ঢাকা; ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব আওয়ামী লীগের নেতারা। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে এমপি মন্ত্রীরাও এখন সোশ্যাল মিডিয়ার অন্ধ ভক্ত। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন তারা।
গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ফেসবুক, টুইটার পর্যবেক্ষণ করে এ চিত্র দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কর্মশালা হওয়ার পরই দলীয় নেতাদের এসব মিডিয়ায় সরব দেখা গেছে। অবশ্য আগে থেকেই কোনো কোনো নেতা ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে সক্রিয়। সম্প্রতি নতুন করে এসব মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি কয়েকজন এমপির ফেসবুক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে নানা চিত্র। সংরক্ষিত মহিলা আসন ২৮-এর এমপি বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর ফেসবুকে দেখা গেছে সরকারের নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারণা। এ রিপোর্ট লেখার সময় তার ফেসবুকে দুটি বিষয় তুলে ধরতে দেখা যায়। একটিতে ছিল নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি। আরেকটিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্নীতির চিত্র। সেখানে লেখা রয়েছে, মনে পড়ে বাংলাদেশ, ২০০১-২০০৬-এ বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন। বিএনপির ভিশন-২০৩০ মানে কি এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরো ৩০ বছর পিছিয়ে দেয়া? এছাড়া সংসদ ও সংসদের বাইরে তার নানা কর্মকাণ্ডের ভিডিও রয়েছে ফেসবুক ফেইজে। কেয়া চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত তুলে ধরছেন হবিগঞ্জ-সিলেটে সরকারের উন্নয়ন, তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। আরেক সংরক্ষিত আসনের এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী তার ফেসবুক ফেইজে একই ধরনের প্রচারণা তুলে ধরেছেন। কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সাভারের এমপি এনামুর রহমানের ফেসবুক পেইজে। তার পুরো পেইজে রয়েছে কেবল নিজের প্রচারণা ও তার প্রতিষ্ঠিত এনাম মেডিকেলের কর্মকাণ্ড। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ফেসবুকে রয়েছে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের চিত্র। পাশাপাশি নিজের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়া মাঝে মাঝে তার পেইজে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুর নানা উক্তি কোট করতে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ফেসবুকে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তোলা তার নানা ছবি। এছাড়া নিজের কর্মকাণ্ডের চিত্রও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি প্রায় সব আওয়ামী লীগ নেতাদের ফেসবুকে দেখা গেছে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খালি পায়ে হেঁটে যাওয়ার ছবি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রচার চালানোর ওপর জোর দেয়ার পর এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৩৪ জন এমপি। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এক কর্মশালায় সংসদ সদস্যদের এই প্রশিক্ষণ দেয়। ৭ই মে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘সরকারবিরোধী অপপ্রচারের’ জবাব দিতে আওয়ামী লীগের এমপিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়। কর্মশালায় এমপিদের নামে খোলা অবৈধ ফেসবুক পেইজ বা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট সঠিকভাবে পরিচালনা করা, অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের নিয়মাবলি, অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড করার পদ্ধতি এবং নিয়মিত উন্নয়নমূলক কাজের কথা প্রচার করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। কর্মশালায় এমপিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার সম্পর্কে শেখানো হয়। এই মাধ্যম ব্যবহার করে কিভাবে সরকারের গ্রহণ করা গত ৭ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা ছড়িয়ে দেয়া যায়, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাকি সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে কর্মশালার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার সময়কার চিত্র তুলে ধরছেন। আবার কেউ আগামী নির্বাচনে নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন। উল্লেখযোগ্যর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী এলাকার নানা উন্নয়ন চিত্রে নিজের ভূমিকা প্রচার, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন। আবার প্রতিপক্ষের বিষয়টিকে কেউ কেউ তুলে ধরছেন রাজনৈতিকভাবে। যেমন নির্বাচনী এলাকার কোনো এক কর্মীর স্ট্যাটাস শেয়ার করছেন ওই এলাকার এমপি বা অন্য নেতারা। শেয়ার করা পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রতিপক্ষর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে লেখা নানা বিষয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেক এমপি আগামীতে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কি কি করবেন তার ফিরিস্তিও তুলে ধরছেন। সব মিলিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এখন প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। দলীয় নেতাদের এসব তৎপরতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। মানবজমিনকে তারা জানান, এসব মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ভোটারদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। এতে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে ওইসব নেতাদের দূরত্ব কমছে বলে মনে করি। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে জবাবদিহির বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যারা সচরাচর তাদের নেতাদের কাছে পান না তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সহজেই নেতাদের কাছে তাদের অভাব, অনুযোগ বা প্রতিবাদ, প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছেন। এতে দলের নেতাদেরও সুবিধা রয়েছে। তারা জানতে পারছেন নির্বাচনী এলাকার মানুষের কথা, তাদের ভাবনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সক্রিয় হওয়া প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবিলা করতে হবে। শুধু দেশের জন্য কাজ করলে হবে না, আমরা কি করছি তা মানুষকে জানাতে হবে। আমাদের পরিশ্রমের বিষয় মানুষকে জানাতে হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ হারাতে পারবে না। যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, কাজ করলে মানুষ ভোট দেবে- একথা ভেবে এখন ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বাস্তব কথা, এখন প্রচারের যুগ। নিজেদের ভালো কাজের প্রচারের মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, পঁচাত্তরের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সুতরাং কেবল কাজ করলে হবে না। এই অপপ্রচার মোকাবিলার জন্য আমাদেরও প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকেও কাছে টানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল মানুষের কাছে শুনেই নয়, আমরা জরিপ করেও যেটা দেখি, আমাদের তরুণরা আর খবরের কাগজ খুব একটা পড়ে না। অবশ্য খবরের কাগজে আমাদের ‘সুশীল বাবুদের’ মতামতই কেবল দেখা যায়। তো লাইকলি আমাদের তরুণরা ওসব পড়েই না, ওসব পাত্তা দেয় না। তরুণরা টিভি দেখে। তবে সবচেয়ে বেশি খবর তারা পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তারা বেশি অংশগ্রহণ করে। সে কারণেই কিন্তু আমাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পারলে রোজ একটা করে পোস্ট দেবেন। দিনে দুই-তিনটা করেও দিতে পারেন। আমরা যেগুলো পোস্ট দেবো, সেগুলো শেয়ার করেন। এগুলো কিন্তু ভাইরাল হয়ে যায়। টেকনোলজি ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনে তিনি একজন পিএস নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি করে সক্রিয় হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।