দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে কখনো বাজি ধরতে নেই। তেমনি পাকিস্তানকেও কখনো হিসাবের বাইরে রাখতে নেই। না হলে, ১৮ জুন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে একটি দলের নাম পাকিস্তান হবে, এমন দাবি তো দলটিও করার সাহস পায়নি! কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে পাকিস্তানই চলে গেল ফাইনালে। কার্ডিফে আজ ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল।
টুর্নামেন্টে পাকিস্তান এসেছে আন্ডারডগের তকমা নিয়ে। এই টুর্নামেন্টের আট দলের মধ্যে সবার নিচে ছিল পাকিস্তান। কেউ গোনায় ধরেনি এই পাকিস্তানকে। গ্রুপ পর্বেই তাঁদের এবারের যাত্রা শেষ ধরে নেওয়া হচ্ছিল। ভারতের কাছে বিশাল ব্যবধানের পর এ ব্যাপারে সবাই আরও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার কাছে তো হারতে হারতে ম্যাচ জিতল। কিন্তু আজ সেমিফাইনালে সবাইকে সব সমালোচনা গিলে নিতে বাধ্য করেছে পাকিস্তান। এ টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিয়েছে তারা।
সেটাও তারা করেছে পেশাদারি মনোভাবে। ২১২ রানের লক্ষ্যে একবারের জন্যও মনে হয়নি, পাকিস্তান আজ হারতে পারে। দুই ওপেনার মিলেই ম্যাচের উত্তেজনায় জল ঢেলে দিয়েছেন। দুই বছর পর ওয়ানডেতে ওপেনিং জুটিতে সেঞ্চুরি পেল পাকিস্তান। পাকিস্তান ফখর জামান ও আজহার আলীর উদ্বোধনী জুটিতেই এসেছে ১১৮ রান।
৫৮ বলে ৫৭ রান করে জামান আউট হলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৭৬ রান করে আজহার আউট হওয়ার পরও না। দ্বিতীয় উইকেট যখন পড়ল, জয় যে তখন মাত্র ৩৯ রান দূরে পাকিস্তান। মোহাম্মদ হাফিজ (৩১*) ও বাবর আজম (৩৮*) বাকি কাজটা সারলেন।
২০১৫ সালের পর ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অনেক বদলে গেছে। অনেক আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে তারা। তাঁদের নতুন ঘরানার ক্রিকেট চমকে দিয়েছে সবাইকে। কিন্তু ৭৭ বল বাকি রেখে পাকিস্তানের এভাবে ম্যাচ শেষ করে দেওয়া আবারও জানিয়ে দিল, ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বড় দল হয়ে উঠতে এখনো অনেক বাকি।
ইংলিশ বোলারদের লড়াই করার সুযোগই তো দিল না ব্যাটসম্যানরা। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা শুধু নয়; নিজ দলের ব্যাটসম্যানরাও! ২১১ রানে অলআউট হয়েছিল ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই কি সর্বস্ব দিয়ে এসেছে ইংল্যান্ড? না হলে সেমিফাইনালের মতো মঞ্চে এসে এভাবে ফর্ম হারাবে কেন স্বাগতিকেরা! বিস্ময় জাগাচ্ছে পাকিস্তানও। ভারতে বিপক্ষে ওভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ওই দলই খেলছে তো আজ কার্ডিফে? এমন বোলিং, বাউন্ডারিতে এমন দুর্দান্ত সব ক্যাচ, সরাসরি থ্রোতে দুটি রানআউট! এটা পাকিস্তানই তো!
ভারতের কাছে অমন হারের পর তো কোচ মিকি আর্থারের চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়ে গিয়েছিল। সব হিসাব পাল্টে দিয়ে ফাইনালে তারাই।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি ব্যতিক্রম, এরপর থেকেই এবার তাদের বারবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন বোলাররা। আজও তা-ই হলো। ইনিংসের মাঝপথে মাত্র ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পথ হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ২ উইকেটে ১২৮ থেকে মুহূর্তেই স্কোর হয়েছে ১৬২/৬! সপ্তম উইকেটের পতন হয়েছে ১৮১ রানে। আর দুই শ পেরোনোর পর ফিরে গেছেন একমাত্র ভরসা স্টোকস।
মারকুটে এই অলরাউন্ডার নিজেও খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। কোনো চার-ছয় নেই, ৬৪ বলে ৩৪ রান করেছেন স্টোকস। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অমন এক সেঞ্চুরির পর এমন ইনিংস! বোঝাই যায়, কেমন দুর্দান্ত বোলিং করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সব বোলারেরই ইকোনমি রেট পাঁচের নিচে!
আজ শুরু থেকেই দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৩০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ১৩৬ রান। ৭ উইকেট হাতে নিয়েও শেষ ২০ ওভারে মাত্র ৭৫ রান করেছে ইংল্যান্ড!
৩৫ রানে ৩ উইকেট হাসান আলীর। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন জুনাইদ খান ও রুম্মান রইস।