যানজট গাজীপুরে, দুশ্চিন্তা আবদুল্লাহপুরে

Slider জাতীয়

6b65566e95af6e8789d82b13af556231-594984c4a9d5b

ঢাকা:  ঢাকা রুটে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টায় বাস চালিয়ে একবার আসা-যাওয়া করতেন শাহী মণি পরিবহনের চালক মোজাম্মেল হক। কিন্তু সাত দিন ধরে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা থেকে শেরপুর পৌঁছাতেই তাঁর সময় লাগছে ১০ ঘণ্টার বেশি।
মোজাম্মেল হক বলেন, উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পার হতেই লাগে চার ঘণ্টার বেশি। টঙ্গীর পর সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। অনেক জায়গা ভাঙা। কোথাও কোথাও রাস্তা উঁচু-নিচু। বাস চালানো যায় না। সময় বেশি লাগছে এ জন্য।

গত সপ্তাহের ভারী বৃষ্টির পর আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক আরও বেহাল হওয়ার কথা উল্লেখ করে মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ‘কয়েক দিন আগে দেখছিলাম রাস্তা মেরামত করছিল। কিন্তু কামের কাম কিছুই হয় নাই। বৃষ্টির পর এখন অবস্থা আগের চাইতে খারাপ। তাই এই রাস্তায় জ্যাম (যানজট) থাকে।’

গাজীপুরের এই যানজট নিয়ে চিন্তিত পুলিশের উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারাও। তাঁদের মতে, গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট এবারের ঈদে ঘরমুখী মানুষদের বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে। কারণ, এই যানজটের পরিধি দীর্ঘ হয়ে চলে আসে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত। এতে যাত্রীবাহী বাসগুলোর ঢাকার সীমানা পার হতেই সময় চলে যায়। এসব বাস যাত্রী নামিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসতেও দেরি হয়।

ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়। এর বেশির ভাগ বাস আবদুল্লাহপুর হয়ে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যায়। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন রুটের দেড় হাজার বাস আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত চলে। এর সঙ্গে অসংখ্য ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এই এলাকা পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে থাকে। এ কারণে বছরের অন্যান্য সময় আবদুল্লাহপুর মোড়ে প্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

১২ জুন মহাখালী বাস টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় ঢাকা জেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা জানান, ঈদের আগে প্রতিদিন মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।

আশুলিয়া বাইপাস সড়কের যানবাহনগুলোও গাজীপুরের এই জটে থমকে যায় বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। আবদুল্লাহপুর ট্রাফিক পরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সীমানা শেষ হয়েছে ধউড় সেতু পূর্ব প্রান্তে। এই সেতুর ওপর প্রায়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে সেখানে যানজটের সৃষ্টি হয়।

তবে বড় সমস্যা হয় ধউড় সেতু থেকে কামারপাড়া সড়ক পর্যন্ত। এখানে সড়ক বিভাজন না থাকায় ওভারটেক হয়। এ জন্য যানজট চলে আসে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত। এ কথা জানিয়ে ট্রাফিক পরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, কামারপাড়া থেকে ট্রাক-বাসসহ বেশ কিছু যানবাহন গাজীপুর স্টেশন রোডের দিকে এবং কিছু আসে আবদুল্লাহপুরের দিকে। অন্যদিকে আবদুল্লাহপুর হয়ে আশুলিয়া বাইপাইলের দিকে অনেক যানবাহন চলে যায়। গাজীপুর স্টেশন সড়কে যদি যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে তাহলে যানজট সহজে কমবে না।

মো. মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, টঙ্গী ব্রিজের দুই লেন দিয়ে গাড়ি বের হতে পারে। ব্রিজের আগের সড়ক চার লেনের। চারটি লেনের গাড়ি এসে দুটি লেনের ভেতর যেতে হয়। এ কারণে গাড়ির গতি মন্থর হয়েও যানজট দেখা দেয়।

বৃষ্টি হলে ঢাকার এই প্রবেশমুখে যানজট বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) অতিরিক্ত উপকমিশনার রহিমা আক্তার লাকী  বলেন, ১৯ জুনের ভারী বৃষ্টিতে উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়ক, বিমানবন্দর চত্বর ও খিলক্ষেতে হাঁটুপানি জমে যায়। এর সঙ্গে আবদুল্লাহপুরের পর সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *