এ কোন গোঁড়ামি, নিচু জাতের সঙ্গে কথা বললেই জরিমানা ৫০০

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

1037024_kalerkantho_pic

 

 

 

 

ফের উঁচু-নিচু জাতের ভেদাভেদি নিয়ে সামাজিক বয়কটের শিকার শালবনির কুড়িটি পরিবার৷ পানীয় জল থেকে চিকিৎসক, মুদি দোকান, সবেতেই উঁচুজাতের ফরমান জারি ৷ নিচু জাতের সঙ্গে কথা বললেই জরিমানা দিতে হবে পাঁচশো টাকা৷ পরিস্থিতির কারনেই আপাতত কোনঠাসা হয়ে শালবনীর পরিবারগুলি৷ প্রশাসনিক দফতরে লিখিত জানিয়েও মেলেনি সুরাহা৷ ঘটনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার পাথরাজুড়ি গ্রামের৷ মেদিনীপুর শহরে থেকে প্রায় কুড়ি কিমি দুরে এই গ্রাম৷ গোদাপিয়াশাল থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে কিলোমিটার পাঁচেক গেলেই এই গ্রাম পড়ে রাস্তার ধারে৷ এই গ্রামের দুটি প্রান্তে দুটি ভাগ হয়ে গিয়েছে বর্তমানে৷ যার একদিকে রয়েছে দেড়শোটি পরিবার নিয়ে দোলাইপাড়া, যাদের মধ্যে অনেকেই সাধারন পর্যায়ের, যারা নিজেদের উচ্চ সম্প্রদায়ের বলে মনে করেন৷ অন্যদিকে রয়েছে আদিবাসী ভুমিজ সম্প্রদায়ের কুড়িটি পরিবারের লোকজন, যেটাকে সিংহ পাড়া বলা হয়৷ এদের নিচু জাত বলে বর্তমানে অ্যাখ্যা দিয়ে সামাজিক বয়কটে রেখেছে পাশের দোলাইপাড়া৷

জানা গিয়েছে, গ্রাম থেকে পাঁচশো মিটার দুরে মাঠের মাঝে একটি মন্দির রয়েছে৷ গাছের তলাতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন ধরে পুজো দেওয়ার চল গ্রামবাসীদের৷ কয়েকমাস আগে এই মন্দিরে পুজো দেওয়াকে কেন্দ্র করেই দুই ভাগে বিভাজন ঘটেছে গ্রামবাসীদের৷ মন্দিরের কর্তৃত্ব নিয়ে দুই পাড়ার সংঘর্ষও হয়৷ সামাল দিতে আসতে হয়েছিল শালবনি থানার পুলিশকে৷ এরপরই সংখ্যাগুরু দোলই পাড়ার লোকজনের ফরমান জারি হয়৷ অভিযোগ, দোলাই পাড়ার লোকজন সিংহপাড়ার ভুমিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিচু জাত অ্যাখ্যা দিয়ে গ্রামের পরিষেবা থেকে বয়কট করা হয়৷ বলা হয় পানীয় পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে,সিং দের জমিতেও কোনো লোক সেচ দেবেন না,বা কাজ করবেন না৷ কোনও গ্রামীন চিকিৎসক সিংহ দের চিকিত্সা করবেন না ৷ এমনকি দোলাইদের কেউ সিংহপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেও পাঁচশো টাকা জরিমানা৷

সমস্ত দিক থেকে সামাজিক বয়কট হয়েছে প্রায় পঁচিশ দিন ধরে৷ দোলাই পাড়াতে রয়েছে স্থানীয় প্রধান শ্যামসুন্দর দোলাই৷ তিনিও নাকি দোলই পাড়ার পক্ষে হয়ে কাজ করছেন৷ পরিস্থিতি নিয়ে জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন গ্রামের সিংপাড়ার বাসিন্দারা ৷ কিন্তু সুরহা মেলেনি ৷ সমস্ত বয়কটে থেকে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন সিংপাড়ার দেড়শোর বেশি মানুষ ৷ স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিত সিং বলেন আমাদের নিচু জাত বলে উল্লেখ করে সামাজিক ভাবে বয়কটে রাখা হয়েছে৷ চাষের জমিতে জল দিতে বারণ করায় ধান মরেছে, তিল জমি শুকিয়ে যাচ্ছে৷ শারীরিকভাবে অসুস্থদের চিকিৎসা করতে দিচ্ছেনা গ্রামীন চিকিৎসকদের৷ এমনকি পাশের পাড়ার কেউ কথা বললে তার পাঁচশো টাকা জরিমানা বলে ঘোষনা করেছে৷

সিংহপাড়া ও দোলাই পাড়ার মাঝে রয়েছে একটি মুদির দোকান৷ দোকানের মালিক এক মহিলা শ্যামলী সিং বলেন আমার মুদি দোকান থেকেই সংসার চলে ৷ আমি এই পাড়ার লোকেদের জিনিস বিক্রি করেছিলাম বলে আমাকেও বয়কট করা হয়েছে ৷ কেউই কথা বলেনি আমাদের সঙ্গে , আসছেনা দোকানেও ৷ স্থানীয় প্রধান দোলই পাড়ার বলে সঙ্গে দিয়েছে উঁচুজাত দোলই পাড়ার ৷ এই বিষয়ে স্থানীয় কাশিজোড়া অঞ্চল প্রধান শ্যামসুন্দর দোলাই বলেন জাতিভেদ সমস্যা নয়,মন্দিরে পুজো করা নিয়ে সমস্যা ৷ তবে বয়কটের অভিযোগও মিথ্যা ৷ সমস্যা যেটা রয়েছে সেটা উদ্যোগ নিচ্ছি৷ এই ধরনের সমস্যা পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়নগড়েও দেখা দিয়েছে৷ সামাজিক ভাবে বয়কটে থাকা বেশ কিছু রুইদাস পরিবার জেলা শাসকের দফতরে এসে বিক্ষোভ দেখায় সম্প্রতি৷ সেই সমাধান করার আগে ফের শালবনিতে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *