হাওরে গত দুদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও হাঁস মরে ভেসে উঠছে। এর আসল কারণ হিসেবে ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরির কারণে অক্সিজেন কমে যাওয়াকে দায়ী করা হলেও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও হাওর আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, উদ্ভিদ পচে অ্যামোনিয়া তৈরি হবে না। এর অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে, সেগুলো বের করতে দ্রুত সায়েন্টিফিক স্ট্যাডি করতে হবে। তবে সুনামগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, প্রাথমিকভাবে চুন ছিটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে,স্ট্যাডির কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই।
হাওর আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কাসমির রেজা বলেন, ‘হতে পারে’ ‘সম্ভবত’ শব্দগুলো ব্যবহার করে কথা বলা বিপজ্জনক। আমরা হাওরে কখনও মাছ মরতে দেখিনি তাতো না। কিন্তু এবারের মতো এত বিপুল পরিমাণে ধান বা মাছ হারায়নি হাওরের মানুষ। এদিকে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শঙ্কর রঞ্জন দাস বলেন, ‘ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে এবং এ কারণেই মাছ মারা গেছে বলে ধারণা করছেন তারা।’ তবে হাওরে মাছের মড়কের সঠিক কারণ এখনও জানতে পারেননি তারা।.
সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি প্রশাসনিক জেলার বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত রয়েছে হাওরাঞ্চল। অসময়ে পানি আসার কারণে দেশের সব হাওর মিলিয়ে এক লাখ ৪১ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির বোরো ফসল ডুবে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্র বলছে, গত কয়েকদিনে ২৫ মেট্রিক টন দেশীয় প্রজাতির মাছ মারা গেছে, যার বাজার মূল্য ৬০ লাখ টাকা। জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানিতে খার বেড়ে যাওয়ায় দম বন্ধ হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।
তবে সে তথ্যও যথাযথ নয় উল্লেখ করে ফসল এবং মাছ হারানো মানুষকে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি এখনই সায়েন্টিফিক স্ট্যাডির মধ্য দিয়ে হাওরের মাছ মরার কারণ বের করার তাগিদ দিলেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। তিনি বলেন, ‘১৯৫৯ সালের পর এ পর্যন্ত হাওরে এমন পরিস্থিতি আর হয়নি।বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে হাওরের মাছে মড়ক দেখা দিয়েছে, কিন্তু অসময়ে পানি ঢুকে ধান নষ্ট করার ঘটনা প্রায় ৬০ বছর পরে ঘটলো। এরপর পরই মাছে মড়ক দেখা দিলো,সন্দেহ তৈরি হয়েছে এ কারণেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাওরে মা মাছ মারা গেছে। এখানে তিন চার প্রকারের মাছ সংখ্যায় ভীষণ কম আছে, কিন্তু সেগুলোও মরে গেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাবে সেসব প্রজাতি। এরপরও গত দুদিনে তড়িৎ কোনও উৎস খুঁজতে স্ট্যাডি না শুরু করলে পরবর্তীতে ভুগতে হবে। এর নেতিবাচক প্রভাবটা বুঝতে কয়েক মাস লাগবে।’