এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বিল চান্দার মধ্যে পাটকেলবাড়ি গ্রাম। সে গ্রামে কয়েক পুরুষ থেকে বসবাস করে আসছেন হরিপদ বিশ্বাস। গেরস্থ পরিবার বলতে যা বুঝায় তিনি তাই। বিলে বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবছর ৪-৫ লাখ টাকা আয় হয়। বিলের মধ্যে এ বছর ৮ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে ছিলেন তিনি। প্রতি বছরে তিনি অন্তত ৫শ’ মন ধান পান সেখান থেকে। এ বছর ধানের ফলনও ভাল হয়ে ছিল। আশা ছিল ভাল ধান পাবেন কিন্তু তার সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। কপাল চাপড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। তার প্রায় সব জমির ধানই নাকি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি জানান, ধান কাটা শ্রমিকের সংকটের কারণে সেখান থেকেও ধান কেটে উঠানে নিতে পারছেন না। স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের ৯ সদস্য। আগামীতে দিন কি ভাবে কাটবে তা নিয়ে তিনি অনেক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এমন অবস্থা শুধু পাটকেলবাড়ি গ্রামের হরিপদ বিশ্বাসের একার নয়। এ অবস্থা বিল চান্দা এলাকার শত শত কৃষকের। বিল চান্দা এলাকার ৪৪টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
গোপালগঞ্জের বৃহত্তম বিল চান্দাসহ অন্যান্য বিলে অন্তত ৬শ’ হেক্টর জমির বোরো ধান জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ধান এখন পানিতেই পচে যাচ্ছে। আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে অনেক কৃষকই জমির ধান গজিয়ে যাওয়ায় তা আর কাটতে যাচ্ছেন না। কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানিতে ভাসছে। প্রতি বছর জোয়ারের পানি থেকে তাদের কষ্টের ফসল রক্ষা করতে বিলের চারপাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, আর প্রয়োজনীয় স্লুইস গেট নির্মাণের দাবী এলাকার সাধারন কৃষকদের।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গোপালগঞ্জে এ বছর ৭৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের উৎপাদনও ভাল লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। বেশির ভাগ জমির ধানেই আধা পাকা অবস্থায় ছিল। মনের সুখে পাকা ধান কাটবেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বিল এলাকায় বোরো ধান কাটতে ধানকাটা শ্রমিকেরাও এসে গিয়ে ছিলেন কিন্তু বিধি বাম, কৃষকের মুখে হাসি ফোঁটার আগেই তাদের স্বপ্নের ধান জোয়ারের পানিতে, আর সেই সাথে টানা ৪ দিনের বর্ষণে তলিয়ে গেছে।
মুকসুদপুর উপজেলার পাটকেল বাড়ি গ্রামের সুরেশ বিশ্বাস (৫৫), মনোরঞ্জন বিশ্বাস (৫৮), পবিত্র মন্ডল (৪০), মহাটালী গ্রামের সিতাংশু মন্ডল জানান, তাদের স্বপ্নের সোনালী ধান এখন পানিতেই তলিয়ে গেছে। আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কেউ কেউ। জোয়ারের পানি থেকে তাদের কষ্টের ফসল রক্ষা করতে বিলের চারিপাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, আর প্রয়োজনীয় স্লুইস গেট নির্মাণের জোর দাবী জানাচ্ছেন তারা।
জোয়ারের পানি ও টানা বর্ষণের ফলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির সত্যতা স্বীকার করে গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য অশোক বিশ্বাস, উজানি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ বৈরাগী। বিল এলাকায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করে (বিসিএএস) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গবেষণা কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র টিকাদার, গোপালগঞ্জের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হরলাল মধু কৃষকদের সাথে তাল মিলিয়ে এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের উপর জোর দিলেন।
ফি বছর জোয়ারের পানি থেকে তাদের কষ্টের ফসল রক্ষা করতে বিলের চার পাশে বেড়ি বাঁধ নির্মান, আর প্রয়োজনীয় স্লুইস গেট নির্মানের দাবী এলাকার সাধারন কৃষকদের।