ঢাকা: ভারতের ফেভারিট তকমাটা খুলে নিলো শ্রীলঙ্কা। হঠাৎ ভূপাতিত উড়তে থাকা ভারত। আট বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় শ্রীলঙ্কা। ৩২১ রানের জবাবে ৩২২ রান, তাও মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে। এ যেন সময়ের বড় অঘটন! আর ভারতের হারে জমে উঠলো বি গ্রুপের সমীকরণ। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ৩২১ রান টপকে জয় কল্পনাতেও ছিল না কারো। ক্রিকেটতো রেকর্ড গড়া আর ভাঙার খেলা। ওভালে এর আগে কোন দল ৩১৭ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি। আর রেকর্ডটিও ছিল ভারতেরই। সেটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ২০০৭এ। আর শ্রীলঙ্কা-ভারত দ্বৈরথেও ভারত ছিল অনেক এগিয়ে। দুই দলের এটি ছিল ১৫০তম মোকাবিলা। ২০১২ থেকে ১৭ দেখায় ১৪ জয় ছিল ভারতের। আর ২০১৪তে দেশের মাটিতে ভারত সিংহলীদের হারায় ৫-০তে। বোলাররা কোন সুবিধা করতে না পারলেও ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি তাদের পাশেই থাকলেন। বরং তিনি পুরো কৃতিত্বটা দিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। আর শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক বললেন, কেউ ভাবেনি আমরা এ ম্যাচে জিতবো। আর এটাই আমাদের চাপমুক্ত রেখে খেলতে সাহায্য করেছে। পুরো ইনিংসে একবারও ভারত একবারও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি। কাগজে-কলমে শক্তি যে মাঠে সবসময় একরকম ফল দেয় না এ তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে। ব্যাটে-বলে দুই বিভাগেই শ্রীলঙ্কানদের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে ছিল ভারত। এ হারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের টানা জয়ে ছেদ ঘটলো।
এ জয়ের ফলে বি গ্রুপে চার দলের পয়েন্ট সমান ২ করে হলো। এখন শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান আর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের জয়ী দল দুটিই সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এ আসরে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় দল হিসেবে তিন শতাধিক রান টপকে জয় পেলো। এর আগে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের ৩০৫ রান টপকে যায় সহজেই। শ্রীলঙ্কা প্রথম খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার ২৯৯ রানের জবাবে ২০৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল।
কেনিংটন ওভালে টসে জিতে শ্রীলঙ্কা ফিল্ডিং বেছে নেয়র পর ভারত যখন ৩২১ রান তোলে তখন কারও ভাবনায় ছিল না শ্রীলঙ্কা জিততে পারে। ভারতের শিখর ধাওয়ান-রোহিত শর্মারা বড় রানের ভিত গড়ে দেন। ধাওয়ান ১২৫ আর রোহিত ৬৮ রান করে আউট হন। বিফলে গেল ধাওয়ানের দশম শতরানটি।
দলীয় মাত্র ১১ রানে প্রথম উইকেট খোয়ায় শ্রীলঙ্কা। তখন শঙ্কাটা আরো গাঢ় হয় কেবল। কিন্তু দানুস্কা গুনাতিলাকা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ম্যাচে দারুণভাবে ফেরে লঙ্কানরা। দ্বিতীয় উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন এ দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যান। তবে জমে থাকা শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যানকে রানআউট করে হালে পানি পাচ্ছিলেন ভারতের সমর্থকরা। যেখানে এক রান করে নিলেই জয় সম্ভব সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে আউট হন শ্রীলঙ্কার কুসাল মেন্ডিস ও দানুস্কা গুনাতিলাকা। ১৭০ রানের মাথায় দানুস্কা আউট হন ৭২ বলে ৮৬ রান করে। দুই রান নিতে গিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় রানটা আর পূর্ণ করতে পারেন নি। লাফিয়ে পড়েও ব্যাট স্টাম্প ভাঙার আগে দাগে ফেলতে পারেন নি। উমেষ যাদবের নিক্ষেপ করা বল দ্রুত হাতে নিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন ধোনি। ৭ চার আর ২ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। ২০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটি তার মাত্রই চতুর্থ ফিফটি এবং সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ৬৫। তার বিদায়ে ভাঙে ১৫৯ রানের জুটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এটি শ্রীলঙ্কার তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি।
২০১৫ বিশ্বকাপের পরে দ্বিতীয় উইকেটেই শ্রীলঙ্কার এটি অষ্টম শতরানের জুটি। এ সময়ে অন্য সব জুটিতে শতরান ওঠে মাত্র সাতবার। এরপরে দলীয় ১৯৬ রানের মাথায় আউট হন কুসাল মেন্ডিস। তিনি ৮৯ রান করেছিলেন ৯৩ বলে। ২২ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের এটি ২৬ ম্যাচে দশম ফিফটি, একটি সেঞ্চুরিও রয়েছে। গত জুনে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। এ সময়ে তার চেয়ে বেশি ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলেছেন কেবল ইংল্যান্ডের জো রুট, ১২টি। এ আসরে শ্রীলঙ্কার চার ব্যাটসম্যান রানআউট হলেন। অথচ অন্য সব দল মিলিয়ে রানআউট সংখ্যা মাত্র পাঁচ। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে কুসাল মেন্ডিসের হাতে।
কুসাল পেরেরা আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ মিলে সাময়িক ধাক্কাটা সামলে উঠে দ্রুতই দলকে জয়ের পথে তুলে নেন। এ জুটিই হয়তঃ শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকতে পারতো। কিন্তু ২৭১ রানের মাথায় পেরেরা যখন ফিফটি থেকে মাত্র তিন রান দূরে তখন কুঁচকির টানে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। মূলত এক পায়ে ভর দিয়েই ব্যাট করছিলেন ২৬ বছর বয়সী কুসাল পেরেরা। জুটিটা ছিল ৭৫ রানের। চান্ডিমালকে না পাঠিয়ে আসেলা গুণারতেকে কেন পাঠানো হলো এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগেই জবাব দেন দারুণ এক ছক্কায়। সময়ের অন্যতম সেরা বোলার উমেষ যাদব আর জসপ্রিত বুমরাহকে উড়িয়ে সীমানার বাইরে পাঠান অনায়াসে। ম্যাথিউজ-গুনারতেœ জুটিই ভারতের সব প্রচেষ্টা মাটি করে সাজঘরে ফেরে। চোটের কারণে ৬ মাস মাঠের বাইরে থাকা ম্যাথিউজ অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে। উইনিং শটটা নেয়ার পর পিঠে ব্যাট ছুঁয়ে শার্টে লেখা তার নামটিই দেখালেন দর্শকদের। ২১ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন গুনারতেœ। মাত্র ক্যারিয়ারের ১৬তম ওয়ানডে ছিল এটি।