ঢাকা; ছকে বাঁধা খেলা, নিরুত্তাপ জয়। ওয়ানডের কোন উত্তাপই মিললো না প্রথম খেলায়। ব্যাটসম্যানদের দাপটেই শুরু বিশ্বসেরাদের ক্রিকেটযুদ্ধ। ছয় শতাধিক রানের খেলায় উইকেট পতন মাত্র আটটি। বাংলাদেশের ৩০০ ছাড়ানো ইনিংসটাকেও ইংল্যান্ড জলবৎ তরলং করে ফেললো। ১৬ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখে টপকে গেলো ৩০৫ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এই প্রথম কোন দল ৩০০ রান করে জয়ের নজির রাখলো। প্রস্তুতি ম্যাচেও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩৪১ রান করে হেরেছিল। বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে সংশয়টা সত্যি হলো। তার ওপর একজন ব্যাটসম্যান বেশি খেলাতে গিয়ে জেনুইন স্পিনারের ঘাটতিটা বড় হয়ে দেখা দেয়। বাংলাদেশের পেসাররা খুব খারাপ বল করেছেন তা নয়। কিন্তু সাকিব আল হাসান তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি (৮ ওভারে ৬২)। যদিও তরুণ স্পিনার মোসাদ্দেক তার চেয়ে ভাল বল করেছেন (৭ ওভারে ৩৯)। মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেল ভাল বল করলেও উইকেট আগলে রেখে তাদের মোকাবিলা করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনা আসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রথম ১০ ওভার আর শেষ ১০ ওভারের চিত্রটা। শেষ দিকে বাংলাদেশের রান আরো ২০-৩০ বেশি হতে পারতো।
আলগা বলের অপেক্ষায় ব্যাট করেছেন হেলস, রুট, মরগান। ১৪ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট জুটি এত রান করতে পারেনি। ২০০২এ লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে ২৬৫ রান তুলেছিল তারা। আর এবার তা ছাড়িয়ে গেলো হেলস-রুট আর রুট-মরগান জুটি। তৃতীয় উইকেটে টেস্ট অধিনায়ক রুট আর ওয়ানডে অধিনায়ক মরগান ১৪৩ রান করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। ১৩৩ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পান জো রুটই। আর তার হাতে সেটা তুলে দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান। ওয়ানডেতে নিজের দশম সেঞ্চুরিটি করেন ১১৫ বলে। কিন্তু এরপরের ৩৩ রান করেন ১৪ বলে। ওয়ানডেতে এটিই এখন তার সর্বোচ্চ স্কোর। আগেরটি ছিল ১২৫। মরগান তার ৩৩তম ফিফটি করে অপরাজিত থাকেন ৬১ বলে ৭৫ রান করে। ওপেনার অ্যালেক্স হেলস ৮৬ বলে ৯৫ রান করে সাব্বিরের বলে আউট হন।
কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ড টসেজেতা শেষ চার খেলাতেই জয় পেয়েিেছল। প্রতিপক্ষ দলগুলোও বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল ছিল না। ছিল ভারত. ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কা। প্রতিবারই টসে জিতে আগে বল করেছে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের জয়ে একটু কালিমা হয়ে থাকতে পারে তামিমের ক্যাচ-বিতর্ক। ৩৫.৩ ওভারে মরগানের হাঁকানো বল লং অনে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু আম্পায়াররা মনে করলেন বল মাটি স্পর্শ করেছে তামিমের হাতে ওঠার আগে। তামিমের দাবির প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তটা তৃতীয় আম্পায়ারের দিকে ইশারা করে মরগানকে নটআউট দেন ভারতের আম্পয়ার এস রবি। তৃতীয় আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার অক্সেনফোর্ড কোনমতে রিপ্লে দেখে মরগানকে নটআউট দিয়ে দিলেন। টিভি ভাষ্যকার এমনকি ইংল্যান্ডের নাসের হুসাইনও মনে করছিলেন বলটি ক্যাচ হতে পারে। তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্তটা দ্রুতই দিয়ে দিলেন। তামিম এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তটাও মানতে তার কষ্ট হচ্ছিল। তিনি ফের মাঠের আম্পায়ারের কাছে গিয়ে আপত্তি জানান। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল এ ম্যাচের চার অফিসিয়ালের একজন ভারতীয় আর তিনজন অস্ট্রেলিয়ানকে দায়িত্ব দেন। রিজার্ভ আম্পায়ারও ছিলেন নিউজিল্যান্ডের। এরা সবাই একেতো ইংলিশ বংশোদ্ভুত, তার ওপর অস্ট্র্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডও বাংলাদেশের গ্রুপেরই দল। অন্য গ্রুপের দেশ থেকেও অফিসিয়াল নিয়োগ দেয়া যেতে পারতো।
ইংল্যান্ডের ইনিংসে বাংলাদেশের জন্য যেটুকু উত্তেজনা আর আনন্দ তা ওই তৃতীয় ওভারেই। মাশরাফির দ্বিতীয় ওভারে অফ ফর্র্র্র্র্মে থাকা জেসন রয় মুশফিকের হাতে ধরা পড়লে উল্লাসে পেটে পড়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু আর একবারও বাংলাদেশি দর্শকদের মনে জয়ের আশা জাগতে দেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। খুব মারমুখি খেলেন নি তারা। আবার ধীর গতিতেও নয়। বাংলাদেশের গতিতেই এগিয়ে যান তারা শেষের দিকে। সেঞ্চুরি আর ফিফটির পর রুট আর মরগান তাদের কব্জির জোরটা দেখান। তবে এ খেলা থেকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শিক্ষা নিতে পারেন কীভাবে চাপমুক্ত থেকে লক্ষভেদ করতে হয়।
ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক সময়ের সেরা জুটিটাই কাল বাংলাদেশের বিপক্ষেও সফল। অ্যালেক্স হেলস আর জো রুটের বিশাল জুটিটাই ইংল্যান্ডের ভিত গড়ে দেয়। দ্বিতীয় উইকেটে এরা যোগ করেন ১৫৯ রান। তৃতীয় ওভার থেকে শুরু করে ২৭ ওভার পর্যন্ত দলকে টেনে তারা। সাব্বিরের বলে ৯৫ রান করে হেলস আউট হলে ভাঙে এ জুটি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেটে হেলস-রুট জুটির গড়ই সবচেয়ে ভাল। গতকালের আগে ২০ ইনিংসে তারা ১৫১০ রান করেন ৭৫.৫০ গড়ে। গতকালের ছিল ২১ ইনিংসে এ জুটির ষষ্ঠ শতরানের জুটি।
বাংলাদেশের পরের খেলা ৫ই জুন। এ মাঠেই খেলাটি হবে দিবারাত্রির।
তামিম-মুশফিকের রেকর্ড জুটি
রোমাঞ্চকর ব্যাটিং। তামিম-মুশফিকের অসাধারণ নৈপুণ্য। বিলাতের মাটিতে রেকর্ড জুটিতে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ। গতকাল আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে ব্যাট হাতে একাধিক রেকর্ড গড়েন টাইগাররা। ওভাল মাঠে ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ৩০৫/৬-এ। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার দলীয় ৩০০ রানের কোঠা স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। গতকাল ব্যাট হাতে তৃতীয় উইকেটে ১৬৬ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটি তৃতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তামিম-মুশফিক ভেঙে দিলেন আসরের ১১ বছরের পুরনো রেকর্ডটি। ২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আহমেদাবাদে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা ও কুমার সাঙ্গাকারা। গতকাল বাংলাদেশের ইনিংসে রচিত হয় আরো রেকর্ড। এশিয়ার বাইরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেট জৃুটিতে এটি সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটিও ছিল ইংল্যান্ডেরই বিপক্ষে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১৪১ রানের জুটি গড়েন মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেট জুটির পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও তামিম-মুশফিকের। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ রানের জুটি গড়েন তামিম-মুশফিক।
লন্ডনের ওভাল মাঠে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক এউইন মরগান। আর শুরুতে দৃঢ়তা দেখান দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম। ব্যাট হাতে সতর্ক শুরুতে ইনিংসের শুরুর ৪.২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ রান। ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি আসে ৪.৩তম ওভারে। পরপর দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান বাংলাদেশ ওপেনার সৌম্য সরকার। ওপেনিং জুটিতে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তামিম-সৌম্য। ১২তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে ইংলিশ পেসার বেন স্টোকসের ডেলিভারিতে বদলি ফিল্ডার জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। ৩৪ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আনঅফিশিয়ালি মিশন শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের এ বাঁ-হাতি ওপেনার। আর মূল আসরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেও সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখালেন তামিম।
গতকাল নিজের উইকেট দেয়ার আগে ১২৮ রানে দারুণ ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহীম খেলেন ৭২ বলে ৭৯ রানের ইনিংস।
১৪২ বলের ইনিংসে তামিম হাঁকান এক ডজন চার ও ৩টি ছক্কা। ব্যাট হাতে ১১টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ১২৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। চার নম্বরে ব্যাট হাতে মুশফিক হাঁকান ৮টি বাউন্ডারি। গতকাল ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহটা বড় হতে পারতো আরো। তবে পরপর দুই বলে উইকেট বিসর্জন দেন তামিম-মুশফিক। ৪৪.৩তম ওভারে ইংলিশ পেসার লায়াম প্লাঙ্কেটেরে ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তামিম। পরের বলেই বড় শট হাঁকাতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দেন মুশফিক। ৪৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন মুশফিক। ১৭৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মুশফিকের এটি ২৫তম অর্ধশতক।
১৭০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের সর্বাধিক নবম সেঞ্চুরি কুড়ালেন তামিম ইকবাল।
এর আগে ইংলিশ পেসার লায়াম প্লাঙ্কেটকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ৭১ বলে অর্ধশতক পূরণের পথে তামিম হাঁকান ৭টি বাউন্ডারি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে তামিমের রানের গড় ৬১.৩৩। কিন্তু ইংলিশদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তেমন উজ্জ্বল ছিল না তামিমের পরিসংখ্যান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের রানের গড় ছিল ২৮.৪১। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ১২ ম্যাচে তামিম অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন একবারই। গতকাল অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের বদলে একাদশে সুযোগ নেন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। তবে তিন নম্বরে ব্যাট হাতে বেশি কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো অতীত রেকর্ড থাকলেও গতকাল ২০ বলে ১৯ রানে থামে ইমরুলের ইনিংস। ‘ব্যাড-প্যাচ’ কাটেনি বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানেরও। গতকাল ব্যাট হাতে সাকিব উইকেট খোয়ান ব্যক্তিগত ১০ রানে। তবে শেষের দিকে সাব্বির রহমানের ১৫ বলে ২৪ রানের ইনিংসে ভর করে দলীয় ৩০০ রানের কোঠায় পৌঁছে টাইগাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ২৮৮ রানের। গত বছর ঢাকায় এ রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা।
এটাকে ‘ডেথ গ্রুপ’ আখ্যা দিচ্ছেন সবাই। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ছাড়াও রয়েছে ২০১৫ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আসরের ‘বি’ গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী ৫ই জুন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কার্ডিফে দিবারাত্রির ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
আলগা বলের অপেক্ষায় ব্যাট করেছেন হেলস, রুট, মরগান। ১৪ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট জুটি এত রান করতে পারেনি। ২০০২এ লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে ২৬৫ রান তুলেছিল তারা। আর এবার তা ছাড়িয়ে গেলো হেলস-রুট আর রুট-মরগান জুটি। তৃতীয় উইকেটে টেস্ট অধিনায়ক রুট আর ওয়ানডে অধিনায়ক মরগান ১৪৩ রান করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। ১৩৩ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পান জো রুটই। আর তার হাতে সেটা তুলে দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান। ওয়ানডেতে নিজের দশম সেঞ্চুরিটি করেন ১১৫ বলে। কিন্তু এরপরের ৩৩ রান করেন ১৪ বলে। ওয়ানডেতে এটিই এখন তার সর্বোচ্চ স্কোর। আগেরটি ছিল ১২৫। মরগান তার ৩৩তম ফিফটি করে অপরাজিত থাকেন ৬১ বলে ৭৫ রান করে। ওপেনার অ্যালেক্স হেলস ৮৬ বলে ৯৫ রান করে সাব্বিরের বলে আউট হন।
কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ড টসেজেতা শেষ চার খেলাতেই জয় পেয়েিেছল। প্রতিপক্ষ দলগুলোও বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল ছিল না। ছিল ভারত. ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কা। প্রতিবারই টসে জিতে আগে বল করেছে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের জয়ে একটু কালিমা হয়ে থাকতে পারে তামিমের ক্যাচ-বিতর্ক। ৩৫.৩ ওভারে মরগানের হাঁকানো বল লং অনে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু আম্পায়াররা মনে করলেন বল মাটি স্পর্শ করেছে তামিমের হাতে ওঠার আগে। তামিমের দাবির প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তটা তৃতীয় আম্পায়ারের দিকে ইশারা করে মরগানকে নটআউট দেন ভারতের আম্পয়ার এস রবি। তৃতীয় আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার অক্সেনফোর্ড কোনমতে রিপ্লে দেখে মরগানকে নটআউট দিয়ে দিলেন। টিভি ভাষ্যকার এমনকি ইংল্যান্ডের নাসের হুসাইনও মনে করছিলেন বলটি ক্যাচ হতে পারে। তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্তটা দ্রুতই দিয়ে দিলেন। তামিম এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তটাও মানতে তার কষ্ট হচ্ছিল। তিনি ফের মাঠের আম্পায়ারের কাছে গিয়ে আপত্তি জানান। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল এ ম্যাচের চার অফিসিয়ালের একজন ভারতীয় আর তিনজন অস্ট্রেলিয়ানকে দায়িত্ব দেন। রিজার্ভ আম্পায়ারও ছিলেন নিউজিল্যান্ডের। এরা সবাই একেতো ইংলিশ বংশোদ্ভুত, তার ওপর অস্ট্র্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডও বাংলাদেশের গ্রুপেরই দল। অন্য গ্রুপের দেশ থেকেও অফিসিয়াল নিয়োগ দেয়া যেতে পারতো।
ইংল্যান্ডের ইনিংসে বাংলাদেশের জন্য যেটুকু উত্তেজনা আর আনন্দ তা ওই তৃতীয় ওভারেই। মাশরাফির দ্বিতীয় ওভারে অফ ফর্র্র্র্র্মে থাকা জেসন রয় মুশফিকের হাতে ধরা পড়লে উল্লাসে পেটে পড়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু আর একবারও বাংলাদেশি দর্শকদের মনে জয়ের আশা জাগতে দেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। খুব মারমুখি খেলেন নি তারা। আবার ধীর গতিতেও নয়। বাংলাদেশের গতিতেই এগিয়ে যান তারা শেষের দিকে। সেঞ্চুরি আর ফিফটির পর রুট আর মরগান তাদের কব্জির জোরটা দেখান। তবে এ খেলা থেকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শিক্ষা নিতে পারেন কীভাবে চাপমুক্ত থেকে লক্ষভেদ করতে হয়।
ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক সময়ের সেরা জুটিটাই কাল বাংলাদেশের বিপক্ষেও সফল। অ্যালেক্স হেলস আর জো রুটের বিশাল জুটিটাই ইংল্যান্ডের ভিত গড়ে দেয়। দ্বিতীয় উইকেটে এরা যোগ করেন ১৫৯ রান। তৃতীয় ওভার থেকে শুরু করে ২৭ ওভার পর্যন্ত দলকে টেনে তারা। সাব্বিরের বলে ৯৫ রান করে হেলস আউট হলে ভাঙে এ জুটি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেটে হেলস-রুট জুটির গড়ই সবচেয়ে ভাল। গতকালের আগে ২০ ইনিংসে তারা ১৫১০ রান করেন ৭৫.৫০ গড়ে। গতকালের ছিল ২১ ইনিংসে এ জুটির ষষ্ঠ শতরানের জুটি।
বাংলাদেশের পরের খেলা ৫ই জুন। এ মাঠেই খেলাটি হবে দিবারাত্রির।
তামিম-মুশফিকের রেকর্ড জুটি
রোমাঞ্চকর ব্যাটিং। তামিম-মুশফিকের অসাধারণ নৈপুণ্য। বিলাতের মাটিতে রেকর্ড জুটিতে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ। গতকাল আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে ব্যাট হাতে একাধিক রেকর্ড গড়েন টাইগাররা। ওভাল মাঠে ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ৩০৫/৬-এ। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার দলীয় ৩০০ রানের কোঠা স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। গতকাল ব্যাট হাতে তৃতীয় উইকেটে ১৬৬ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটি তৃতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তামিম-মুশফিক ভেঙে দিলেন আসরের ১১ বছরের পুরনো রেকর্ডটি। ২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আহমেদাবাদে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা ও কুমার সাঙ্গাকারা। গতকাল বাংলাদেশের ইনিংসে রচিত হয় আরো রেকর্ড। এশিয়ার বাইরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেট জৃুটিতে এটি সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটিও ছিল ইংল্যান্ডেরই বিপক্ষে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১৪১ রানের জুটি গড়েন মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেট জুটির পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও তামিম-মুশফিকের। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ রানের জুটি গড়েন তামিম-মুশফিক।
লন্ডনের ওভাল মাঠে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক এউইন মরগান। আর শুরুতে দৃঢ়তা দেখান দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম। ব্যাট হাতে সতর্ক শুরুতে ইনিংসের শুরুর ৪.২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ রান। ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি আসে ৪.৩তম ওভারে। পরপর দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান বাংলাদেশ ওপেনার সৌম্য সরকার। ওপেনিং জুটিতে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তামিম-সৌম্য। ১২তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে ইংলিশ পেসার বেন স্টোকসের ডেলিভারিতে বদলি ফিল্ডার জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। ৩৪ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আনঅফিশিয়ালি মিশন শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের এ বাঁ-হাতি ওপেনার। আর মূল আসরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেও সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখালেন তামিম।
গতকাল নিজের উইকেট দেয়ার আগে ১২৮ রানে দারুণ ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহীম খেলেন ৭২ বলে ৭৯ রানের ইনিংস।
১৪২ বলের ইনিংসে তামিম হাঁকান এক ডজন চার ও ৩টি ছক্কা। ব্যাট হাতে ১১টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ১২৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। চার নম্বরে ব্যাট হাতে মুশফিক হাঁকান ৮টি বাউন্ডারি। গতকাল ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহটা বড় হতে পারতো আরো। তবে পরপর দুই বলে উইকেট বিসর্জন দেন তামিম-মুশফিক। ৪৪.৩তম ওভারে ইংলিশ পেসার লায়াম প্লাঙ্কেটেরে ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তামিম। পরের বলেই বড় শট হাঁকাতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দেন মুশফিক। ৪৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন মুশফিক। ১৭৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মুশফিকের এটি ২৫তম অর্ধশতক।
১৭০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের সর্বাধিক নবম সেঞ্চুরি কুড়ালেন তামিম ইকবাল।
এর আগে ইংলিশ পেসার লায়াম প্লাঙ্কেটকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ৭১ বলে অর্ধশতক পূরণের পথে তামিম হাঁকান ৭টি বাউন্ডারি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে তামিমের রানের গড় ৬১.৩৩। কিন্তু ইংলিশদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তেমন উজ্জ্বল ছিল না তামিমের পরিসংখ্যান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের রানের গড় ছিল ২৮.৪১। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ১২ ম্যাচে তামিম অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন একবারই। গতকাল অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের বদলে একাদশে সুযোগ নেন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। তবে তিন নম্বরে ব্যাট হাতে বেশি কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো অতীত রেকর্ড থাকলেও গতকাল ২০ বলে ১৯ রানে থামে ইমরুলের ইনিংস। ‘ব্যাড-প্যাচ’ কাটেনি বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানেরও। গতকাল ব্যাট হাতে সাকিব উইকেট খোয়ান ব্যক্তিগত ১০ রানে। তবে শেষের দিকে সাব্বির রহমানের ১৫ বলে ২৪ রানের ইনিংসে ভর করে দলীয় ৩০০ রানের কোঠায় পৌঁছে টাইগাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ২৮৮ রানের। গত বছর ঢাকায় এ রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা।
এটাকে ‘ডেথ গ্রুপ’ আখ্যা দিচ্ছেন সবাই। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ছাড়াও রয়েছে ২০১৫ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আসরের ‘বি’ গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী ৫ই জুন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কার্ডিফে দিবারাত্রির ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।