ব্যবসায়ী ও অর্থমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি

Slider অর্থ ও বাণিজ্য সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

024300Finance-Minister_kalerkanto

 

 

 

 

 

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। অর্থমন্ত্রীকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছে, তাদের দাবি না মেনে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে ছাত্রদের মতো রাজপথে আন্দোলনে নামবে তারা। অর্থমন্ত্রী আবার পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আন্দোলন করে কিছুই হবে না। আন্দোলন দমন করা হবে। ’ জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেছে, ‘আপনি মন্ত্রী হয়ে এভাবে হুমকি দিতে পারেন না। আমরা এই আইন মানব না। কোনো আলোচনা নয়, আমরা আন্দোলনেই সমাধান চাই। ’ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আপনারা দুই-তিন বছরের জন্য এসে ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। আপনাদের বক্তব্যে হুমকি-ধমকি থাকে। ’ জবাবে এমবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষমতা নয়, আমরা দায়িত্ব পালন করি। ’

গতকাল রবিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় এ রকম উত্তপ্ত বাগিবতণ্ডা হয়। সভার শেষ দিকে নতুন ভ্যাট আইনের পক্ষে এনবিআর চার পৃষ্ঠার একটি প্রচারপত্র দেয় উপস্থিত ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের। সেখানে হিসাব করে দেখানো হয়েছে, নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাট তো বাড়বেই না, উল্টো ক্রেতার ওপর ভ্যাটের চাপ কমবে আর ব্যবসায়ীরা যেহেতু রেয়াত পাবে, তাতে তারাও লাভবান হবে। কিন্তু ওই প্রচারপত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ এনবিআর যে হিসাব দেখিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এখন একটি পণ্যের যে মূল্য রয়েছে, তার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পরও পণ্যটির একই মূল্য থাকবে। কিন্তু এটি বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে পণ্যমূল্য নির্ধারণের সময় অবশ্যই এখনকার চেয়ে মূল্য বাড়িয়ে ধরবে ব্যবসায়ীরা।

এভাবে তুমুল বাগিবতণ্ডা, যুক্তিতর্ক ও হট্টগোলের মধ্য দিয়ে নতুন ভ্যাট আইন সংশোধনে ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।

গতকাল এনবিআরের পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় ‘মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ সংশোধন না করে বাস্তবায়ন করা হলে রাজপথে আন্দোলনের হুমকি দেন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব। তিনি যখন ধারালো কণ্ঠে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন, তখন সভায় উপস্থিত বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন নেতারা জোরে জোরে হাততালি দিয়ে সমর্থন করছিলেন। হাততালির রেশ কাটার আগেই নিজের মাইক্রোফোন অন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে  রাগতস্বরে বললেন, ‘যে ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়, তার মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান কয়টা আছে? আন্দোলন করে কিছুই হবে না। আন্দোলন দমন করা হবে। ’

ছোট ছোট এই তিন বাক্যের বক্তব্য অর্থমন্ত্রী শেষ করার আগেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ী নেতারা। কয়েকজন নেতা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে বলতে থাকেন, ‘আপনি মন্ত্রী হয়ে এভাবে হুমকি দিতে পারেন না। আপনি দমনের ভয় দেখাচ্ছেন। আমরা এ আইন মানব না। আমরা আলোচনা করতে চাই না, আন্দোলনেই সমাধান চাই।

একসঙ্গে বহু ব্যবসায়ী নেতার প্রতিবাদ থামাতে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। তাতেও ক্ষোভ কমছিল না ব্যবসায়ীদের। পরে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাজেট এখনো হয় নাই। সরকার ভ্যাট নিয়ে কী করছে, তা আমরা এখনো দেখি নাই। আশা করি, আমাদের ওপর সরকার কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না। আপনারা শান্ত হন। ’ তাঁর এ বক্তব্যের পর আবারও হাততালি দিয়ে নীরব হন উত্তেজিত ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ব্যস্ততার কথা বলে অনুষ্ঠান শেষের আগেই নিজের বক্তব্য দিয়ে বিদায় নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় আগের বক্তব্যের রেশ টেনে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন, দেশ বন্ধের কথা বলছেন। এখানে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা মোটেই ঠিক হয়নি। সরি টু সে। এখানে আলোচনা করতে এসেছি। যুদ্ধের হুমকি দেওয়া ঠিক হয়নি। ’

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর ভ্যাট আরোপ করেছিল সরকার। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন অর্থমন্ত্রী। ওই আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এফবিসিসিআই পরিচালক ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা আবু মোতালেব ভ্যাট আইন সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা এখন পরামর্শ করছি। একটু পরে চলে যাব। কিন্তু বাজেট যখন ঘোষণা করা হবে, তখন হতাশ হব। গতবার আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি। এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ভ্যাট আইন নিয়ে ১৮টি সভা করেছেন। আমরা প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার দাবিতে রাজপথেও নেমেছি। খুবই সংকটময় সময় পার করছি। যদি আবারও ছাত্রদের মতো রাজপথে নামতে হয়, তাহলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব, আপনারাও হবেন। ’

মোতালেব বলেন, ‘ভারত-চীন থেকে হু হু করে পণ্য দেশে ঢুকছে। বন্ড সুবিধার পণ্যও বাজারে আসছে। এ অবস্থায় সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখা হচ্ছে, প্যাকেজ ভ্যাট থাকছে না। ভ্যাট আইন নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আইএমএফ অর্থ দিয়েছে। দেশে ৩৭৭টি অ্যাসোসিয়েশন ও ৬৭টি চেম্বার রয়েছে। এনবিআর তাদের একজনকেও প্রশিক্ষণ দেয়নি। লোক দেখানোর জন্য এফবিসিসিআই থেকে সাত-আটজনকে ডেকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের ট্রেনিং না দিয়ে কিভাবে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে? এখনো সময় আছে, ভ্যাট আইন সংশোধন করুন। ’

আন্দোলন দমনে অর্থমন্ত্রীর হুমকিতে ব্যবসায়ীদের পাল্টা চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলনের হুমকি দেবেন না। এটা উচ্চপর্যায়ের ফোরাম। এখানে ব্যবহারের একটা ভাষা আছে। ’

তার আগে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ সরকার ব্যবসাবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নের নীতি রেখে ব্যবসাবান্ধব, করবান্ধব, উৎপাদনমুখী বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করছে। নতুন যে ভ্যাট আইন হবে, অর্থমন্ত্রী তিনটি সভা করে সে সম্পর্কে প্রস্তাব শুনেছেন। প্রতিটি প্রস্তাবই তিনি বিবেচনায় রেখেছেন। বাজেট প্রস্তাবকালে তিনি নিজের অবস্থান তুলে ধরবেন। ’

ভ্যাট আইন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসাবান্ধব, জনবান্ধবের দিক তুলে না ধরে কিছু কিছু মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভ্যাট আইনের সবচেয়ে সবল দিক হলো এটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে। কর কর্মকর্তারা কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবেন না, ব্যবসায়ীদেরও কর অফিসে আসতে হবে না। ফলে হয়রানি থাকবে না। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ভ্যাট আইন দ্রব্যমূল্যের ওপরও কোনো প্রভাব ফেলবে না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, নতুন ভ্যাট আইন পুনঃনিরীক্ষা করে সুপারিশ করার জন্য গঠিত যৌথ কমিটির সাত দফা সুপারিশ ও ওয়ার্কিং কমিটির যৌথ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিচ্ছে। আমরা নতুন ভ্যাট আইনের বিপক্ষে নই, কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন করা না হলে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব ও বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের সুপারিশের আলোকে ভ্যাট আইন ও বিধি সংশোধন করে বাস্তবায়ন করা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের জন্য অপরিহার্য, যাতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয়।

লিখিত প্রস্তাবে ভ্যাট আইন নিয়ে তিনি বলেন, সকল সরবরাহ (উৎপাদন, ব্যবসা ও সেবাদান) এর ক্ষেত্রে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি দিতে হবে। বর্তমানে তা ৩০ লাখ পর্যন্ত রয়েছে। ৩৬ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি। ব্যবসায়ী বা দোকানদারের জন্য ৩৬ লাখ টাকার ওপরে টার্নওভার নির্বিশেষে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়ার প্রস্তাব তাঁর। উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণে অসমর্থ প্রতিষ্ঠানের ওপর হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট আরোপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি সেবা খাতের স্বার্থে ১৫ শতাংশের বদলে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট নির্ধারণ জরুরি, বলেন তিনি।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে ১৫২০টি পণ্য ও সেবার মধ্যে ১৩৫০টি পণ্য ও সেবা আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক উঠে যাবে। এতে দেশের বাজারে বিদেশি পণ্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে এবং দেশি শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ কারণে বর্তমানে যেসব পণ্য ও সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা আছে তা অব্যাহত রাখা বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপসহ অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) নীতির কারণে যেসব দেশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, তারা বিদেশি পণ্যের সয়লাব ঠেকিয়ে দেশি শিল্পের সুরক্ষায় এন্টি ডাম্পিং শুল্ক ও কাউন্টারভেইলিং শুল্ক আরোপসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলে দেশি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্তত কর্মসংস্থানের স্বার্থে হলেও দেশীয় শিল্পের স্বার্থ দেখতে হবে। প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমানোরও প্রস্তাব করেন তিনি।

উেস ভ্যাট কর্তনের সমালোচনা করে বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, একজন ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণ নিলে তিনি পান ১৮ কোটি টাকা। নতুন ভ্যাট আইনে ২৭ ক্ষেত্রে এভাবে উেস ভ্যাট নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ৩০টি খাতের বিভিন্ন পণ্য আমদানির ওপর ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক বহাল আছে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে এসব পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক থাকবে না। তখন দেশি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার হলে দেশি শিল্পের সুরক্ষা প্রয়োজন। এটা নিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছি। দেশীয় শিল্প বাঁচাতে হলে হয়তো ভ্যাট আইনটাকেও (সংশোধনের) বিবেচনা করতে হবে। ’

উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমাদ বলেন, নতুন আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের কথা বলা আছে। অথচ আমরা ব্যবসার খরচ কমাতে সব ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অঙ্ক) আসছি। তাই ভ্যাটের হারও এক অঙ্কে (১০ শতাংশের নিচে) নেমে আসা উচিত।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের রেয়াত পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ভোক্তা যে ভ্যাট পরিশোধ করে অর্থ দিয়ে পণ্য কিনল, তা কি ফেরত পাবে? তা তো সম্ভব নয়। ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় নতুন ভ্যাট আইনে কী পদক্ষেপ রাখা যায়, তা ভেবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামট্যাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও কোনো চালানপত্র দিচ্ছে না। ফলে কম্পানিগুলো রেয়াত সুবিধাও ভোগ করতে পারছে না। ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট ও কর তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

তবে এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে অবদান থাকলেই যদি কর ও ভ্যাটমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে রাজস্ব দেবে কে?

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, ‘টার্নওভার ট্যাক্স পাঁচ কোটিতে উন্নীত করা প্রয়োজন। আমরাও ভ্যাট দিতে চাই, দিচ্ছিও। ভোক্তারা ভ্যাট পরিশোধ করছে। ভ্যাটের হার কত, সেটা বড় বিষয় নয়। নতুন ভ্যাট আইন যাতে দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব না ফেলে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। এই আইনের ফলে যাতে প্রতিটা স্তরে স্তরে মূল্যবৃদ্ধি না হয়, সেটা দেখতে হবে। ’ তিনি বলেন, ইসিআর মেশিন দিয়ে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কি না, সেটা ভাবতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব দোকানে এই মেশিন ব্যবহার করতে বাধ্য করা যাবে কি না, তাও দেখতে হবে।

মাতলুব আহমাদের স্বাগত বক্তব্যের পর ভ্যাট আইন নিয়ে ক্রেতাদের সচেতনতামূলক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করে এনবিআর। সেখানে দেখা যায়, একজন ক্রেতা মিষ্টির দোকান থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে মিষ্টি কিনে রাস্তা পার হবেন। রাস্তায় ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তখন পাশে থাকা এক যুবক তাঁকে বলেন, ফুট ওভারব্রিজ আপনার মিষ্টির প্যাকেটের মধ্যেই আছে। পরে যুবক মিষ্টির ক্রেতাকে নিয়ে যান মিষ্টির দোকানে, সেখানে গিয়ে ক্রেতাকে বলেন, আপনি যে টাকায় মিষ্টি কিনেছেন, তাতে সরকারকে আপনি দিয়েছেন ৪৫ টাকা। কিন্তু আপনাকে দোকানদার চালান না দেওয়ায় ওই টাকা দোকানদারের পকেটে রয়েছে। এভাবে বছরে ওই দোকানদার ১৬ লাখ টাকা মেরে দিচ্ছেন, তা দিয়ে তিনি আরো তিনটি দোকান করেছেন। অথচ ওই টাকা সরকার সঠিকভাবে পেলে দুটি ফুট ওভারব্রিজ করা যেত। ওই সময় ভিডিওতে মিষ্টির দোকানদার হিসেবে দেখানো ব্যবসায়ীকে মাথা নিচু করে বিব্রতবোধ করতে দেখা যায়।

এনবিআরের পরামর্শক কমিটির সভা দীর্ঘক্ষণ হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্থমন্ত্রী চলে গেলে সভায়ও বিদায় ঘণ্টা বাজতে থাকে। সভার শেষ বক্তা হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এনবিআরের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাজ আন্দোলন-মানববন্ধন করা নয়। আমাদের কাজ উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এনবিআর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যে পার্টনারশিপের কথা বলে, সেখানে আস্থার জায়গা আরো সুসংহত করতে হবে। একে-অন্যের বিরোধিতা করলে চলবে না। ’ এনবিআরের কর্মকর্তাদের ইঙ্গিত করে সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আরো বলেন, ‘আপনি দুই-তিন বছরের জন্য এখানে আসছেন, পাওয়ার প্র্যাকটিস করছেন (ক্ষমতা দেখাচ্ছেন)। এটা খুবই টেমপোরারি (অস্থায়)। ’

তখন এনবিআর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, ‘পাওয়ার নয়, রেসপনসিবিলিটি (দায়িত্ব)। ’ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্যের মধ্যে থ্রেট (হুমকি) আছে। সব মিষ্টির দোকানদার ক্রিমিনাল না। কিন্তু ভিডিওতে আপনারা মিষ্টির দোকানদার ক্রিমিনাল বানিয়েছেন। ’

এ পর্যায়ে মাইক্রোফোন ছাড়াই নিজেদের মধ্যে বাক্যবিনিময় করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর ও মহিউদ্দিন। মিনিটখানেক পর মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই না উসকানিমূলক বা অনভিপ্রেত কিছু হোক। ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *