এম আরমান খান জয় ঃ
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতা নিয়ে প্রতিবছর মুসলিম পরিবারে রমজানের আবির্ভাব ঘটে। ইবাদতের ভরা মৌসুম এই রমজান মাস। মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে এ মাসের প্রভাব ব্যাপক। তাই প্রত্যেক মুসলমানের এ মাসটিকে সার্থকভাবে, যথাযথ মর্যাদায় অতিবাহিত করা একান্ত ইমানি কর্তব্য। কেবল আমল-ইবাদতের মাধ্যমেই নয়, পবিত্র এ মাসের পবিত্রতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব-কর্তব্য। এ জন্য এ মাসে রোজা পালনের পাশাপাশি আরো কিছু আনুষঙ্গিক দায়িত্ব পালন করা জরুরি। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসের পবিত্রতা বজায় রাখা এবং এ মাসটিকে যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপন করা সম্ভব।
অমুসলিমদের করণীয় : বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশেই অমুসলিমদের বসবাস রয়েছে। এটা থাকাই স্বাভাবিক। কারণ কোনো দেশ কারো একার কিংবা নির্দিষ্ট কোনো একটি জাতির নির্ধারিত কোনো ভূমি নয়। শান্তিপূর্ণ পৃথিবী আমাদের সবার কাম্য। আমরা সবাই শান্তি চাই। রমজানের পবিত্রতা অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে একজন মুসলমানের পাশাপাশি প্রত্যেক অমুসলমানেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। এ মাসের পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে তাঁরাও অংশ নিতে পারনে। আর অংশ নেওয়ার এই অধিকার একজন মানুষ হিসেবে দায়িত্ব। মুসলমানদের রোজা রাখার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ কোনো অমুসলিমের থেকে প্রকাশ পাওয়াটা কাম্য নয়। সুতরাং মুসলমানদের শান্তিপূর্ণভাবে রোজা পালনের ক্ষেত্রে সহায়তা করা প্রত্যেক অমুসলিমের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। অনেক অমুসলিমের মধ্যে এমন মনোভাব লক্ষ করা যায়, তাদের রোজা তারা পালন করবে, আমাদের কী আসে-যায়! না, বিষয়টা মোটেও এমন নয়; ধর্ম-বর্নের ভেদাভেদ ভুলে প্রতিটি ভালো কাজে দেশে বসবাসকারী প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণ করা উচিত এবং এটা একজন মানুষ হিসেবে তাঁর নাগরিক দায়িত্ব।
প্রকাশ্যে পানাহার ত্যাগ করা : রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রকাশ্যে পানাহার ত্যাগ করা উচিত এবং এ ব্যাপারে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণই মূল পুঁজি। একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবার খাওয়া যেমন অমানবিক বা নিন্দনীয়, রমজান মাসে রোজাদারদের সামনে রেখে কিংবা প্রকাশ্যে খাবার গ্রহণ করাও তেমনি অমানবিক এবং রোজাদারদের প্রতি অনৈতিক আচরণের পর্যায়ভুক্ত। অনেক কারণে রোজা রাখাটা সবার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। সুতরাং আমরা যারা রোজা রাখতে পারব না কিংবা রাখা সম্ভব হবে না- অন্তত দিনের বেলা প্রকাশ্যে খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকব এবং এই বিরত থাকা একজন রোজাদার ভাইয়ের রোজা পালনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে করব। আল্লাহ চান তো আমার এই সামান্য সহযোগিতার মানসিকতাকে পছন্দ করে আমার রোজা না রাখা বা রাখতে না পারার অন্যায়কে মাফ করে দেবেন। কারণ তিনি তো গাফুরুর রাহিম।
ব্যবসায়ী ভাইদের দায়িত্ব-কর্তব্য : পবিত্র রমজান মাস ইবাদতের মাস। আর হালাল পন্থায় ব্যবসা করাও একটি উত্তম ইবাদত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে তোমাদের জন্য বৈধ করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’ রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অবাঞ্ছিতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে অধিক লাভে ব্যবসা করা রোজা পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির নামান্তর এবং এটা হারাম। কোনো ধরনের ব্যবসায়িক বা অন্য যেকোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করে রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে রোজাদারকে কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম বা অবৈধ। একজন ব্যবসায়ীর অবশ্যই মনে রাখা উচিত, তিনিও একজন রোজাদার কিংবা তাঁর পরিবারেও রোজাদার ব্যক্তি রয়েছেন। একজন মুসলমান হিসেবে কিংবা সমাজের একজন সুনাগরিক হিসেবে পবিত্র রমজান মাসে অন্য রোজাদারকে সহযোগিতা করা তাঁর ওপর ইমানি ও নৈতিক দায়িত্ব। তাই রমজানের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে ব্যবসায়ী ভাইদের হালাল পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা একান্ত উচিত এবং বেশি লাভের আশায় কোনো অসদুপায় অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকাও জরুরি।
শ্রমজীবীদের প্রতি সহায় : শারীরিক শ্রমজীবী মানুষ যারা, পবিত্র রমজান উপলক্ষে তাদের প্রতি বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজার দিনে শ্রমিকের কাজ কমিয়ে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ তাই আমরা যারা মালিক শ্রেণী রয়েছি, তাদের উচিত পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে শ্রমিক শ্রেণীর ওপর অন্যান্য সময়ের তুলনায় কাজ কমিয়ে দেওয়া।
সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য : আমরা সামাজিক জীব। একা একা জীবন যাপন করা বা কোনো কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করাই মানব ধর্ম। তাই রোজাদার কিংবা অরোজাদার নয়- সবাই মিলে একসঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে। নিজে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং অন্যকে অংশগ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করতে হবে। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সব মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব হলো পবিত্র রমজান মাসের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা বজায় রাখা এবং অবাঞ্ছিতভাবে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে রোজাদারদের কষ্ট দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত। আল্লাহ আমাদের রমজানের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।