শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

সমনামীকে কি হারাতে পারবেন?

Slider বিনোদন ও মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

image

 

 

 

 

 

 

নামগত মিল। প্রেমিকাতেও। ব্যস এটুকুই। বাকি সব কিছুতে দুই রণবীর একেবারে বিপরীত মেরুতে। বরুণ ধবন, সিদ্ধার্থ মলহোত্ররা যতই নাম করুন না কেন ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর আসন দখলের লড়াই কপূর আর সিংহের মধ্যেই। খানদের সাম্রাজ্য একেবারেই আলাদা। অক্ষয়কুমারেরও। তাঁদের নতুন করে কিছু প্রমাণ করার নেই।

শাহরুখ, সলমনদের স্টারডমের লেগাসি বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কি রণবীর কপূর বা রণবীর সিংহর মধ্যে রয়েছে? নাকি কপূর আর সিংহ একে অপরকে হারাতে এতটাই ব্যস্ত যে মাঝখান থেকে এক নম্বরে অন্য কেউ
নাম লিখিয়ে ফেলল! দেখে নেওয়া যাক, অভিনয় থেকে এক্স ফ্যাক্টর…কোন মাপকাঠিতে কে এগিয়ে।

 

সিনিয়র হয়েও ‘হিট’ কম

অভিনেতার সাফল্য তাঁর অভিনয় প্রতিভায় নাকি হিটের বিচারে? যদি উত্তরটা হিটের বিচারে হয়, তা হলে কিন্তু রণবীর সিংহ অনেকটাই এগিয়ে। বক্স অফিসের হিসেবে সিংহর হিট কপূরের চেয়ে বেশি। যদিও কপূর অভিনেতা হিসেবে তিন বছরের সিনিয়র। একটা সময় রণবীর কপূর পরপর বেশ কিছু খারাপ ছবি করেছেন। ‘অনজানা অনজানি’, ‘রয়’, ‘বেশরম’-এর মতো ছবি যে তিনি কেন করেছিলেন, তা কেউ জানে না! ‘বম্বে ভেলভেট’ মুখ থুবড়ে পড়ায় রণবীরের কেরিয়ার নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছিল। গত বছর ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ একটু ব্যবসা করায় তাঁর কেরিয়ার হালে পানি পেয়েছে। সে দিক থেকে রণবীর সিংহ অনেকটাই এগিয়ে। ‘গুন্ডে’, ‘কিল দিল’, ‘বেফিকরে’ ছাড়া তাঁর ফ্লপ নেই। আদিত্য চোপড়া ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’এ তাঁকে হিরো করে যে ফাটকা খেলেছিলেন, সেটা সফল। রণবীরের ‘রামলীলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’ সুপারহিট।

কপূর আর সিংহর অভিনয়ের ঘরানা একেবারে আলাদা। রণবীর সিংহ অনেক বেশি মেথড অ্যাক্টর। যে কোনও চরিত্র করার আগে অসম্ভব প্রস্তুতি নেন। কপূর স্রেফ মাথা দিয়ে অভিনয় করেন। ওটা তাঁর সহজাত ক্ষমতা। আলাদা করে আয়ত্ত করতে হয়নি। সিংহর ভক্তদের দাবি, বাজিরাওয়ের ওই ‘অ্যাগ্রেশন’ কপূর কোনও দিন আনতে পারবেন না। কপূর ভক্তদের মতে, ‘রকেট সিংহ…’ কিংবা ‘রাজনীতি’তে শুধু চোখের দৃষ্টি দিয়ে যে অভিনয়টা রণবীর করেছিলেন সেটাও কারও পক্ষে সম্ভব নয়। ‘বরফি’তে তাঁর পারফরম্যান্স ভোলা যাবে না। তাঁর মধ্যে যে ‘বয়িশ চার্ম’ আছে, সেটা কপূরের একটা ইউএসপি। ‘দিল ধড়কনে দো’তে কিন্তু রণবীর সিংহকেও ক্লিন সেভন লুকে বেশ ইনোসেন্ট লেগেছিল।

বচনা অ্যায় হসিনো

এই গানের লাইনে রণবীর কপূর পারফর্ম করেছিলেন বটে, কথাটা দুই রণবীরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কপূর কেরিয়ারের শুরু থেকে একের পর এক প্রেম করে গিয়েছেন। শুরুটা হয়েছিল, সোনম কপূরকে দিয়ে। তার পর দীপিকা পাড়ুকোন এবং শেষে ক্যাটরিনা কাইফ। আপাতত তিনি নাকি সিঙ্গল! ক্যাটরিনার সঙ্গে তাঁর প্রেম অনেকদিন টিকেছিল। প্রেমিক হিসেবে দীপিকা অবশ্য তাঁকে কোনও নম্বরই দেন না। সরাসরি চিটিংয়ের অভিযোগ তুলেছিলেন রণবীর কপূরের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে প্রেম থাকাকালীনই ক্যাটরিনাকে ডেট করা শুরু করেন রণবীর। ঘটনাচক্রে দীপিকাও কপূরের সমনামীর প্রেমেই পড়েন। রণবীর সিংহও এর আগে অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে প্রেম করেছেন।

কপূর আর সিংহের মধ্যে দীপিকা এখনও হাইফেন। ‘কফি উইথ কর্ণ’-এর শোয়ে কর্ণ দু’জনকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, দীপিকাকে নিয়ে তাঁদের মধ্যে এখনও অস্বস্তি আছে কি না? রণবীর কপূরের জবাব, ‘‘আমি অনেক দিন আগেই সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে গিয়েছি। বাকিরাও এ বার চুপ করলেই ভাল।’’ দীপিকা আর রণবীর সিংহকে একসঙ্গে তাঁর বেশ ভাল লাগে বলেও জানান তিনি। এ দিকে রণবীর সিংহের কথায়, ‘‘ওদের প্রেম ছিল। আমিও এর আগে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছি। অতীতকে গুরুত্ব দেওয়ার মানে হয় না। দীপিকার আগের সম্পর্ক নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই।’’ দু’জনে যাই বলুন না কেন, তাঁদের যে কোনও প্রসঙ্গে দীপিকা আসবেনই। এবং ক্যাসানোভা ইমেজও দু’জনের মধ্যেই বজায়।

এক্স ফ্যাক্টর

রণবীর কপূরের অন্যতম এক্স ফ্যাক্টর তাঁর পরিবার। বলিউ়়ডে কপূর খানদান একটা পরম্পরা বহন করে চলেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পথটা রণবীরের পক্ষে অনেক সহজ ছিল। কপূর পরিবারের বাকি অভিনেতাদের সঙ্গে তুলনা চলে আসার একটা জায়গা ছিল বটে, কিন্তু রণবীর নিজের অভিনয় দিয়েই আলাদা পরিচিতি তৈরি করে নিয়েছেন। সেই তুলনায় রণবীর সিংহের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। যদিও অনিল কপূরের সঙ্গে তাঁর একটা পারিবারিক সম্পর্ক আছে। কপূর পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে রণবীরের মধ্যে একটা সহজাত আভিজাত্য রয়েছে। যে কোনও পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্সে তিনি অনেক বেশি ধীর স্থির। তাঁর একেবারে বিপরীত মেরুতে রণবীর সিংহ। অদ্ভুত আচরণ করতে তাঁর জুরি নেই! রং-চঙে পোশাক পরে তিনি ঘোরতর ফর্ম্যাল অনুষ্ঠানেও চলে যেতে পারেন! নিন্দুকদের মতে, অ্যাটেনশন ক্রিয়েট করার জন্যেই নাকি রণবীর সিংহ এগুলো করে থাকেন। তবে তাঁর সহকর্মীরা বলেন, অতিরিক্ত এনার্জি কীভাবে কাজে লাগান সেটা ভেবে না পেয়েই নাকি রণবীর পাগলামিগুলো করে থাকেন। রণবীর সিংহের এই কার্তিকলাপই তাঁকে আলাদা করে জনপ্রিয় করেছে। তাঁর সেন্স অব হিউমার অসাধারণ। অ্যান্ড্রোজেনাস পোশাকে জনসমক্ষে আসার ধক ইন্ডাস্ট্রির আর কোনও তারকা কিন্তু দেখাতে পারেননি। তিনি ভয়ানক হুজুগে। সেই তুলনায় রণবীর কপূর, কখনও এই স্রোতে গা ভাসান না। নিজের পরিচিত বৃত্তের বাইরে অকপট হতেও দ্বিধা তাঁর। কপূর যতটাই ক্লাসি, সিংহ ততটাই ক্যাজুয়াল!

দ্বন্দ-ধন্দ

এ বার আসা যাক দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতার কথায়। দু’জনের অভিনয়ের ধাঁচ আলাদা তাই যে ছবির প্রস্তাব কপূরের কাছে আসে, সেই ছবি সাধারণত রণবীর সিংহের কাছে যায় না। যদিও কর্ণের শোয়ে এসে দু’জনে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কথা অস্বীকার করেন। বরং একে অপরের বেজায় প্রশংসা করেন। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে সকলেই চান! কিন্তু প্রতিযোগিতা তো আছেই। সিংহ যখন পরপর হিট দিচ্ছেন, তখন কপূরের মাথায় ফ্লপের বোঝা। যে সঞ্জয় লীলা ভংশালীর ছবি দিয়ে কপূর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সেই পরিচালকের সবচেয়ে পছন্দের অভিনেতার নাম এখন রণবীর সিংহ। যশ রাজ ফিল্মসেরও তিনি পছন্দের অভিনেতা। দীর্ঘ বিরতির পর আদিত্য চোপড়া পরিচালনায় ফিরলে সিংহকেই নায়ক করেন। অন্য দিকে রণবীর কপূরের কাছে অবশ্য কর্ণ জোহর রয়েছেন। ক্যাটরিনার সঙ্গে বিচ্ছেদ এবং ফ্লপের চাপে রণবীরের যখন নাজেহাল দশা তখনই কর্ণ তাঁকে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর প্রস্তাব দেন। সেই ছবি মাধ্যমে কপূর খানিকটা আশার আলো দেখেছেন। ‘জগ্গা জাসুস’ এবং সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক রয়েছে রণবীর কপূরের হাতে। এই ছবি দু’টোর উপর তাঁর অভিনয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আর সিংহ এখন ‘পদ্মাবতী’ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে অন্য কিছু ভাবছেন না। ‘পদ্মাবতী’ নিয়ে যে রকম হাইপ, তাতে অঘটন না ঘটলে ছবি সুপারহিট হবেই। আর তাতে কপূরের কপালে একটা ভাঁজ বাড়বে বই কমবে না!

সূত্র :আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *