ঢাকা; উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোরা। আজ সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানবে এটি। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বেশি হতে পারে এমন আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মংলা ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। রাতে কক্সবাজার বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও বিশেষ সতর্কতা জারি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এবং ৮ নম্বর সংকেতের এলাকাগুলো হলো- ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো। এসব উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয় অধিবাসীদের তাদের গবাদিপশুসহ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের দায়িত্বে) গোলাম মোস্তফা জানান, এলাকায় সরকারের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বাগেরহাট ও খুলনা জেলার কিছু অংশে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। ওই এলাকাগুলোতে প্রস্তুত আছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুত করা হয়েছে। এছাড়া একটি সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত যেকোনো ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণকক্ষের ৯৫৪০৪৫৪, ৯৫৪৫১১৫, ৯৫৪৯১১৬ ও ০১৭১৫১৮০১৯২ নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করা যাবে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার সব নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন জানান, এই সতর্কতায় ৬৫ ফুটের উপরের জাহাজ চলাচল করতে পারে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থাকায় ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। শুধু চাঁদপুর ও কাছের নৌপথে লঞ্চ চলাচল করতে পারবে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর ও এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূল অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর এসব উপকূলীয় জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ এবং ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো ও দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়ে মোরা বেশি শক্তিশালী হবে না। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত ঘূর্ণিঝড় সিডরে ব্যাপক ক্ষতক্ষতি হয়েছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ের সময় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছিল আবহাওয়া বিভাগ।
চট্টগ্রামের বন্দরে পণ্য উঠানামা বন্ধ, অ্যালার্ট-৪
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত হানার খবরে সতর্ক বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুপুর থেকেই শহরজুড়ে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বন্দরে জারি করা হয়েছে ৪ নম্বর অ্যালার্ট। বহির্নোঙ্গরে পণ্য ওঠা-নামাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সব ধরনের সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার সব চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সমুদ্রবর্তী অঞ্চল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর সাগরপাড়ের লোকজনদের নিরাপদস্থলে চলে যেতে মাইকিং করতে দেখা গেছে প্রশাসনকে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত থেকে বাঁচতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন গতকাল দুপুর থেকে কয়েক দফা পৃথক বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করেছে।
চট্টগ্রামে চলছে মাইকিং
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতের আগেই চট্টগ্রামের সাগরপাড়ের লোকজনের মনে মনে চলছে আতঙ্ক। রোজা রেখে অনেকে নিরাপদস্থলে ছুটে গেলেও বেশির ভাগ লোকজনকে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের অনেক কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাইকিং করা লোকজনেরা।
দুপুর থেকেই চট্টগ্রামের আকাশ মেঘলা। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে। অন্ধকার হয়ে আছে পুরো শহর। পতেঙ্গা সাগরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় চট্টগ্রামের পরিবেশ কিছুটা মেঘাছন্ন।
চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ নম্বর অ্যালার্ট
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠকের পর ৩ নম্বর অ্যালার্ট জারি করে গতকাল। আকাশ মেঘলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেটি ও বহির্নোঙ্গরে জাহাজে পণ্য উঠানো ও জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ এখনো বহাল রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কথা হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কারণে এই মুহূর্তে পণ্য খালাস বন্ধ। সব ধরনের জাহাজ নিরাপদস্থলের কাছাকাছি। আমরা সর্তক আছি।
তিনি আরো বলেন, ‘অ্যালার্ট-৪’ বলবৎ আছে। কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পণ্যবাহী যেসব লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে সেগুলো উজানের দিকে চলে যাওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে তাদেরকে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোরা পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ছাড়াও উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এই মুহূর্তে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতারে সতর্কতা সংকেত বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে অবস্থান করছেন। জেলা প্রশাসনের ভাণ্ডারে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।
সভায় ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্ট, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুৎ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তাদের সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৬ লাখ ৭২,০০০ টাকা ও ৩৪২ টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের কাযালয়, চট্টগ্রামে একটি সার্বক্ষণিক জরুরি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে যার নম্বর ০৩১-৬১১৫৪৫। উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, আনোয়ারা কর্ণফুলী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জরুরি সভা করে ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) জন্য ৬৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবী উপকূলীয় উপজেলাসমূহে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। কেবল তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় হতে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। উপকূলীয় উপজেলা সমূহের ৪৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর উপকূলে আতঙ্ক
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা প্রতিরোধে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের দরবার হলে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে জেলা প্রশাসক মো. মাছুমুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও জন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধানরা অংশ গ্রহণ করেন। ঘূর্ণিঝড়ে জীবন ও সম্পদহানির পরিমাণ কমাতে ৩৫১টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবারের পর্যাপ্ত মজুদ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ঔষধ মজুদ রাখা হচ্ছে। এছাড়া সাগর উপকূলীয় উপজেলা সমূহের অদূরবর্তী দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসের জন্য কোনো জাহাজ নেই। তবে ঘূর্ণিঝড় থেকে স্থাপনা রক্ষায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পায়রা বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের পোতাশ্রয় শিববাড়িয়া নদীতে প্রায় তিন শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুয়াকাটা-আলীপুর ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি।
উপকূলজুুড়ে আতঙ্ক
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোরা। এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। মংলা বন্দরে ৮ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। সাগরের সব মাছ ধরা নৌকাকে তীরে আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরে কুয়াকাটার এখনও শতাধিক মাছধরা ট্রলার রয়েগেছে। যাদের সঙ্গে কলাপাড়া প্রশাসন যোগাযোগ করতে পারছে না। এদের আত্মীয়-স্বজনরা মহা দুশ্চিন্তায়। উপকূল এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। বরিশালে স্থানীয় সংকেত ২ জারি হয়েছে। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুরে বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিআইডব্লিউটিএ নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের এই উপ-পরিচালক বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাঝ নদীতে থাকা লঞ্চগুলোকে নিরাপদ স্থানে নোঙর করে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যাবে কি না আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মংলা থেকে ৫৪০ ও পায়রা বন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। মংলা ও পায়রায় সমুদ্র বন্দরের ৫নং সংকেত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে ৪ থেকে ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। নদী বন্দরগুলোর জন্য ২নং সংকেত জারি করা হয়েছে। যার কারণে বরিশালের উপর থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে।
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি জানান, কুয়াকাটা উপকূলীয় এলাকায় আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে এবং সাগর উত্তাল রয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরা- এমন খবরে কলাপাড়ার উপকূলজুড়ে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
যেসব জায়গায় বেড়িবাঁধ নেই ওইসব এলাকার মানুষগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের পোতাশ্রয় শিববাড়িয়া নদীতে প্রায় তিন শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুয়াকাটা-আলীপুর ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা। পায়রা সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসের জন্য কোন জাহাজ নেই। তবে ঘূর্ণিঝড় থেকে স্থাপনা রক্ষায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পায়রা বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে পটুয়াখালী জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, নদী বেষ্টিত উপজেলা রাঙ্গাবালীসহ জেলার গোটা উপকূলীয় এলাকায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় সমুদ্র বন্দর এলাকায় ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এক ধরনের গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো কোনো এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে রাঙ্গাবালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে আছে। এছাড়াও মানুষকে সতর্ক করতে আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে উপকূল এবং বিভিন্ন এলাকায় ডাবল লাল পতাকা প্রদর্শন করা হয়েছে।
দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে বঙ্গোপসাগরে শত-শত মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা কিনারে ভিড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্য মৎস্য বন্দর রাঙ্গাবালী, আলীপুর, মহিপুরের পোতাশ্রয় শিববাড়িয়া নদীতে প্রায় ছয় শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসের জন্য কোন জাহাজ নেই বলে জানিয়েছে পায়রা বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
চট্টগ্রামের ১০ যুদ্ধজাহাজ এখন মংলায়
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র তাণ্ডব থেকে বাঁচাতে চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি থেকে ১০টি যুদ্ধজাহাজ ও চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের ২টি জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে মংলায় আনা হয়েছে। মংলা বন্দরের সব ধরনের পন্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বাগেরহাটসহ উপকূল জুড়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বইছে ঝড়ো হাওয়া। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মংলা বন্দর জেটি ও আউটার অ্যাংকরেজে অবস্থানরত ১১টি জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রেখেছে। আবহাওয়া বিভাগ বাগেরহাট ও মংলা বন্দরকে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এই অবস্থায় মংলা বন্দর জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে আউটার অ্যাংকরেজে নোঙ্গর করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএনএস মংলা নৌ ঘাঁটির সকল যুদ্ধজাহাজ ও নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই উত্তাল বঙ্গোপসাগরে টিকতে না পেরে সুন্দরবনের দুবলা, হিরনপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী এলাকার ছোট নদী ও খালে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারগুলো। সুন্দরবন বিভাগের সকল নৌযান, কর্মকর্তা কর্মচারী ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলি নিরাপদ স্থানে রাখতে বলা হয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সকল ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপকূলের দ্বীপ ও চরসমূহে বসবাসরত সকল মানুষ ও বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ফিশিং ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে মংলা কোস্টগার্ড র্পশ্চিম জোনের সদস্যরা সোমবার ভোর থেকেই মাইকিং করছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার অলিউল্লাহ জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় চট্টগ্রাম নৌ ঘাঁটিতে থাকা ১০টি যুদ্ধজাহাজ ও চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের ২টি জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে সোমবার দুপুরে মংলায় নিয়ে আসা হয়েছে। মংলা বন্দরের সব ধরনের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার সকালে বন্দরে দুর্যোগ মোকাবিলা সংক্রান্ত জরুরি সভায় মংলা বন্দর জেটিতে অবস্থানরত সকল জাহাজকে আউটার অ্যাংকরেজে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আউটার অ্যাংকরেজে সকল জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙ্গর করে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।