মদ্যপ স্বামীকে সুপথে ফেরাতে স্ত্রীকে মুগুর উপহার!

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাবিশ্ব

130628drink

 

 

 

 

 

মাতাল স্বামীদের এবার বুঝি সাবধান হওয়ার সময় এসে গেল। নাহলে পিঠে মুগুরের বাড়ি খাওয়া একরকম অবধারিত। সম্প্রতি ভারতের এক মন্ত্রী যে নারীদের স্বামী মাতলামি করে তাদের স্ত্রীদের মুগুর উপহার দিয়ে আলোড়ন তুলেছেন। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ডয়চে ভেলে।
মাতাল স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচার এক অভিনব নিদান দিয়েছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপাল ভার্গব৷ এক গণবিবাহ অনুষ্ঠানে নববধুদের উপহার দেন কাঠের মুগুর৷স্বামী মদের নেশা না ছাড়লে মুগুরই কথা বলবে৷
নববিবাহিত দম্পতিকে উপহার দেওয়া সৌজন্যসূচক এক চিরাচরিত পারিবারিক তথা সামাজিক প্রথা৷ বিজেপি-শাসিত মধ্য প্রদেশের পৃথ্বিরাজ সিং চৌহান মন্ত্রিসভার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপাল ভার্গব নববধুদের অন্য ধরণের উপহার দেন যাকে এক কথায় অভিনব বলা যায়৷ কী সেই উপহার ? এই অক্ষয় তৃতীয়ার শুভদিনে তাঁর হোমটাউন সাগর জেলায় গারকোটা মফস্বল শহরে আয়োজিত এক গণবিবাহ অনুষ্ঠানে তিনি ৭০০ নববধুর হাতে তুলে দেন একটি করে কাঠের মুগুর, যা ধোপা বাড়িতে এবং গৃহস্থ বাড়িতে কাপড় কাঁচার কাজে ব্যবহার করা হয়৷ উপহারের নমুনা দেখে তো সকলের চোখ কপালে৷ কেন এই রকম উপহার ? সেটা মুগুরের গায়ে ছোট ছোট করে লেখা আছে৷ যেসব স্বামী আকন্ঠ মদ গিলে বৌকে পেটায়, অত্যাচার করে, তাঁদের শায়েস্তা করতে এই মুগুর দিয়ে মাতাল স্বামীকে পাল্টা মার দেওয়াটাই হবে মোক্ষম দাওয়াই৷ পুলিশ প্রশাসন তার জন্য কিছু বলবে না৷
কারণ ব্যাখ্যা করে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী বলেন, এই নিদান মহিলাদের তরফ থেকেই তাঁর কাছে আসে৷ যখনই তিনি তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্রের গ্রামে ও শহরে যান, তখন বহু গৃহবধু তাঁর কাছে এসে কাতর মুখে মাতাল স্বামীর নিত্যদিনের দৈহিক নির্যাতনের কাহিনী শোনায় এবং এর একটা বিহিত করার আবেদন জানায়৷ অনেক গৃহবধুর অভিযোগ, সংসার চালাতে তাঁরা বাইরে কাজ করে কিছু টাকা রোজগার করে৷ সেই টাকাটাও জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে স্বামী মদ খেয়ে উড়িয়ে দেয়৷ ওই গৃহবধুদের একজন জানতে চান–  এই মদের নেশা ছাড়াতে কি লাঠি পেটা করতে পারি স্বামীকে? পুরুষতন্ত্র নারী শক্তিতে বিশ্বাসী নয়৷ তাঁদের ধারণা, স্ত্রীমাত্রই দুর্বল৷  প্রস্তাবটা মন্ত্রিমহোদয়ের মনে ধরে৷ হাজার দশেক মুগুর বিতরণের নির্দেশ দেন৷ তবে বলে দেন প্রথমে স্বামীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মদের নেশা ছাড়াবার চেষ্টা করতে হবে৷ তাতে কাজ না হলে শেষ নিদান লাঠৌষধি৷ মন্ত্রীর মতে, এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই৷
মধ্যপ্রদেশের পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী মনে করেন, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কখনও কখনও কড়া ও তেতো ওষুধের দরকার হয়৷ পুলিশ বা প্রশাসনের একার পক্ষে এই ব্যাধি সারানো সম্ভব নয়৷ এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকে, পরিবারকে৷ ইতিহাস সাক্ষী, সমাজ এগিয়ে আসার ফলেই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে৷ বেআইনি মদ বিক্তি ভারতের প্রতিটি রাজ্যের সমস্যা৷ মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করার আগে দরকার সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষা৷
একই কথা বললেন নারীবাদী ও মহিলা অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জ্যোত্স্না চট্টোপাধ্যায়৷ তিনিও মনে করেন, স্বামী যদি স্ত্রী’র ওপর শারীরিক অত্যাচার করে, তা হলে মহিলাদের লাঠি ধরতে আপত্তি থাকবে কেন ? পাশাপাশি একটা আইনি সুরক্ষার জন্য পাশে রাখতে হবে জাতীয় মহিলা কমিশনকে৷ পাশে রাখতে হবে মানবাধিকারবাদীদের৷ সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে৷ এ যাবত মহিলারা অধিকার রক্ষায় একাই লড়াই চালিয়ে এসেছে, এখন সময় এসেছে নারী-পুরুষ একজোট হয়ে লড়াই করার৷
তবে সমাজ বিজ্ঞানীদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, পারিবারিক হিংসার জবাবে পাল্টা হিংসাকে সরকার যদি মেনে নেয়, তাহলে  সমাজকে সুসভ্য বলা যাবে কিনা সেই প্রশ্নটা থেকে যায়৷ বিহারের মতো কোনো কোনো রাজ্যে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ৷ কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় মহাসড়কের আশপাশে মদ বেচাকেনার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ তবে ইদানিং মহিলাদের, বিশেষ করে গৃহবধুদের ভোট টানতে রাজনৈতিক নেতাদের এটা একটা মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন৷ শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মদ্যপান কমবে এমনটাও মনে করার কারণ নেই৷ আরও একটা প্রশ্ন, স্ত্রী যদি মরিয়া হয়ে মদ্যপ স্বামীকে সহিংস আচরণের জন্য লাঠি পেটা করেন, তাহলে মদ্যপ স্বামীর পাল্টা সহিংসতা যে আরও মারাত্মক হয়ে উঠবে না, কে বলতে পারে? তাতে স্ত্রীর পারিপার্শ্বিক সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে বলে মনে হয় না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *