টুঙ্গিপাড়ায় দেশের প্রথম উচ্চ ফলনশীল ব্রি ৫-এর চাষ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি খুলনা

141005c

 

 

 

 

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ; দেশে প্রথমবারের মতো ব্রি ৫ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করা হয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। কৃষকরা একইসঙ্গে এই ধানের বীজও উৎপাদন করেছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা মনে করেন দেশে যেসব উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করা হয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে এই ব্রি ৫ জাতের ধানের।

এ বছরই প্রথম জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী সরদারপাড়ায় দুইজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এ ধানের সফল চাষ করেছেন। তাদের দেখাদেখি অন্য কৃষকরা আগামী মৌসুমে এ জাতের ধান চাষের আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট এটি উদ্ভাবন করেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গাজীপুরের পরিচালক (প্রশাসনা ও সাধারণ পরিচর্যা), ড. মো. জাহাঙ্গীর কবীর জানান, প্রতিবছর দেশে কোটি কোটি টাকার হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানি হয়ে থাকে। দেশেই যদি কৃষকরা তাদের প্রয়োজনমতো হাইব্রিড ধানের বীজ উৎপাদন করতে পারেন তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বিদেশে পাঠাতে  হবে না। এ জাতের ধান হেক্টরপ্রতি  উৎপাদন ৯ টন বা একরে ৯০ মণ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই ধানের চাল শতকরা ৯ ভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ। ভাত হয় ঝরঝরে এবং সুস্বাদু। বীজতলা থেকে শুরু করে ১৪৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারেন। দেশি ও বিদেশি  যেকোন হাইব্রিড ধান থেকে এর উৎপাদন বেশি এবং কৃষক নিজেই এ ধানের বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। ফলে তাদের আর বীজধান ক্রয় করতে হবে না।  তিনি আরো জানান, গত বছর ২০১৬ সালে ধানটি জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অনুমোদন পেলেও চলতি বোরো মৌসুমেই প্রথম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এ জাতের ধানের আবাদ করা হয়।

ব্রি ৫ উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা টুঙ্গিপাড়ার কৃষক বাকা শেখ ও জালাল শেখ বলেন, “ব্রি ৫ জাতের ধানের চাষ করে আমরা লাভবান হয়েছি। ফলন হয়েছে ভালো। অন্যান্য হাইব্রিডের তুলনায় এই ধান বিঘাপ্রতি পাঁচ মণ বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগের স্যারদের কথামতো আমরা পরীক্ষামূলক এই চাষ করে ভালোই ফল পেয়েছি। আমাদের দেখাদেখি এলাকার অন্যান্য কৃষকরা আগামী বোরো মৌসুমে এ জাতের ধানের চাষ করবেন বলে আমাদের কাছে বলেছেন। ”

টুঙ্গিপাড়ার ধানচাষি আমজাদ আলী শেখ বলেন, “আমরা ব্রি ২৮ বা ২৯ ধান চাষ করে থাকি। তার থেকে এই ধানটি ভালো মনে হয়েছে। আমাগীতে আমরা এই ধান চাষ করব বলে মনস্থ করেছি। সরকার যদি আমাদের বীজের ব্যবস্থা করেন তাহলে আমরা আগামী বছর এই ব্রি ৫ ধান চাষ করব। শুধু আমজাদ আলী নয় একই ধরনের আশা ব্যক্ত করেছেন টুঙ্গিপাড়ার দেবাশীষ বালা, সন্তোষ বিশ্বাস,  জাকির হোসেন শেখ, ইস্রাফিল মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন কৃষক।

ভাঙ্গা ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মাদ আমির হোসেন বলেন, “দেশীয় আবহাওয়ায় উদ্ভাবিত বিধায় এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং এ জাতের ধান থেকে স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব এবং কৃষক ইচ্ছা করলে বাণিজ্যিকভাবে বীজ উৎপাদন করে  লাভবান হতে পারে। এ জাতের ধানের চাল চিকন ও ভাত ঝরঝরে হয়। এর আবাদ যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিভিন্ন কম্পানির  বিদেশি হাইব্র্রিড ধানের বীজ আমদানি হ্রাস পাবে।

নতুন জাতের এই ব্রি ৫ ধানের চাষ ও বীজ উৎপাদন করতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে টুঙ্গিপাড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এই ধানকাটা উপলক্ষে মঙ্গলবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শেখ রাসেল শিশুপার্কসংলগ্ন মাঠে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। টুঙ্গিপাড়ার কৃষকদের ব্রি ৫ জাতের ধানচাষের পদ্ধতি ও এ জাতের ধানের বীজ উৎপাদনের কলাকৌশল ও গুণাগুণ সম্পর্কে বিশেষ ধারণা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. শাহজাহান কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেন বরিশাল ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলমগীর হোসেন, গাজীপুর ধান গবেষণা  ইন্সটিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. খায়রুল আলম ভূঁইয়া,  পিরোজপুর,গোপালগঞ্জ বাগেরহাট সমন্বিত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রিয়লাল বিশ্বাস এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মাদ আমির হোসেন।

প্রশিক্ষণ শেষে অনুষ্ঠানস্থলে চাষ করা ব্রি ৫ ধান কেটে মাড়াই করে ফলন পরিমাপ করা হয়। আগামীতে দেশীয় এ ব্র্রি হাইব্রিড ধান ৫ জাতের আবাদ বাড়িয়ে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন এমনটি প্রত্যাশা করেন উপস্থিত কৃষি বিজ্ঞানীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *