ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্যপন্থী প্রার্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রনের প্রচারণা শিবিরের ইমেইল হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছে রুশ হ্যাকারদের বিরুদ্ধে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও হ্যাকিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে নির্বাচনি প্রচারণা শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে একটি ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইটে ম্যাক্রন শিবিরের ওই ইমেইলগুলো ফাঁস করা হয়। ম্যাক্রনের প্রচারণা শিবির ওই ইমেইল ফাঁসের নিন্দা জানিয়েছে। ম্যাক্রন শিবিরের দাবি, রবিবারের নির্বাচনে ম্যাক্রনকে কোণঠাসা করার জন্যই ইমেইল ফাঁস করা হয়েছে।
ম্যাক্রন শিবিরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহ আগে ম্যাক্রন শিবিরের কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করা হয়। সেখান থেকেই ওই নথি হ্যাকাররা পেয়েছেন।
এ হ্যাকিংয়ের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত আছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ এর দায় স্বীকারও করেনি।
গত ২৬ এপ্রিল সাবেক অর্থমন্ত্রী ম্যাক্রনের প্রচারণা শিবির জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাদের ইমেইল হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। তবে হ্যাকাররা তা করতে সক্ষম হয়নি। ম্যাক্রন শিবির অভিযোগ করেছিল, ওই হ্যাকিং চেষ্টায় রাশিয়ার মদদ রয়েছে। তখন ক্রেমলিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
ম্যাক্রন শিবির রুশ সংবাদমাধ্যম ও ইউক্রেনে কার্যকর একদল হ্যাকারের বিরুদ্ধে আবারও অভিযোগ তোলে।
গত মাসে সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ড মাইক্রো জানায়, রুশ হ্যাকাররা এবার ম্যাক্রন শিবিরের ওপর সাইবার হামলা চালাতে পারে। তবে রুশ কর্তৃপক্ষ সে দাবি অস্বীকার করে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাশপয়েন্টের পরিচালক ভিতালি ক্রেমেজ জানান, এপিটি ২৮ নামের হ্যাকারদের একটি দল রুশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ-র সঙ্গে জড়িত। ওই হ্যাকাররা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ক্রেমেজ মনে করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবিরের ইমেইল হ্যাক করার জন্যও তাদের সন্দেহ করা হয়।
এর আগে মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবিরের হ্যাক করা ইমেইল ফাঁস করেছিল বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো বিকল্প গণমাধ্যম উইকিলিকস। তখন মার্কিন প্রশাসন ও ডেমোক্র্যাট শিবির দাবি করেছিল, এ ইমেইল হ্যাক করার সঙ্গে রুশ হ্যাকাররা জড়িত। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকেও উঠেছিল আঙ্গুল। তবে রাশিয়া প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
নয় গিগাবাইটের ওই ফাঁস হওয়া নথিতে কি কি তথ্য রয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এতে ইমেইল, আর্থিক ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নির্বাচনি তথ্য রয়েছে বলে ম্যাক্রন শিবির এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, প্রচারণার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর সংবাদমাধ্যম ও প্রার্থীরা আর কোনও বিবৃতি প্রকাশ করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের নির্বাচনি ব্যবস্থা অনুযায়ী,প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বে যদি কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট অর্জন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেন শীর্ষ দুই প্রার্থী। ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বের নির্বাচনে মধ্যমন্থী ম্যাক্রন পেয়েছেন ২৩.৭৫ শতাংশ ভোট। অপরদিকে, উগ্র-ডানপন্থী লে পেন পেয়েছেন ২১.৫৩ শতাংশ। তারাই লড়ছেন ৭ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফার ভোটে।