সিলেটে নিরাপত্তার নামে এক নওমুসলিমকে গ্রেফতারের পর মামলা…!

Slider জাতীয় সিলেট

Abdul Aziz

সিলেট প্রতিনিধি  : সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় নিজের নিরাপত্তার জন্য সাধারন ডায়েরী করতে এসেছিলেন এক নওমুসলিম। উল্টো পুলিশ থাকে নিরাপত্তার নামে আটক করে রেখেছে থানায়।

ফেসবুকে তার নামে হিন্দুদের নিয়ে হুমকি ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করে দেওয়া হয় কম্পিউটার দিয়ে কারসাজি করে বানানো পোষ্ট। যার বিরুদ্ধে এসব কারসাজির অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলো আব্দুল আজীজ এখন উল্টো তার দেওয়া মামলায় গ্রেফতার হতে হয়েছে তাকে।

থানা হাজতে ঠাই হল নও মুসলিম আব্দুল আজিজ কানুকে। তার অপরাধ ইসলামী আদর্শে নিজেকে জড়ানো আর অন্যান্যদের মধ্যে প্রচারের অপরাধ। যখন তিনি কানু ছিলেন, তখন ছিলেন নিরপরাধ। আব্দুল আজিজ হওয়া তার জীবনের কাল হয়েছে বলে তার মন্তব্য। তথ্য প্রযুক্তি আইনে তাকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ বলছে তার নিরাপত্তার জন্য তাকে থানা আটক রাখা হয়েছে।

গোপন সুত্রে জানাগেছে, সিলেট শহরের জনৈক রাকেশ রায় নামে এক ব্যাক্তির এজাহারের বিত্তিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে এফআইআর করে পরে রাকেশ রায়ের মামলায় আজীজকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশের ভুমিকায় গোলাপগঞ্জ জুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যদিও পুলিশ বলছে তার নিরাপত্তার জন্য তাকে থানা আটক রাখা হয়েছে।

Snap2

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে মৌলভী বাজার জেলার করিমপুর গ্রামের সুনিল বাবু দাশ এর ছেলে কানন সারতি ওরফে কানু দাস প্রায় ৪বছর পূর্বে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এরপর তার নতুন নাম হয় আব্দুল আজিজ; নতুন ঠিকানা সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ডামপাল গ্রামে। এই ৪বছরে নিজের বাবা-মা সহ ২০ থেকে ৩০ জন হিন্দুকে তিনি ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত করেছেন।

আব্দুল আজীজের হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি সিলেট বিভাগীয় হিন্দু খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। ফেসবুকে তার নামে হিন্দুদের নিয়ে হুমকি ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করে দেওয়া হয় কম্পিউটার দিয়ে কারসাজি করে বানানো পোষ্ট। এই ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডির আবেদন নিয়ে এসে উল্টো থাকেই গ্রেফতার করে বসেছে পুলিশ। যার বিরুদ্ধে এসব কারসাজির অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলো আব্দুল আজীজ এখন উল্টো তার দেওয়া মামলায় গ্রেফতার হতে হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় বিকাল ৩টায়। রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম ফজলুল হক শিবলী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আজিজ একটা ড্যাঞ্জারাস (বিপদজনক) লোক, কত মুসলমান আছে কেউ বাড়াবাড়ী করেনা; সে এত মুসলমান বানাতে যায় কেন?

তার ভালোর জন্য আটকে রেখেছি। না হলে বাকি হিন্দুরা তাকে কিডনাপ করে মেরে ফেলবে। তার জন্য জেলখানাই নিরাপদ।’ সে কেন থানায় এসেছিলো এবং কোন মামলা ছাড়া থাকে কেন গ্রেফতার করা হলো জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, সে একটা সাধারন ডায়েরী (জিডি) আবেদন নিয়ে এসেছিলো সন্দেহ হওয়ায় আটক করা হয়েছে। রাকেশ বাবু আসলে আজিজের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে।

খোজঁ নিয়ে জানাগেছে জকিগঞ্জ উপজেলার কেরাইয়া পল্লীশ্রী গ্রামের মৃত সুরেশ রায়ের ছেলে রাকেশ রায় জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

জিডি আবেদনের কপিতে আব্দুল আজীজ রাকেশ রায়কে অভিযুক্ত করে উল্লেখ করেছিলেন “ ফেসবুকে আমার সাবেক জাতি ভাই (হিন্দু দাদা রাকেশ রায়) আমার নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ফেক আইডি তৈরী করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন ও রাস্ট্রীয়ভাবে দেশদ্রোহী দেখানোর জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি উনাকে (রাকেশ) অনুরোধ করি আমার নামে ভিন্ন ধরনের বাজে কথা বার্তা না লিখার জন্য। তিনি আমার কথায় কর্নপাত না করে আমাকে লাদেন ও জঙ্গী বলে গালাগাল করেন যার প্রমাণ ফেসবুক মেসেঞ্জারে রয়েছে।”

এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে আব্দুল আজীজ মুসলমান হওয়ার পর থেকে তার বাবা-মা ও পরিবারের অনেক সদস্যকে মুসলমান করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি নওমুসলিম হওয়ার সুবাধে বিদেশ থেকে বিভিন্ন জনের আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকেন।

মৌলভীবাজারের গ্রামের বাড়ীতে গেলে পুরনো ধর্মের অনেককেই তিনি ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিতেন যা অনেক সময় ফেসবুকে আপলোড করতেন। ধীরে ধীরে হিন্দুদের মুসলমান বানানো ও এই দাওয়াত দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি হিন্দু ধর্মের অনেকে। এছাড়া পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী হওয়ার সুবাধে দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত অনেক হিন্দু রোগীকে নিজ উদ্যোগে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা করাতেন।

তার এই মহানুভবতায় অনেক হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। এই বিষয়টি স্বীকার করে মামলার বাদী জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাকেশ রায় মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানান সে সবাইকে মন ভুলিয়ে ধর্মান্তরিত করছে এটি ঠিক নয়।

নিজের বিরুদ্ধে ভুয়া আইডি থেকে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে তিনি জানান কম্পিউটার কারসাজি কিনা সঠিক বলা যাচ্ছেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *