ঢাকা; চোখের জলে স্মরণ করা হলো সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহতদের। একই সঙ্গে প্রতিবাদী শ্রমিকদের মিছিল, স্লোগানে পালিত হলো ভয়াবহ ও বেদনাবিধুর ওই ঘটনার চতুর্থ বার্ষিকী।
গতকাল সকাল থেকেই ফুল হাতে বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষেরা আসেন সাভারের সেই দুর্ঘটনাস্থলে নিহতদের স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে, যেখানে ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ভবন ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন সাধারণ মানুষ। গতকাল সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসেছিলেন ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্বজনরা। স্বজনদের কেউ এসেছিলেন নিহতদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, কেউ এসেছিলেন নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। আবার কেউবা এসেছিলেন ভুক্তভোগী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কাসেম আলী-সালমা দম্পতি এসেছিলেন সাভারের ওমরপুর থেকে শ্রদ্ধা জানাতে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় তারা হারিয়েছেন দুই ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে। এক ছেলে উজ্জল ও ছেলের স্ত্রী খাদিজার লাশ মিললেও আরেক ছেলে আফজালের লাশ এখনো খুঁজে পাননি তারা। গতকাল ছেলের শোকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন কাসেম আলী ও সালমা। জামালপুর জেলার হাজীপুর গ্রাম থেকে এসেছিলেন, খোরশেদা বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি ছেলের লাশ পাইছি। টাকাও পাইছি। কিন্তু মন মানে না। বাড়িতে বসে বসে খালি দিন গুনি। শেষে আজ ছেলের মরণের জায়গা দেখতে আইছি’। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সন্তানহারা পিতা-মাতা, ভাই হারা বোন ও নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা বৃষ্টিতে ভিজে হাজির হয়েছিলেন ধসে পড়া রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জায়গায়। চার বছর আগের বেদনাবিধুর এই দিনটিকে ঘিরে সাভারের ওই ঘটনাস্থলের সামনে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত, আহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের জন্য গতকাল ফজরের নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। এরপর অস্থায়ী বেদিতে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নানা শ্রেণি-পেশাজীবীরা। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদ, গার্মেন্টস শ্রমিক সুরক্ষা ফোরাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি- সাভার উপজেলা শাখা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা, শ্রমিক নিরাপত্তা সুরক্ষা ফোরাম, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, ওশি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন নিহতদের স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, বাসস্থান ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় দায়ী রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও জড়িত অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে শ্রমিকদের যে বেতন দেয়া হয়, এই বেতনে শ্রমিকদের সমস্যায় পড়তে হয়। শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ২০ হাজার টাকা হওয়ার দরকার। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িত সকলকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কেউ যেন ছাড় না পায়। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জমি অধিগ্রহণ করে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতা মোশরেফা মিশুসহ শ্রমিক নেতারা এ সময় বক্তব্য রাখেন।
এদিকে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ঘটনাস্থলে গতকাল পুলিশের বাধার মুখে মাইক ব্যবহার এবং সমাবেশ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঘোষণা মঞ্চ করার কথা থাকলেও পুলিশ তা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া নিরাপত্তার অজুহাতে সড়কে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি জলকামান মোতায়েন রাখা হয় বলে জানান তারা। তবে, এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে তারা দাঁড়াতে পারেননি। আমরা কাউকে বাধা দেয়নি।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহতদের অনেকেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে। গতকাল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চতুর্থ বার্ষিকীতে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে জুরাইন কবরস্থানে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ভয়াবহ ওই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে স্লোগান দেন তারা। জুরাইন কবরস্থানে গতকাল সকাল ১১টার দিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কারখানার মালিকদের কোনো অপরাধ নেই বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মালিকদের কোনো দোষ নেই। এর জন্য দায়ী ভবনের মালিক সোহেল রানা। যে ভবনটি করেছে এবং যারা ভবন তৈরিতে অনুমোদন দিয়েছে, এটা তাদের দায়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার-বেসরকারি সংস্থা একশন এইডের এমন প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত দেড় বছরে একটি লোকও বিজিএমইএতে এসে বলেননি যে, তিনি চাকরি পাননি বা আহত। আমাদের কাছে আনা হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকার ও শ্রম মন্ত্রণালয় মিলে যে ট্রাস্ট ফান্ড আছে, তাতে এখনো টাকা আছে। যদি কেউ কাজ বা চিকিৎসা না পেয়ে থাকেন, বিজিএমইএ’র কাছে এলে সরকার ও বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে।
এদিকে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ঘটনাস্থলে গতকাল পুলিশের বাধার মুখে মাইক ব্যবহার এবং সমাবেশ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঘোষণা মঞ্চ করার কথা থাকলেও পুলিশ তা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া নিরাপত্তার অজুহাতে সড়কে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি জলকামান মোতায়েন রাখা হয় বলে জানান তারা। তবে, এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে তারা দাঁড়াতে পারেননি। আমরা কাউকে বাধা দেয়নি।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহতদের অনেকেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে। গতকাল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চতুর্থ বার্ষিকীতে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে জুরাইন কবরস্থানে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ভয়াবহ ওই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে স্লোগান দেন তারা। জুরাইন কবরস্থানে গতকাল সকাল ১১টার দিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কারখানার মালিকদের কোনো অপরাধ নেই বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মালিকদের কোনো দোষ নেই। এর জন্য দায়ী ভবনের মালিক সোহেল রানা। যে ভবনটি করেছে এবং যারা ভবন তৈরিতে অনুমোদন দিয়েছে, এটা তাদের দায়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার-বেসরকারি সংস্থা একশন এইডের এমন প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত দেড় বছরে একটি লোকও বিজিএমইএতে এসে বলেননি যে, তিনি চাকরি পাননি বা আহত। আমাদের কাছে আনা হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকার ও শ্রম মন্ত্রণালয় মিলে যে ট্রাস্ট ফান্ড আছে, তাতে এখনো টাকা আছে। যদি কেউ কাজ বা চিকিৎসা না পেয়ে থাকেন, বিজিএমইএ’র কাছে এলে সরকার ও বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে।