পর পরীক্ষিত ওপেনার আহমেদ শেহজাদকে বসিয়ে অভিষেক করিয়ে দেওয়া হয় ফখর জামানকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১, এরপর শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি ফিফটি দিয়ে সেই সুযোগটা মুঠোয় পুরে নেন ফখর। আসল ইনিংসটা আসে ফাইনালে। ভারতের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন, যেটা পাকিস্তানকে ৩৩৮ রানের পুঁজি এনে দেয়। সেই চাপকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের বোলাররা গুঁড়িয়ে দেন ভারতকে। বিশাল জয়, ট্রফি, ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার…আর সবকিছুই ঘটে গেল এই কদিনের মধ্যে। এ যেন স্বপ্নের ঘোর!
২৭ বছর বয়সী এই তরুণের মধ্যে গ্রামের সরল একটা প্রতিচ্ছবি আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাকচিক্য এখনো পেয়ে বসেননি। খেলার ধরনও অনেকটা তেমন। কোনো ভয়-ডর নেই। নিজের খেয়ালখুশি মতো খেলা। প্রতিপক্ষ কে, ম্যাচটা ফাইনাল কি না, খারাপ খেললে বাদ পড়ে যাবেন কি না…কোনো কিছুই যেন স্পর্শ করে না তাঁকে।
এমনকি ফাইনালের পর রাতারাতি পাকিস্তানিদের কাছে নায়ক বনে গেলেও এখনো যেন বাইরের সবকিছু স্পর্শ করছে না ফখরকে, ‘তখন তো খুব একটা বুঝিনি। তারপর এখানে ফিরে এলাম, মানুষ আমাকে দেখার জন্য ভিড় করতে শুরু করল…তাদের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই বীরের মতো কিছু একটা করেছি।’
ফখরের মধ্যে এখনো গ্রামের সেই আলাভোলা তরুণটা আছে বলেই অকপটে স্বীকার করলেন, জাতীয় দলে খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি, ‘পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়া ছিল আমার জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া। সেখানে আমার কোচ নাজিম খান আমার খেলা দেখে বলেছিলেন, তুমি শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে পারবে।’
এরপরই ক্রিকেটটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করেন ফখর। ক্লাব ক্রিকেট থেকে পিএসএল। সেখানেই নজর কাড়েন নির্বাচকদের। বিশেষ করে তাঁর অপ্রথাগত ব্যাটিংয়ের ধরনে। গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সুযোগ পেয়ে যান। দুই ম্যাচে ২৫ রান করে হয়তো ছিটকেই যেতেন। কিন্তু ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টে টানা কয়েকটি ভালো ইনিংস তাঁকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডে রাখে। আর ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচের পর শেহজাদকে বাদ দেওয়া ফখরকে এনে দেয় নতুন মঞ্চ।
এখন এই ২৭ বছর বয়সী কত দূর যান, সেটাই দেখার। সূত্র: এএফপি