স্পোর্টস ডেস্ক; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা ব্যাপার নজরে পড়ে। কোনো টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল ফাইনালে ওঠা মানেই যেন শিরোপা তাদের। পুরো টুর্নামেন্টে নৈপুণ্য যা-ই থাকুক ফাইনালে তারা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে তারা ফাইনালে উঠেছে সাতবার। এরমধ্যে পাঁচবারই শিরোপা জিতেছে।
বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ফাইনালে উঠে তারা শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়। আর ১৯৯৬ সালে উদীয়মান দল শ্রীলঙ্কার কাছে অঘটনের শিকার হয়। এছাড়া বাকি সব ফাইনালে বিধ্বংসী ছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে সেই পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জেতে। ক্রিকেটে যদি ফাইনালের রাজা হয় অস্ট্রেলিয়া তাহলে ইউরোপিয়ান ফুটবলে ফাইনালের রাজা রিয়াল মাদ্রিদ। স্পেনের ক্লাবটি ফাইনালে যেন হারতে জানে না। টুর্নামেন্টজুড়ে নৈপুণ্য যা-ই থাকুক ফাইনালে তারা হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ। ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের সেরা লড়াই ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। ১৯৯২-৯৩ সালের আগে এই লড়াইয়ের নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান এ লড়াইয়ে প্রথম পাঁচবারের টানা শিরোপা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। আর এখন পর্যন্ত মোট মিলিয়ে সর্বাধিক ১১ বারের শিরোপাজয়ী দল তারা। এবার রয়েছে তারা ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের আরেকটি শিরোপার সামনে। সেমিফাইনালে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে তারা। ৩ জুন ওয়েলসের কার্ডিফের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইতালির জুভেন্টাস। ইউরোপ সেরা এ লড়াইয়ের ফাইনালে আগে আলোচনা দুই দল নিয়ে। জুভেন্টাস এবার যে নৈপুণ্য দেখাচ্ছে তাতে শিরোপার জন্য তাদের পক্ষে বাজি ধরার লোকের অভাব হবে না। কিন্তু ফাইনালে যখন প্রতিপক্ষের নাম রিয়াল মাদ্রিদ তখন একটু ভাবনা মাথায় আসতে বাধ্য। ইউরোপের কয়েকটি মিডিয়া রিয়াল মাদ্রিদকে ‘কিং অভ দ্য ফাইনালস’ হিসেবে অভিহিত করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এই নিয়ে তারা ১৫বার ফাইনালে উঠলো।
ইউরোপের কোনো দল এত বেশিবার ফাইনালে ওঠেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১বার ফাইনালে উঠেছে ইতালির এসি মিলান। কিন্তু তারা ৭ শিরোপার বিপরীতে হেরেছে ৪ বার। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ ১৪ বার ফাইনালে উঠে হেরেছে মাত্র তিনবার। সেগুলো ছিল ১৯৬২, ১৯৬৪ ও ১৯৮১ সালে। এরপর তারা ফাইনালে উঠেছে পাঁচবার। প্রতিবার শিরোপা জিতেছে তারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে জুভেন্টাস, ১৯৯৯-২০০০ সালে ভ্যালেন্সিয়া আর ২০০১-০২ সালে বাার লেভারকুসেনকে ফাইনালে হারায় তারা। আর সর্বশেষ ২০১৩-১৪ ও ২০১৫-১৬ মৌসুমে তারা নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে শিরোপা জেতে তারা। এতে শেষ পাঁচবারের ফাইনালে প্রতিবার জিতেছে স্পেনের এ ক্লাবটি। জুভেন্টাসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে এর আগে মাত্র একবার খেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সেটা ছিল ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে। ১৯ বছর আগে সেবার জুভদের হারিয়ে শিরোপা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর জুভেন্টাস আরো দুইবার ফাইনালে উঠেছে। শিরোপার লড়াইয়ে দুইবারই হারে তারাÑ ২০০২-০৩ মৌসুমে এসি মিলান আর ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার কাছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে রিয়াল যেমন দুর্ধর্ষ ঠিক তার বিপরীত অবস্থা জুভেন্টাসের। ইউরোপ সেরা এ আসরে তারা মোট ৮বার ফাইনালে উঠেছে। কিন্তু শিরোপা জিতেছে মাত্র দুইবার। তাদের সর্বশেষ শিরোপা আসে ১৯৯৬ সালে আয়াক্সকে হারিয়ে। এরপর তিনবার ফাইনালে উঠলেও প্রতিবার হতাশ হতে হয় তাদের।
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বশেষ ৭ আসরে কমপক্ষে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আগের ৬ বারের দুইবার ফাইনালে উঠে শিরোপা জেতে। আর চারবার সেমিফাইনাল পার হতে পারেনি। কোচ হোসে মরিনহোর যুগে ২০১০ থেকে টানা তিনবার সেমিফাইনালে ওঠে তারা। কিন্তু সেই তিনবরাই শেষ চার থেকে বিদায় নিতে হয় রিয়ালকে। শেষ চারে ২০১০-১১ মৌসুমে বার্সেলোনা, ২০১১-১২ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে হারে তারা। তবে পরের মৌসুমে নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে নিজেদের দশম শিরোপা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু তার পরের মৌসুম তথা ২০১৪-১৫ মৌসুমের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের। সেবার তাদেরকে বিদায় করে দেয় এবারের ফাইনালের প্রতিপক্ষ জুভেন্টাস। এরপর সর্বশেষ গত মৌসুমে ১১তম শিরোপা জেতে স্পেনের এ জায়ান্ট ক্লাব। এখন ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা দুই শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়ার পথে তারা।