যে মানুষটি মহাশক্তিধর আমেরিকাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেন না; কিংবা পান থেকে চুন খসলে কামানের গোলায় বিশ্বস্ত সৈনিককে উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেন না, তিনি পিয়ানোয় বসে টুংটাং সুর তুলতে পারেন বলে বিশ্বাস হয়? কিন্তু খেয়ালি কিম সুর তোলেন ঘরে রাখা দামি দামি পিয়ানোয়। সিনেমা দেখেন নিজের ব্যক্তিগত প্রেক্ষাগৃহে বসে। বিদেশি সিগারেটে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেন ৪৪ ডলার। চুমুক দেন আরও দামি হুইস্কিতে। রসেবশে এলাহি এক জীবন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের।
বিদেশি মদ
দেশি, সহজলভ্য মদে কোনো কালেই রুচি ছিল না কিম জং-উনের। এলিট বন্ধুবান্ধব ও নিজের জন্য বছরে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুধু মদই আমদানি করেন। পছন্দ করেন হুইস্কি এবং কগন্যাক। কিন্তু যেকোনো ব্র্যান্ডের নয়। হেনেসির মতো ব্র্যান্ডের হুইস্কির অনুরাগী, যার একটা বোতলের দামই পড়ে ২,১৪৫ ডলার।
ফরেন ফুড
ডায়েট নিয়ে কোনোরকম কার্পণ্য নেই কিমের। সেরা সেরা জিনিস ছাড়া মুখেই তোলেন না। পর্ক খেতে ইচ্ছে হলে তা আনানো হয় ডেনমার্ক থেকে। ইরান থেকে আসে ক্যাভিয়ার। বিফ খেলে জাপানের। এমন আরও কত…! নিজের খাওয়ার পেছনে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ খরচ করেন, তার প্রকৃত অঙ্কটা অজানাই। তবে, সেটা যে মাসে কয়েক মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়, এ নিয়ে সন্দেহ নেই।
ফ্রেঞ্চ ডিজাইনার সিগারেট
হ্যাঁ, যিনি শুধু খাওয়ার পিছনে লাখো টাকা খরচ করতে পারেন, তার যে ধূমপানেও বিশেষ পছন্দ থাকবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী! ফ্রেঞ্চ ডিজাইনার সিগারেট ছাড়া কিম জংয়ের এক মুহূর্ত চলে না। ইভেস সেন্ট লরেন্টের যে সিগারেটে তিনি সুখটান দেন, তার এক প্যাকেটের দাম ৪৪ মার্কিন ডলার।
পিয়ানো প্রীতি
কিমের সবতেই বাড়াবাড়ি, অল্পে মন ভরে না। লোকের বাড়িতে একটা পিয়ানো থাকে, কিমের পিয়ানোর কালেকশান শুনলে, চোখ কপালে উঠবে। তিন ডজনের কম নয়। এক একটার খরচই ৬৪,৪৫১ ডলার।
কিমের প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম কখন যে কোথায় থাকেন, কেউ জানেন না! জানবেনই বা কী করে! একটা-দুটো নয়, ১৭টি প্রাসাদ রয়েছে কিমের। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো এক একদিন এক এক প্রাসাদে রাত কাটান এই বিলাসী মানুষটি। নিজের জন্য একটি দ্বীপও রয়েছে তার। সেখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই।
থিম পার্ক
খামখেয়ালি এই শাসকের ভিতরে শিশুসুলভ ব্যাপারস্যাপারও কাজ করে। যে কারণে বিনোদন পার্কও বানিয়েছেন। জলকেলির জন্য রয়েছে আবার ওয়াটার পার্কও।
ব্যক্তিগত লাক্সারি সিনেমা
দুনিয়ার আর কারও ব্যক্তিগত সিনেমা হল আছে কি না, জানা নেই। কিন্তু কিমের আছে। যেখানে এক হাজার আসন রয়েছে।
ডিভিডির বিপুল সংগ্রহ
উত্তর কোরিয়ায় অন্য দেশের ফিল্মের ডিভিডি আনানো নিষিদ্ধ। কিন্তু কিমের নিজস্ব ডিভিডি কালেকশন শুনলে মাথা ঘুরে যাবে। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে ২০ হাজার সিনেমার ভিডিয়ো। যার একটা বড় অংশই পশ্চিমি। র্যাম্বো, ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ… কী নেই সংগ্রহে!
সেলিব্রেটি বন্ধু অ্যাপায়ন
আমেরিকার সঙ্গে সাপেনেউলে সম্পর্ক হলেও আমেরিকার প্রাক্তন বাস্কেটবল প্লেয়ার ডেনিস রডম্যানের সঙ্গে দারুণ সখ্য কিম জং উনের। কিমের আমন্ত্রণে মাঝেমধ্যেই উত্তর কোরিয়ায় চলে আসেন ডেনিস। বিদেশি সেলব বন্ধুর তালিকায় আরও অনেকই রয়েছেন। অতিথিদের জন্য খানাপিনায় কোনো ত্রুটি রাখেন না উত্তর কোরিয়ার শাসক। বিদেশি পানীয় থেকে ফরেন ফুড, কিছুই বাদ যায় না।
নৌকা বাইচ
জল বিলাসে বাইচ নৌকাও রয়েছে কিমের, যা অন্যদের থেকে অবশ্যই আলাদ। কল্পনাই করা যায় না, ২০০ ফুটের বড়সড় বিলাসী বাইচ। বন্ধু ডেনিস যার তুলনা করেছেন, ‘ক্রস বিটুইন আ ফেরি অ্যান্ড ডিজনি বোট। ‘ রাজকীয় এই নৌকা বানাতে খরচ হয়েছে ৮০ লক্ষ ডলার।
দামি হাতঘড়ি
জনসমক্ষে এলে কিমের হাতে ঘড়ি নেই, এমনটা সচরাচর ঘটে না। দামি দামি ঘড়ির কালেকশন রয়েছে উত্তর কোরিয়ার এক নায়কের। সবমিলিয়ে শুধু ব্যক্তিগত হাতঘড়ির পিছনেই খরচ করেছেন ৮২ লক্ষ ডলারের বেশি।
স্ত্রীর জন্য কিমের উপহার
নিজে যেমন নামিদামি জিনিস ব্যবহার করেন, স্ত্রীকেও সেভাবেই রেখেছেন। ২০০৯-এ রি সোল-জুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে উপহারে উপহারে স্ত্রীকে ভরিয়ে দিয়েছেন। কেমন গিফট দেন, একটা উদাহরণ দিলেই আভাস মিলবে। সম্প্রতি ক্রিস্টিয়ান ডিওরের একটি হ্যান্ডব্যাগ রি’কে উপহার দিয়েছেন, যার দাম ১,৪৫৭ মার্কিন ডলার। যেখানে উত্তর কোরিয়ায় মানুষের গড় বার্ষিক রোজগার ১,৮০০ মার্কিন ডলার, সেখানে স্ত্রীর এই হ্যান্ডব্যাগ কতটা দামি, আশাকরি বুঝতে পারছেন।
-এই সময়