সেঞ্চুরি করার একটু পরই বাঁ পায়ের পেশিতে টান লাগে তামিম ইকবালের। দলের ফিজিও দৌড়ে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন বাঁহাতি ওপেনার, সমস্যা গুরুতর নয়। তারপর সমস্যা যা হওয়ার হলো কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের বোলারদের!
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পরই আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তামিমের ব্যাট। ৫ চার আর ৫ ছক্কায় শেষ ২৩ বলে মোহামেডান অধিনায়ক যোগ করলেন আরও ৫৭ রান। সানজিত সাহার বলে ফিরলেন ১২৫ বলে ১৫৭ রান করে।
তামিম বলতেই চোখে ভেসে ওঠে আক্রমণাত্মক এক ওপেনার, শুরুতেই চার-ছক্কার বৃষ্টি ঝরানোই যাঁর কাজ! কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভিন্ন তামিমকেই দেখা যায়। যিনি চোখ-ধাঁধানো স্ট্রোক-প্লের লোভ সামলে পরিস্থিতি বুঝে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। এতে অবশ্য লাভ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই।
কালও শুরুতে ঝুঁকি নেননি, নিজেকে গুছিয়ে নিতে সময় নিয়েছেন। এরপর যখন স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছড়াতে শুরু করলেন, বোলারদের আর কিছু করার থাকল না। শুরুর এই জড়তা নিয়ে ম্যাচ শেষে তামিম বললেন, ‘আজ একটু কষ্ট হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছি নবম ওভারে। প্রথম ফিফটিটা পেতেও কষ্ট হয়েছে। তবে বুঝতে পারছিলাম, যত বেশি টিকে থাকতে পারব, উইকেট তত সহজ হয়ে যাবে।’
সেঞ্চুরির পরই দুদ্দাড় পেটাতে শুরু করেন তামিম। দ্রুত ছুঁয়ে ফেলেন ১৫০ রান। শুরুতে খোলসবন্দী থেকে পরে আক্রমণাত্মক হওয়ার পেছনে নাকি গরম বিশেষ ভূমিকা রেখেছে! হাসতে হাসতেই বললেন তামিম, ‘ওটা গরমে হয়ে গেছে (দ্রুত ১৫০)! আসলে আমি দু-একজন বোলারকে টার্গেট করেছিলাম। শট নির্বাচনও ঠিক ছিল। সেঞ্চুরির পর আরও ৫০ যোগ করাটা দলের অনেক কাজে দিয়েছে।’
তামিমের শেষ ৫০ রান (আসলে ৫৭) মোহামেডানকে যে কতটা কাজে দিয়েছে, সেটা ম্যাচের ফলই বলে দিচ্ছে। মোহামেডানের ৩০৭ রান তাড়া করতে নেমে কলাবাগান ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৩ পর্যন্ত যেতে পেরেছে। তবে তামিমের সামনে ডাবল সেঞ্চুরি করারও সুযোগ ছিল। যখন আউট হয়েছেন, তখনো সাত ওভারের বেশি বাকি। কেন পারেননি? এটার কারণও, গরম! পেশিতে টান পড়ায় উইকেটে থাকা কঠিনই হয়ে গিয়েছিল তামিমের। ‘শরীর ওভাবে কাজ করছিল না। যে গরম! যখন ১০০ বা ১১০ রানে ছিলাম, তখনই পেশিতে টান লাগতে শুরু করে। অবশ্যই ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল। তবে শরীরের অবস্থা ভালো ছিল না’—বলছিলেন মোহামেডান অধিনায়ক।
এই ধকল কাটিয়ে উঠতে না পারায় ৭–৮ ওভারেরর বেশি ফিল্ডিংই করতে পারেননি তামিম। তাঁর বদলে দলের অধিনায়কত্ব করেছেন রকিবুল হাসান।
কাল তামিম-ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি শুধু কলাবাগানেরই হয়নি, মাঠ-লাগোয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি টিভি চ্যানেলের গাড়িরও হয়েছে। রসিকতার সুরেই বললেন, যে সাতটা ছক্কা মেরেছেন, তাঁকে বেশি আনন্দ দিয়েছে ওইটা—যেটাতে ভেঙেছে গাড়ির উইন্ডশিল্ড!