মফস্বল সাংবাদিকদের উন্নয়নে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গ্রামবাংলা নিউজেরএক সাংবাদিকের খোলা চিঠি

Slider খুলনা জাতীয় বিনোদন ও মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

Gopalgonj Photo-5(1)

 

 

 

 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বড় কষ্ট ও বেদনা নিয়ে আপনার উদ্দেশে এই নিরুপায় কলম তুলে নিয়েছি। শুরুতেই না বললে নয় বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের বিস্ময়। আর এই বিস্ময় বাংলাদেশের ম্যাজিকের রূপকার আপনি বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য সরকার কর্র্তৃক সুবিধা প্রদান করে এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা প্রনয়ন করে আরেকটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবেন বলে আশা রাখি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তৃতীয় বিশ্বের একজন অসহায় মফস্বল সাংবাদিকের ফরিয়াদ পৌঁছানোর উপায় হয়তো একমাত্র গণমাধ্যমই। আমার এই ফরিয়াদ আপনার কাছে আদৌ পৌঁছাবে কিনা, এই লেখাটি আপনি পড়বেন কিনা, আপনাকে কেউ বলবে কিনা, আপনার টেবিলের দৈনন্দিন পেপার ক্লিপিংয়ে এর স্থান হবে কিনা আমি জানি না। তবু কবি কামাল চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত পক্তিমালা’ কবিতা ‘তুমি পড়বে না জানি তবু এই চিঠি পাঠিয়ে দিলাম’ স্মরণ করে এই লেখাটি লিখছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার বাড়ি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত মধুমতির পাড়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট শহর গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নে কাঠি গ্রামে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি, বর্তমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কান্ডারী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অসম সাহসী নেত্রী। আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা। পৃথিবীর সর্বহারা দুঃখী মানুষের একজন। সীমাহীন কষ্টের বিশাল পাহাড় বুকে নিয়ে কী ভীষণ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আপনার পথচলা..লড়াই আর সংগ্রাম। পিতা, মাতা, ভাই, ভ্রাতৃবধূ আর স্বজন হারানো এই বধ্যভূমির বেদনাশুর মোছাতে, সত্যিকার গণতন্ত্রের ফুল ফোটাতে, তৃণমূলই মুক্তিযুদ্ধের আঁতুড়ঘর। গণতন্ত্রচর্চার উর্বর জমিন। সেখানে এসিড ঢেলে নয়, খাঁটি জল ছড়িয়েই গণতন্ত্রের সবুজ গোলাপ ফোটাতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতা। সংবাদপত্রের দায়িত্ব এবং গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সভ্যতার অন্যতম খুঁটি সংবাদপত্রের অভাবে সভ্যতার রথচক্র থেমে যেতে পারে। রাজনৈতিক দ্বন্দ সংঘাত, সংঘর্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্পসহ নানা খবর মানুষের দরবারে পৌঁছে দেয় সংবাদপত্র। যার চলার পথে কোন বিরাম নেই, অহোরাত্র জাগ্রত থেকে সুখ-দুঃখের পাঁচালির খোঁজে ছুটে অবিরত। আদর্শিক মতভেদ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, প্রেম-বিরহ, বিবেক কার্যকলাপে সংবাদপত্রই আমাদের শুভ বুদ্ধি জাগরণের মহৎ প্রেরণা। সমাজের উপর যখন অশুভ শক্তির ছায়া পড়ে, অত্যাচারীর খড়গ-কৃপাণ যখন ভীম রণভূমে রণিত, যখন দিকে দিকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিজয় দম্ভ, রণ হুংকার, রক্তোম্মাদনা, যুদ্ধের করাল বিভীষিকা সভ্যতাকে গ্রাস করে তখন সংবাদপত্রই মানবতা বিরোধী হিংস্্র ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। দেশ-বিদেশের আনাচে-কানাচে গড়ে তোলা প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ধিক্কার ধ্বনিতে সোচ্চার হয় বিশ্ববাসী, গণবিক্ষোভের পটভূমি হয় জোরালো ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সংবাদপত্রই আমাদের সুদূরের আকাংখা পরিতৃপ্তি, আধুনিক জীবনের অতন্ত্র প্রহরী। নির্ভীক আদর্শিক সংবাদপত্র অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সমীহ করে না, করে না কারো সাথে আপস। গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত সৈনিক এই সংবাদপত্র সমাজের সকলের কথা বলে। সাধু বেশী সভ্য জগতের পরিচালনাকারীদের স্বরূপ করে দেয় উন্মোচন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাঙালির জাগরণের মূলে সংবাদ সাময়িক পত্রের একটি বড় ভূমিকা ছিল। সেকালের বাংলার ক্ষমতা কেন্দ্র কলকাতা মহানগরী কিংবা পূর্ববঙ্গের প্রধান শহর ঢাকার বাইরে থেকেও উনিশ শতকের অনেক সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ সব সাময়িক পত্রে যেমন দূরবর্তী মফস্বল শহর থেকে আবার তেমনি কখনো কখনো প্রত্যন্ত পল্লী গ্রাম থেকেও বেরিয়েছে। অবশ্য এর বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরও অনেক পত্রিকা বের হয়েছিল। এইসব পত্রিকার কোনোটি ধর্ম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছে, কোনটি সমাজ-সংস্কারের বাসনায় উদ্বুদ্ধ। মেয়েদের জন্য পত্রিকা যেমন বেরিয়েছে, তেমনি বেরিয়েছে মুসলমানদের অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরার জন্য। বাঙালির মনকে বিজ্ঞানমুখী করে তোলার জন্য প্রকাশিত হয়েছে একের পর এক পত্রিকা। তখন সংবাদ সংগ্রহের উৎস ছিল নিউজ এজেন্সি থেকে টেলিপ্রিন্টারে আসা সংবাদ এবং সংবাদকর্মীদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে। সিসার টাইপে হাতে কম্পোজ করে প্রকাশনার কাজ করা হতো। টেলিপ্রিন্টারের সর্বশেষ সংবাদের জন্য সংবাদকর্মীরা চাতকের ন্যায় অপেক্ষা করত। সর্বশেষ সংবাদ-সংগ্রহ করে হাতে কম্পোজ করিয়ে গ্রুফ দেখে প্রেসে পাঠানোর পর তারা বাড়ি ফিরত। মধ্যরাতে বাড়ি ফেরা ছিল সংবাদকর্মীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ঘটনা। বর্তমানে এর বিপরীত। ঘরে বসে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেক কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়। ক্ষেত্রে বিশেষে চলন্ত অবস্থায়ও চলে সংবাদ আদান প্রদান প্রক্রিয়া। অতীত এবং বর্তমান দুই সময়ে একটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ দেশের সামগ্রিক দুর্যোগপূর্ণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভয়াবহ নানা ঘটনায়ও সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় লক্ষ্য করা যায়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সমালোচনা যতই থাকুক না কেন সাংবাদিকতাকে বলা হয় মহান পেশা। আর এ ক্ষেত্রে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যু ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে হয় সাংবাদিকদের। আর মৃত্যু ঝুঁকির বিষয়টি একেবারে জেনে বুঝেই আসে। যখন কোনো সাংবাদিক সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি বা যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধের ঘটনা কভার করেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তারা শুধু সর্বশেষ সংবাদই পাঠান না, প্রেরণ করেন যুদ্ধের ছবিও। তাদের সংবাদ আর ছবিগুলো শুধু যুদ্ধচিত্রই নয়, ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অসামান্য মর্যাদা লাভ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে ক’জন সফল ক্যামেরা যুদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র সেলুলয়েডে বন্দী করেছিলেন তাদের একজন ‘কিশোর পারেখ’। কোনো সংবাদ সংস্থার নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট ছাড়াই তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলেছিলেন। মাত্র আট দিনে তার তোলা ৬৭টি ছবি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে গেছে। এই সাহসী সাংবাদিককের জন্ম ১৯৩০ সালে ভারতে। ১৯ বছর বয়সে প্রথম হাতে ক্যামেরা তুলে নেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কর্মরত অবস্থায় তিনি দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করে। তার প্রেরিত সংবাদগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেই খবরগুলো শুধু বস্তুনিষ্ঠই ছিল না মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক শক্তি বাড়ানোর কাজেও উদ্দীপনা মূলক ছিল। যুদ্ধ সাংবাদিকতায় মূসা সাদিকের নাম উঠে আসে ভূয়সী মর্যাদায়। ১৯৭০-১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় তার লেখালেখির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে দৈনিক আজাদী পত্রিকার মাধ্যমে তার বিধ্বংসী লেখা গণমানুষের ভাষায় উচ্চারিত হয়। প্রখ্যাত সাংবাদিক মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, আব্দুস সালাম, আবুল মনসুর আহমেদের মত সংবাদিকরা নির্ভিক ছিলেন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একটি নিবন্ধ স্মরণযোগ্য। তার মতে, গণমাধ্যম থাকলে দুর্ভিক্ষও দূর করা সম্ভব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান প্রেক্ষাপট গণমাধ্যমের কর্মীদের উপর নিপীড়নের ঘটনা মামলি। ইউনেস্কো’র ভাষ্য মতে গত বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারাবিশ্বে ১২০ জন সাংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। আর গত দশ বছরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ছয় থেকে সাতশত সংবাদকর্মী। অনেকেই আছেন যারা মারাত্মক আহত হয়েছেন। অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন, কারাগারে দিন কাটিয়েছেন। আমাদের দেশে পেশাজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে আছেন সাংবাদিকরা। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন উদ্বেগ জনক ভাবে বেড়ে চলেছে। বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় সাংবাদিক নির্যাতন পরিসংখ্যান উল্লেখহীন থাকলো। বিশ্ব সাংবাদিকতা দিবসের প্রধান বিষয় হওয়া উচিত ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ যাবৎ বাংলাদেশে যত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে এর কোনটারই সুষ্ঠ বিচার হয়নি। এত কিছুর পরও মত প্রকাশের সুযোগে বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব প্রেস ও ইলেক্ট্রিক এবং অনলাইন মিডিয়া মানুষ ও জাতির কাছে তুলে ধরছে নানা রকম বিষয়। যার ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের ও দেশের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা দিনে দিনে বাড়ছে। এ খাতে দেশের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সস্প্রতি আরও বেসরকারি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল সরকার তৃণমূল থেকে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে জেলা প্রশাসককে জেলা পর্যায়ে সংবাদপত্র প্রকাশনা অনুমোদন প্রদানে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এ সুযোগে প্রতিবছর জেলা-উপজেলা ইউনিয়ন থেকে অনেক দৈনিক প্রকাশিত হচ্ছে। জেলা-উপজেলা ইউনিয়ন গ্রামগঞ্জ পর্যায়ে তরুণ উদ্যোমী উদীয়মান সাংবাদিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ অনিরাপদ পেশায় প্রবেশের পূর্বে তরুণ তরুণীদের দরকার পেশাগত কৌশলী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। চার বছর মেয়াদি মুক্ত সাংবাদিকতার ডিপ্লোমা কোর্স এ ক্ষেত্রে শিক্ষা অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রশিক্ষিত তরুণরাই সংবাদ মাধ্যমকে আধুনিক শিল্প হিসাবে গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা পাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ঢাকার বাইরে সাংবাদিকতার সমস্যা ও সম্ভাবনা খুব অল্প দিন আগেও সাংবাদিকতা পেশার সাথে ‘মহৎ’ বা ‘জাতির জাগ্রত বিবেক’ বিশেষণ যুক্ত হলেও দক্ষ এবং পেশাজীবী সাংবাদিকরা একে একটি পেশা বিবেচনা করতেই সাচ্ছন্দ্য করছেন। অন্যান্য পেশার মতো নিশ্চয়তা,আর্থিক ও মানষিক সুরক্ষা এবং প্রাপ্য সম্মানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অধিকার নিশ্চিতেরও দাবি জানানো হচ্ছে সভা-সেমিনারে। অন্যদিকে, অসম উন্নয়নের ফাঁদে পড়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় বাজেটের অসম বন্টন বা উন্নয়নের ফারাক সারা দেশ জুড়েই। সব কিছুই কেমন যেন ঢাকা বা রাজধানী কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এই বৈশিষ্ট্য থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি সাংবাদিকতা পেশাও। খুব স্পষ্ট ভাবে বিভাজন দেখা যায় ঢাকার সাংবাদিকতা এবং ঢাকার বাইরের সাংবাদিকতায়। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকতাকে অল্পদিন আগেও ‘মফস্বল সাংবাদিকতা’ বলা হলেও এখন সেই শব্দটি ব্যবহার হচ্ছে কম। এর কারণ যতটা জেলা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাংবাদিকদের মূল্যায়ন, তার চেয়ে বেশি এই শব্দটি ব্যবহার করে মনোকষ্ট সামান্য কমানো।
দেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি : আমাদের দেশে গণমাধ্যমের সঠিক সংখ্যা পাওয়া কঠিন। এক হিসেবে গণমাধ্যমের বিকাশের এ চিত্রের সাথেই বেড়ে চলেছে গণমাধ্যমকর্মীর সংখা। কারণ গণমাধ্যম ও এর কর্মীরা একসূত্রে গাঁথা। গণমাধ্যমের সংখ্যা যদিও বা কোন হিসেবে পাওয়া সম্ভব হয়, এর কর্মীর সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা আরো কঠিন। সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ রাখতে শুধু ঢাকা শহরেই রয়েছে অসংখ্য সংগঠন। স্বাধীনতার পর থেকেই বেড়ে চলেছে দেশের গণমাধ্যমের সংখ্যা। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক রুপে গণমাধ্যম কতটা প্রতিষ্ঠিত বা জনগনের আস্থা বাড়াতে পেরেছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে। দশ-পনের বছর আগেও যেখানে একলাখের বেশি প্রচার সংখ্যার সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা এক বা দুইটি, সেখানে বর্তমানে এ সংখ্যা কমপক্ষে আট থেকে দশটি। আগে যেখানে একদিনের পত্রিকা পরদিন বিকেলে প্রত্যন্ত পাঠকের হাতে পৌঁছাতো এখন কিন্তু শিক্ষার হার বৃদ্ধি, জনসচেতনতা বাড়া, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে প্রত্যন্ত গ্রামেও কাক ডাকা ভোরে পত্রিকা পৌঁছে যায়। শুধু সংবাদপত্র নয় অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম যেমন রেডিও, টেলিভিশন বা অনলাইন সাংবাদিকতার তাৎক্ষণিকার বৈশিষ্টের কারণে ঘটনা ঘটার সাথে সাথে যেমন লাইভ সস্প্রচার উপভোগ করছেন দর্শকরা, তেমনি সংবাদপত্রের পাঠকরাও ঘটনার পূর্বাভাস পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই ঢাকার বাইরে যাদের কাজের বদৌলতে এটি সম্ভব হচ্ছে, তারাই বা কেমন আছেন। সেই খবর কেউ রাখেনা।
ঢাকার বাইরের সাংবাদিকতা : গণমাধ্যমের বিকাশের সাথে সাথে রাজধানীর বাইরে বিভাগ, জেলা পর্যায়ে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলো আবার অনেক উপজেলা (যে গুলোতে বেশি আলোচিত ঘটনা ঘটে) সে গুলোতেও প্রতিনিধি নিয়োগ করে থাকে। এটি প্রতিষ্ঠিত বাংলা সংবাদপত্রে বেশি ঘটে। দৈনিক ইংরেজি সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জেলা ভিত্তিক রিপোর্টার নিয়োগ প্রদান করে থাকে। আর বিভাগীয় শহরে ঘটনা ও ব্যবসার কলেরব বিবেচনায় ব্যুরো অফিস এবং বেশ কয়েকজন রিপোর্টার বা ফটোগ্রাফার নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
সমস্যার শুরু যেখানে : পেশার শুরু হয় ব্যক্তির নাম খাতায় লেখার পর থেকেই। সম্ভবত সাংবাদিকতাই একমাত্র পেশা যেখানে পেশার বৈধ তালিকায় নাম লেখাতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়। এ কথা ঢাকা শহরের জন্য যতোটা প্রযোজ্য, ঢাকার বাইরের জন্য তার অনেকগুন বেশি। অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করা কঠিন। আবার যে শুধু অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট, এ কথা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক নয়। জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগের পূর্বে যেমন জোর লবিং-তদ্বিরের দরকার হয়, তেমনি ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে হাউজ গুলো তিন-চার জনকে (অনেক ক্ষেত্রে যারা যারা চাকুরীর জন্য সিভি দেন) সকলকে সংবাদ পাঠানোর জন্য বলেন। এটি অনেকটা মোটর সাইকেলের অনটেস্টের (!) মতো। জেলা পর্যায়ের এই সাংবাদিকরা বেশির ভাগ কাজ করার বাসনা থেকেই ছুঁটতে থাকেন নিয়োগের পেছনে। নিয়মিত পাঠাতে থাকেন সংবাদ। সবার সংবাদের একটি গড় করে অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ পাওয়া যায় বার্তা কক্ষের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সংবাদ গ্রহণ এক প্রকার পরীক্ষা হতে পারে। তবে অনেকে বলার চেষ্টা করেন এর মাধ্যমে সময়ক্ষেপন আর সম্মানি বিহীন রিপোর্টারের কাছ থেকে সংবাদ পাওয়া ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির গণমাধ্যমের এক প্রকার ব্যবসা। সর্বশেষে একজনকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নয়। কারণ কাউকে বাদ সংবাদ পাঠানোর অনুমতি দেবার পর পাঠাতে বিরত রাখার কারণ যদি সেই সব রিপোর্টারের কাছে পরিস্কার করা হয় তাহলে সেই উপদেশ থেকে তারা শুধরাতে পারেন। আবার নিয়োগের সময় কাজকে প্রাধান্য না দিয়ে সস্তায় পাওয়ার (সম্মানি বা ভাতাদি) বিষয়টি বিবেচনা করে হাউজগুলো।
নিয়োগপত্র তো সোনার হরিণ : দেশের গণমাধ্যম এখনো সেই প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি বলেই এখানে শ্রম আইনও মানা হয় না। সুতরাং নিয়োগপত্র, সংবাদ পাঠানোর অনুমতিপত্র, সম্মানি, ওভারটাইম, প্রাপ্য ছুটি, ইনক্রিমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদে পদে আইন লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ্যেই চলে। প্রতিষ্ঠিত ও হাতে গোনা অল্প কয়েকটি গণমাধ্যম ছাড়া জেলা প্রতিনিধিদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়। পরিচয়পত্র অনেক সময় মিললেও নিয়োগপত্র না দেয়ার কারণ হলো, নিয়োগপত্রে আইন অনুযায়ী বেতনের পরিমান উল্লেখ করতে হয়। এটি করলে তো সাংবাদিকদের বেতন দেয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। আর প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের মধ্যে কিছুরও অনেক দিন ঘুরানোর পর নিয়োগপত্র ও বেতন দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ফলে অনেকদিন ধরেই নতুনদের বেওয়ারিশ হিসেবে থাকতে হয়। পরিচয়ের যথার্থ কাগজপত্রাদি না থাকাও তাদের জন্য বিপদ। জগতের সবচেয়ে সমস্যাসঙ্কুল এ পেশায় রয়েছে আইনগত, বাহ্যিক, মানসিক চাপের এ পেশায় যখন নিয়োগ প্রাপ্ত ঢাকার সাংবাদিকরাই নাজেহাল হন মামলা-হামলার অহরহ শিকার হন তখন তাদের কি আবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ‘আপনার নিয়োগপত্র আর কার্ডের কাজ প্রায়! শেষ, ‘অল্পদিনে পেয়ে যাবেন’ অথবা ‘আপনাকে নিয়ে আমরা ভাবছি’। এসব কূটনৈতিক উত্তর পেতে পেতে অনেক সাংবাদিকের ক্লান্ত হওয়ার বিষয়টি খুবই সত্য।
মহার্ঘভাতা, ওয়েজবোর্ড শুধু স্বপ্নই দেখায় : মহার্ঘভাতা বা ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন প্রদান করা শুরু হলে যোগ্যরা অন্যান্য পেশার মতো এই পেশাতেও অংশ নেবেন। সাংবাদিকদের মেধাপাচার কমবে। কিন্তু দেশের কতটি গণমাধ্যম পুরোপুরি এই নীতি মেনে চলে তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে। বেশির ভাগ হাউজই নীতি নির্ধারকদের কয়েকজনকে দিয়ে বলার চেষ্টা করেন যে সেই হাউজে ওয়েজবোর্ড চালু আছে। বিষয়টা অনেকটা ‘বাসের সিট আছে’ কিন্তু ফাঁকা নেই এর মতোই হাস্যরস তৈরী করে। যেখানে ঢাকার সাংবাদিকরাই ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন পান না, সেখানে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। আবার অনেক হাউজ থেকে চারহাজার টাকা বেতন নির্ধারণের পর জেলা সংবাদদাতাদের বলেন, ‘আপনারা তো ফুলটাইম সাংবাদিকতা করেন না’। খুবই হাস্যকর কথাবার্তা। কাজ করানোর সময় যতটা পারা যায় চাপ প্রয়োগ করা আর সম্মানির সময় বিভিন্ন ছুঁতো খুজে কম সম্মানি দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সাংবাদিকতার মতো একটি পেশায় সাংবাদিকরা পূর্নোদ্যমে আত্মনিয়োগ করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতা মানতে হলে অন্যান্য পেশার মতো এটিকেও পেশা হিসেবে নিয়ে সম্মানি বাড়ানোও বিশেষ প্রয়োজন। অবশ্যই প্রয়োজন যদি আমরা সৎ-নিরপেক্ষ-জনস্বার্থের সংবাদ প্রত্যাশা করি।
নেই পেশাগত উন্নয়নের তাগিদ : যদিও আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো প্রশিক্ষণের উপর তেমন গুরুত্ব দেয়না, তারপরও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার আয়োজনগুলোতে সহজেই ঢাকার সাংবাদিকরা অংশ নেন। প্রয়োজনে বাইরেও যান। কিন্তু ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের কথা খুব কমই বিবেচনা করা হয়। আর যেখানে ঢাকার গণমাধ্যমগুলোই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারেনা সেখানে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর তো প্রশ্নই আসে না।
পেশাগত নিরাপত্তা পাওয়া কঠিন : যেহেতু জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে এক বা দুইজন রিপোর্টার কাজ করেন, সুতরাং তারা সকলেই পরিচিত হন। প্রকাশিত সংবাদের বিপরীতে হুমকি-হামলা-লাঞ্চনা নিত্যনৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো পা ভেঙ্গে মধুমতি নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি, কারো দেখে নেয়ার হুমকি, কারো বা সাংবাদিকতা শিখাইয়া দেয়ার (!) হুমকিগুলো আজ আর নতুন নয়। এগুলো মেনে নিয়েই কাজ করতে হয় এ সব সাংবাদিকদের। শুধু হুমকি কেনো খুন, জখমের ঘটনার সময়ও খুব কম গণমাধ্যমই সহযোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে।
সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা যেন মূল্যহীন!! : পরিচিত অনেককেই দেখেছি চার-পাঁচ বছর কাজের পর যখন ঢাকায় নিয়োগ পেতে যান, তখন সেই অভিজ্ঞতাকে তেমন মূল্য দেয়া হয়না। আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয় তাদের। যদিও পরে ওপরে উঠাটা তাদের জন্য সহজ হয়। কিন্তু এটি এক নতুন বিড়ম্বনা হিসেবেই তাদের জীবনে দেখা যায়।
সমস্যা আরো আছে : ঢাকার বাইরের অনেক সাংবাদিক ভালো রিপোর্ট করেন। কিন্তু বার্তাকক্ষ থেকে সাংবাদিকবান্ধব পরিবেশ অনেক সময়ই না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তা ছাড়া হাউজ থেকে দেয়া অ্যাসাইনমেন্টের অনেক সময় প্রকাশ বা প্রচার করা হয়না বলেও সাংবাদিকরা দুঃখ প্রকাশ করেন। কারণ একটি ভালো অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য প্রমাণ নির্ভর,ব্যয় ও পরিশ্রম সাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পর যদি তা প্রকাশ বা প্রচার না হয় তাহলে সাংবাদিকদের মনে পেশার প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে। অনেক হাউজেই জেলা প্রতিনিধিদের ভালো রিপোর্ট প্রতিহিংসাবশত গায়েব হয়ে যায় বলেও শোনা যায়। অনেক সাংবাদিক আজ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে কার্বন কপি বা প্রেসরিলিজ সাংবাদিকতার উপর ঝুঁকছেন। পারিবারিক চাপে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন পেশাটি, যদিও মন থেকে এ পেশা ছাড়াটি খুবই কঠিন। যারা সম্মানী পান,তাদের অনেকের আবার নিয়মিত সম্মানী অনুমোদন হয়না। প্রয়োজনীয় ছুটি চাইলে তা অনুমোদন না করা বা অনেক সময় হাউজের অপ্রত্যাশিত ব্যবহার ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের মনে দাগের সৃষ্টি করে। তাছাড়া ব্যক্তিগত রেশারেশি বা দলীয় সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ঢাকার বাইরের বেশির ভাগ জেলায় সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন রয়েছে। যেখানে একটি সংগঠন রয়েছে সেখানেও রয়েছে টানাপোড়ন। তাই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে একসাথে না থাকার কারণে পর্যাপ্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন-অত্যাচার করার পর প্রভাবশালীরা ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়ার রেওয়াজ দিনদিন বাড়ছে। অন্যদিকে ঝুঁকিবহুল পথ জেনেও যারা এ পেশায় কাজ করছেন, তাঁদের কাঁদা ছোড়াছুড়ি বা অন্য কোন উপায়ে প্রতিপক্ষকে জব্দ করার ঘৃণ্য মনোভাব ত্যাগ না করলে সাংবাদিকতা পেশায় আগত অনেকের হলুদ সাংবাদিকতায় মলিন হবে পেশার সম্মান। এ পেশার উপর কমিটমেন্টের মাধ্যমেই জাতি উপকৃত হতে পারে।
তবু আশা বেঁধে রাখা : স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতার বিকাশ ও সংবাদ প্রকাশনায় গতিশীলতা বুদ্ধি দেশের সুশাসন নিশ্চিতের জন্য অপরিহার্য। বৈষম্যহীন সমাজের কথা চিন্তায় নিলে দেশে সুষ্ঠু ও সমন্বিত উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রত্যাশার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও চর্চার ক্ষেত্রটিকে রাষ্ট্রের নিচুতলা পর্যন্ত নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার বিকাশের শর্ত পূরণ করতে হবে। হাজারো প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকতা। তবে নিরাশার কিছু নেই। স্বপ্ন নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকতার ক্ষেত্র দিন দিন প্রশস্ত হবে। মূল্যায়িত হবে এই সাংবাদিকতা। সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার ভিতর দিয়েই সাংবাদিকরা জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিবে, সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এমন একটি দিন আসবে যখন ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না তারা কি সাংবাদিক নাকি ঠিকাদার, এনজিওকর্মী, শিক্ষক নাকি অন্য কোন পেশার সদস্য। পেশার একটি সত্যিকার নিরাপত্তা গড়ে ওঠার মাধ্যমে এই সাংবাদিকতার সিস্টেম লস কমবে। সাংবাদিকদের কোন আলাদা দল-মত থাকবে না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনই হবে তাঁদের একমাত্র কাজ। সেই দিনটি আমরা দেখে যেতে চাই। আমাদের বিশ্বাস সেই দিন আর বেশি দূরে নয়। আলো অবশ্যই আসবে, সকল অন্ধকার দূর করে। অন্ধকার দূরের সূচনাও হয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমেগুলোর দুই-তিনটি এখন ঢাকার বাইরের সাংবাদিকতাকে মূল্যায়ন করছে। একজন দক্ষ সাংবাদিক এখন এক সাথে ঢাকার সংবাদপত্র, স্থানীয় সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদ সংস্থা, বেতারের সাথে জড়িত হয়ে অনেক ভালো ভাবেই সম্মানের সাথে জীবন ধারণ করছেন। সেই সাথে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মানিত হচ্ছেন, সম্মানিত করছেন পেশাকে। যদিও সে সংখ্যা এখন বেশি নয়। তবুও এটিই আশার আলো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিবাবক, আপনি আমাদের সকলের ভাল চান, দেশের মানুষের ভাল চান তাই ব— আশা করি এই বেদনাহত সাংবাদিক এবং ছোট ভাইটির আবেদনে সাড়া দিয়ে আপনি মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য সরকার কর্র্তৃক সুবিধা প্রদান করে এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা প্রনয়ন করে আরেকটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবেন। পরিশেষে আপনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে আপনার সুচিন্তিত উত্তরের অপেক্ষায়।

বিনীত
এম আরমান খান জয়
মফস্বল সাংবাদিক, গোপালগঞ্জ
মোবাইল : ০১৯৫২-৫১৮০৮২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *