সিএনএনের প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন তেরেসা মে

Slider সারাবিশ্ব

69620_mm

 

 

 

 

ঢাকা; সামনেই ব্রেক্সিট আলোচনার কঠিন সময়। অথচ এই মুহূর্তে পার্লামেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র। নিজ দলের এমপিদের ক্ষোভ যদি তিনি প্রশমিত করতে ব্যর্থ হন তাহলে তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অনলাইন সিএনএনে লন্ডন থেকে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক জেন মেরিক। দীর্ঘ প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, কোনোমতে ডাউনিং স্ট্রিটের রশি টেনে ধরে রেখেছেন তিনি।

আজ সোমবার তিনি এমপিদের কাছে সমর্থন দাবি করবেন। কিন্তু আগাম ভোটকে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে দেখছেন অনেক এমপি। এ জন্য তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ‘অপ্রয়োজনীয়’ এই ভোটে বেশ কিছু ভাল এমপি, কয়েকজন মন্ত্রী তাদের আসন হারিয়েছেন। প্রায় এক সপ্তাহের মতো সময় আছে। এরপরই পার্লামেন্টে কুইন্স স্পিস। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ভাষণ দেবেন। তাতে নতুন নতুন আইন উপস্থাপন করবেন রাণী। থাকবে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর বিষয়। কিন্তু সরকারের কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এখন পার্লামেন্টে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তেরেসা মে’র। এক্ষেত্রে তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে ( ডিইউপি) সঙ্গে নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে পারেন। আপাতত তার সামনে এই একটিই পথ খোলা আছে। কিন্তু পার্লামেন্টে সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে বেশ কিছু আর্থিক প্যাকেজ দাবি করছে ডিইউপি। ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে দেশ এখন হালছাড়া অবস্থায়। মোকাবিলা করছে সাংবিধানিক সঙ্কট। আগাম নির্বাচনে তেরেসা মে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। তিনি নিজ দল কনজারভেটিভ, পার্লামেন্ট, তার পলিসি মেনিফেস্টো এমনকি ব্রেক্সিটের ওপর থেকে হারিয়েছেন নিয়ন্ত্রণ।
সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে
আগামী ১৯ শে জুন রানী বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে পার্লামেন্টে হাজির হবেন। এরপর তিনি নতুন সরকারের জন্য আইনগত নতুন এজেন্ডা প্রকাশ করবেন। একই দিনে ইউরোপ থেকে বৃটেনের বেরিয়ে আসা নিয়ে ব্রাসেলসে সমঝোতা সংলাপ শুরু হওয়ার কথা বৃটিশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের মধ্যে। এই দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট বৃটেনের ভবিষ্যত দিক নির্দেশ করবে। এ দুটি ইস্যুর কোনোটিতে এখন ক্ষমতা নেই তেরেসা মের। এটাও পরিষ্কার নয় যে, আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন কিনা। তার নিজ দলের ভিতর থেকেই নেতৃত্বের হুমকি বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে রোববার তার সাবেক সহকর্মী, পরে ঘোর বিরোধী জর্জ অসবোর্ন তাকে ‘একজন মৃত নারী হেঁটে বেড়াচ্ছেন’ বলে আখ্যায়িত করেন। অর্থাৎ তেরেসা মে’কে একজন মৃত নারীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার কোনো শক্তি, ক্ষমতা নেই।
তাহলে আসলে চার্জে কে?
গত সপ্তাহান্তে তেরেসা মে’কে টিভি সাক্ষাতকারে বেশ কম্পিত দেখিয়েছে। তার হাতে থাকা একটি শক্তি ব্যবহার করছেন। তা হলো মন্ত্রীপরিষদ পুনর্গঠন। এর মাধ্যমে তার অবস্থানকে পোক্ত করে মিত্রদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার কর্তৃত্ব অনেকটা কমে যাওয়ায় তিনি বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে বা কাউকে বরখাস্তও করতে পারছেন না। সবচেয়ে সিনিয়র মন্ত্রীরা তাদের পদে বহাল রয়েছেন। তবে তিনি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রু বলে পরিচিত মাইকেল গভকে মন্ত্রীপরিষদে ঠাঁই দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষোভকে প্রশমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তেরেসা মে’র দু’জন চিফ অব স্টাফ ফিওনা হিল এবং নিক টিমোথি ঘৃণাভরা আচরণ করেছেন বলে মনে করেন অনেক এমপি ও মন্ত্রী। তারা দু’জন সপ্তাহান্তে পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যদি পার্লামেন্টে তার পিছনের সারির দলীয় এমপিদের মন জয় করতে না পারেন সোমবার তাহলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন এখনও তেরেসা মে’র অনুগত রয়েছেন। রোববার তিনি একটি নোটিশ দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী অধিক মাত্রায় সমঝোতার দিকে অগ্রসর হবেন।
জোটের মূল্য কি?
নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর তেরেসা মে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ডিইউপি’কে নিয়ে সরকার গঠন করবেন। কিন্তু যতদূর জানা যাচ্ছে তাতে ওই দলটির সঙ্গে এখনও চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হয় নি। তাই এ নিয়ে সরকার ও ডিইউপির মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে মঙ্গলবার। এখন চালকের আসনে রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এই দল ডিইউপি। কারণ, তারা জানে তেরেসা মে’র সরকার গঠনের একমাত্র অবলম্বন এখন তারা। কিন্তু এ নিয়ে উদারপন্থি অনেক কনজারভেটিভ এমপির মধ্যে রয়েছে আশঙ্কা। কারণ, ডিইউপি গর্ভাপ ও সমকামী অধিকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দাবি করতে পারে। যদি তাই করে তাহলে বিপদে পড়ে যেতে পারে সরকার। যদিও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সূত্রগুলো বলছে, আলোচনার টেবিলে নেই এসব ইস্যু। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে যদি তেরেসা মে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেন তাহলে রানীর ভাষণের পর তিনি কনজারভেটিভদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোকে আইনে পরিণত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেই শক্তি বা ক্ষমতা হারিয়েছেন।
এমন সব বিষয়ে এ সপ্তাহে খসড়া করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে তেরেসা মে তার নির্বাচনী মেনিফেস্টো কাটছাট করছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামার স্কুল এবং বয়স্কদের যত্ম বিষয়ক নীতির সংস্কার পরিকল্পনা। এগুলোই নির্বাচনী প্রচারণায় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হয়েছিল।
লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, রাণীর ভাষনের বিষয়ে তার দল নিজস্ব নীতি তৈরি করছে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক্সিট
চূড়ান্তভাবে বলা যায়, ব্রেক্সিট হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কিন্তু তেরেসা মে ব্রেক্সিটের ওপরও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। ব্রাসেলসের সঙ্গে এ নিয়ে সমঝোতামুলক আলোচনা শুরুর জন্য এক সপ্তাহেরও কম সময় আছে। কিন্তু হার্ড ব্রেক্সিট বা ব্রেক্সিট নিয়ে কঠোর দর কষাকষি, বিশেষ করে একক বাজার সুবিধার বিষয়ে বৃটেন যে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছে, তা এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বেÑ এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
আদর্শগত অবস্থানের পরিবর্তে অধিক আশা জাগানিয়া দর্শন সামনে তুলে ধরতে তেরেসা মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রীরা, যেটা হবে অধিক ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী। তবে যেভাবেই দেখা হোক সেটা হবে নমনীয় ব্রেক্সিট সমঝোতার কার্ড। স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুথ ডেভিডসন। সেখানে এ দলটি বিস্ময়করভাবে ১৩ আসনে জিতেছে। সেই ডেভিডসন বলেছেন, ব্রেক্সিট নিয়ে আরো একবার ভাবা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। আজ সোমবার তিনি ও ১৩ এমপি সফরে আসছেন ওয়েস্টমিনস্টারে। তারা তাদের গুরুত্ব তুলে ধরবেন। তাদের সমর্থন অর্থাৎ এ আসনগুলো বাদ দিলে কোনোভাবেই নতুন সরকার গঠনের সুযোগ নেই তেরেসা মের সামনে। নিজ দল, পার্লামেন্ট, নির্বাচনী মেনিফোস্টো ও ব্রেক্সিটের ওপর প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব সরল দোলকের মতো দুলছে। রোববার রাতে তিনি স্কাই নিউজকে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারেন নি। তিনি নিশ্চিত করতে পারেন নি যে, ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন কিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমি বলেছি, যদি আমি পুনঃনির্বাচিত হই তাহলে আমি পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকবো। কিন্তু এখন আমি যেটা করছি তা হলো আমার সামনে আসা তাৎক্ষণিক দায়িত্ব।
কিন্তু প্রশ্ন হলোÑ তা কতক্ষণ চালিয়ে নিতে পারবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *