রাতুল মন্ডল শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি ঃ
আসন্ন্ রমজান মাসকে সামনে রেখে মহা ব্যস্ততায় সময় পার করছেন মুড়ি কারখানার কারিগররা। পাল্লাদিয়ে তারা মুড়ি উৎপাদন করছেন। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে পুজিঁ করে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে সাধারণ মুড়ির চেয়ে একটু বড় আকারের ধব ধবে সাধা মুড়ি তৈরী করা হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার প্রায় অর্ধডজন মুড়ি কারখানায়। এই সমস্ত কারখানায় বানিজ্যিকভাবে তৈরী হচ্ছে ক্যামিকেল মিশ্রিত মুড়ি।
প্রতিটি কারখানায় গড়ে প্রায় ১০-১২ হাজার কেজি মুড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকী এই মুড়ি তৈরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়া সার, সোডিয়াম সালফেট সালফারসহ রাসায়নিক পদার্থ। কারখানাগুলোতে সরকারী কোন নিয়ম কানুনের বালাই নেই।
মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন আল-মদিনা মুড়ির মিলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,কারখানার ভিতরে ১৪-১৫ জন শ্রমিকের কর্মযজ্ঞ যেখানে ছোট ছোট মুড়ির চাল উত্তপ্ত করার পাত্রে বস্তা থেকে চাল এনে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে সাথে সাথেই দুইজন শ্রমিক এসে একটি কক্ষ থেকে ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি (ইউরিয়া,সোডিয়াম কার্বনেট,সালফার) এনে সে চালে মিশিয়ে দিচ্ছে,১৫ মিনিট চাল উত্তপ্ত করার পর রাখা হচ্ছে স্যাতস্যাতে মেঝেতে সেখান থেকে চোঙ্গার সাহায্যে উত্তপ্ত বালির মধ্যে ঢেলে দেওয়া হয়,মুহুর্তেই বেড়িয়ে আসছে সাদা ধব ধবে মুড়ি।
এই কারখানার পাশেই রয়েছে আল-আমিন মুড়ির মিল,আকলিমা ফুড,মিতা
লী মুড়ির মিল,নিউ মিতালী মুড়ির মিল,খাঁজা মুড়ির মিলসহ কয়েকটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই কোন সরকারী নিয়ম কানুনের বালাই,শুধু ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিষাক্ত খাদ্য উৎপাদন করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। আর উৎপাদিত মুড়ি রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের জেলা ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল,নরসিংদীতে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। কারখানার তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন মাওনা চৌরাস্তার এসব কারখানা হতে প্রায় ৩০-৪০ টন মুড়ি উৎপাদন করা হয়। রমজান মাসকে সামনে রেখে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন দ্বিগুণ করা হয়েছে। আল-আমিন মুড়ির মিলে গত ২৫ জানুয়ারী গাজীপুর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম অভিযান চালালে,মুড়ির মিল মালিকরা একতাবদ্ধ হয়ে ৩ সদস্যের পুলিশের দলকে অবরুদ্ধ করে মারধর করেন,সকল মুড়ি মিলের সিন্ডিকেটের কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদের সাহস পায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুড়ি তৈরীর এক কারিগর বলেন,মুড়ির চালে ক্যামিকেল মেশানো হলে মুড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এতে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যায় ফলে মালিকের নির্দেশনায় তারা ক্যামিকেলের সংমিশ্রণে মুড়ি তৈরী করে থাকেন।
আল-আমিন মুড়ি মিলের মালিক আবুল কালাম সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজী হননি ।
আল-মদিনা মুড়ি মিলের মালিক ইকবাল হোসেন প্রথমে সাংবাদিক দেখে বিরক্ত হলেও পরে তিনি বলেন, রমজানের কারণে আমার এখানে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন তবে ১০-১৫জন নির্ধারিত শ্রমিক এখানে সব সময় থাকে । রাসায়নিক পদার্থ মিশানোর কথা তিনি অস্বীকার করেন । শুধুমাত্র লবন পানি মিশানো হয় বলে তিনি দাবী করেন ।
শ্রীপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন,এসব কারখানা কতৃপক্ষ খুবই ধূর্ত, বিভিন্ন কাগজপত্র চাইলে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষদের দিয়ে তদবীর করে নানা ধরনের তালবাহানা করেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাহমুদুল হাসান বলেন,মুড়িতে ব্যবহার্য ইউরিয়া,সোডিয়াম সালফেট মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর, বিশেষ করে রমজান মাসে রোজাদাররা খালিপেটে যখন এটা খাবে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার বলেন,উক্ত কারখানাগুলোতে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে,বিষাক্ত ক্যামিকেলের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।