সিলেট প্রতিনিধি:: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে নির্মিত শাহজালাল সার কারখানার জন্য ৪ কোটি টাকা দামের চারটি অর্থাৎ ১৬ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিলো ৪ টি জিপ গাড়ি। এবং ৬৩ লাখ টাকা করে কেনা হয়েছিলো ৮টি প্রাইভেট কার।
১৬ কোটি টাকায় ৪ টি জিপ গাড়ি কেনার ব্যয় দেখানো হলেও এরমধ্যে ৩টি জিপেরই হদিস নেই। অর্থাৎ শুভঙ্করের ফাকি ১২ কোটি টাকা। মাত্র একটি জিপ রয়েছে কারখানার মধ্যে, যেটি প্রকল্প পরিচালক ব্যবহার করেন।
আর কারখানার জন্য ক্রয়কৃত ৮টি প্রাইভেট কার’র মাধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ৬টি প্রাইভেট কার। বাকী গাড়িগুলো কোথায় তা জানেন না সংশ্লিস্টরা। অর্থাৎ এখানেও শুভঙ্করের ফাকি ১কোটি ২৬লক্ষ টাকা।
অথচ পরিবহনের অভাবে প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাদেরও ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয় প্রাইভেট কার।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানা গেছে, কেনার পর ৩ টি জিপ ও ২টি প্রাইভেট কার প্রকল্প এলাকায়ই আনা হয়নি। ঢাকা থেকেই এগুলো উদাও হয়ে গেছে।
প্রকল্পের কাজ শেষে কোম্পানী হিসেবে সারকারখানার কার্যক্রম শুরুর পর গাড়িগুলো কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। নির্মান কাজ শেষে গত বছরের ১ মার্চ কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে শাহজালাল সার কারখানা। তবে এই প্রাতষ্ঠানের নামে কেনা গাড়ির অনেকগুলোরই বুঝে পায় নি কোম্পানি কর্তপক্ষ।
জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল এই সারকারখানা পরিদর্শনে এসে ৪টি জিপ কোথায় আছে এ ব্যাপারে জানতে চান। এসময় পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা জানান, কাগজে ৪ জিপ থাকলেও বাস্তবে তারা একটি পেয়েছেন।
শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির পরিবহন শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প চলাকালীন সময়ে সারকারখানার জন্য দুটি হার্ড জিপ, (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৭৫২৮ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৭৫২৯) দুটি জীপ প্রাডো, (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯৬৮৫ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯৬৮৬) ৮টি করোলা প্রাইভেট কার, দুটি মাইক্রোবাস, একটি পিকআপ, দুইটি মিনিবাস, একটি টাটা পিকআপ, দুইটি কার্গো ট্রাক ও দুইটি ট্যাংকার কেনা হয়।
চারটি জিপের মধ্যে বর্তমানে একটি প্রাডো জিপ রয়েছে কারখানাটিতে। যেটি প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ব্যবহার করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য আরেকটি জিপ কেনা হলেও সেটি না থাকায় তিনি ব্যবহার করেন একটি প্রাইভেট কার। আর ৮টি প্রাইভেট কার কেনা হলেও বর্তমানে কারখানায় রয়েছে ৬টি প্রাইভেট কার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ৭ জন মহাব্যবস্থাপক সেগুলো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন।
বুঝে না পাওয়া গাড়িগুলোর কোথায় আছে তা জানেন না সারকারখানার কর্মকর্তারা। তবে সারকারখানার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একটি ছাড়া বাকী তিনটি জিপই ঢাকায় রয়েছে।
গাড়িগুলোর ব্যপারে জানতে চাইলে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে তাই সবকিছু এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
কারখানা গত বছরই কোম্পানিতে পরিণত হলেও প্রকল্পের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গেস্ট হাউসসহ আরো কিছু স্থাপনা নির্মানের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
মিডিয়ার সাথে কথা বলার তাঁর এখতিয়ার নেই জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আপনার কোনো তথ্য জানার থাকলে বিসিআইসি জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
সারকারখানার মূল সীমানার বাইরে গিয়েই দেখা যায়, প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের কাজ চলছে।
তবে সারকারখানা এলাকায় গিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানানো হয়।
প্রকল্পের কাজে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, একমাত্র প্রকল্প পরিচালক ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো কর্মকর্তাই জিপ বা প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন না। বাকী গাড়িগুলোর ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে শাহজালাল সারকারখানার প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
২০১২ সালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৫৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল সারকারখানার নির্মান কাজ শুরু হয়।