ঢাকা; সৌদি বাদশাহ ও দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে রিয়াদ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২১শে মে রিয়াদে অনুষ্ঠেয় আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাদশাহ সালমান সৌদ। বাদশাহ’র দূত হিসেবে ঢাকায় আসা সৌদি আরবের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ড. আওয়াদ বিন-সালেহ-আল আওয়াদ গত মঙ্গলবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং ঐতিহাসিক ওই সম্মেলনে অংশ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি মন্ত্রীর বৈঠক শেষে প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, বৈঠকে সৌদি মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। বৈঠকে জঙ্গিবাদের বিষয়টি এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু বাংলাদেশ যে এর মোকাবিলা করছে তা নয়, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তাঁর সরকার দেশে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ক্ষত দূর করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি এবং তারা আমাদের প্রতিটি কাজেই সহযোগিতা করছেন।’ তিনি বলেন, এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চিরতরে নির্মূল করতে যে কোনোমূল্যে এর অর্থ এবং অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। গুটিকয়েক লোকের খারাপ কাজের জন্য সমগ্র বিশ্বে ইসলামের বদনাম হচ্ছে। সৌদি মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসের কারণে গত কয়েক বছরে ইরাকে ৯ লাখ এবং সিরিয়ায় ৬ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছে এই অঞ্চলের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি মন্ত্রীর সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এবং ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচএম আল মুতাইরি উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বাদশাহ্র বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রিয়াদ সফর বাস্তবায়নে প্রস্তুত সেগুনবাগিচা। মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা এরই মধ্যে সফর প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতে কার্যকরি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে সরকার প্রধানের সফরটি বহুপক্ষীয় আয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকছে, নাকি এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উপাদান যুক্ত হবে অর্থাৎ সৌদি নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বা আলোচনা হবে কি-না? গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো সূত্রই তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, জানুয়ারিতে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ডনাল্ড ট্রাম্প এবং মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বলে বার্তা পেয়েছে ঢাকা। ইসলামের নামে বিশ্বের দেশে দেশে চরমপন্থার উত্থান-চেষ্টার এই সময়ে সৌদির এ উদ্যোগের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে। সঙ্গত কারণেই সেখানে অংশ নেয়া বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ের সুযোগ ঘটবে। আরব নিউজসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আসন্ন রিয়াদ সম্মেলনকে আমেরিকার পরিবর্তিত নেতৃত্বের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের বিশেষত: গাল্ফ রিজিওনের বোঝাপড়ার বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসলাম ফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে প্রচার পাওয়া প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইসলামের পবিত্র স্থান সৌদি আরব দিয়েই মুসলিম বিশ্বে তার সফর শুরু করতে যাচ্ছেন এমন মন্তব্য করে একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে-ওই সম্মেলনে জর্ডানের বাদশাহ, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট, নাইজারের রাষ্ট্রপ্রধান, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট, মরোক্কোর রাজা অংশ নিচ্ছেন। সেখানে তুরস্ক, পাকিস্তান, ইরাক ও তিউনিসিয়ার শীর্ষ নেতারাও আমন্ত্রিত। শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সভা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি নেতৃত্বের মধ্যকার পৃথক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হতে পারে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের আভাস দিয়েছেন। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব ও ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও জোরদারের আশা করছেন আয়োজকরা। এ সম্মেলন সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, আরব ও ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে চলমান সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করার সুযোগ এনে দেবে বলেও আশা করা হচ্ছে।