ক্রীড়া ডেস্ক : চট্টগ্রাম টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল চতুর্থ দিন শেষেই। অবশিষ্ট বলতে যা ছিল সেটা হলো, কত রানের জয় পায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে ১৮৬ রানে হারিয়ে সফরকারীদের ‘বাংলাধোলাই’ করেছে মুশফিক বাহিনী।
তবে দলীয় এসব কীর্তি ছাপিয়ে বড় হয়ে আসছে মুশফিকুর রহিমের বিস্ময়কর সিদ্ধান্তের বিষয়টি। কারণ বলতে গেলে অনেকটা তার কারণেই ইতিহাস গড়ার সুযোগ পেলেন না সাকিব আল হাসান!
১৩৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩ ম্যাচ সিরিজে ২৫০ রান ও ২০ উইকেট লাভের দারুণ সুযোগ এসেছিল সাকিবের সামনে। কিন্তু পঞ্চম দিনে এসে কিনা সেই সাকিব আল হাসান থাকলেন উপেক্ষিত! তা ছাড়া, সর্বকালের সেরা ২২ জন অলরাউন্ডারের পাশেও নাম ওঠার একটা সুযোগ ছিল এখানে। কারণ ওই ২২ জনের সবাই এক সিরিজে ২৫০ রান এবং ২০ উইকেট পেয়েছেন। যদিও তাদের সবাই ৪ বা তার বেশি সংখ্যক ম্যাচের সিরিজ খেলেছেন।
চতুর্থ দিন শেষে প্রথম শর্ত হিসেবে ব্যাট হাতে ২৫০ রান করেছিলেন সাকিব। এবার দ্বিতীয় শর্ত পূরণ করতে সাকিবের প্রয়োজন ছিল আর মাত্র ২টি উইকেট। যেটা খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সব বাংলাদেশিকে ‘মহাবিস্ময়’ উপহার দিয়ে সাকিবকে মাত্র ১১ ওভার বল করিয়ে সারা দিনে আর বলই করতে দিলেন না দলপতি মুশফিক। ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশ্নটা এখানেই। একটা স্পেল যে কারোরই খারাপ হতে পারে। তাই খানিকটা বিশ্রাম দিয়ে সাকিবকে ফের কেন বোলিংয়ে আনলেন না মুশফিক? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক? হয়তো বা কোনো দিনই না।
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব মাত্র ১১ ওভার বল করার সুযোগ পেয়েছেন। এখানেই প্রশ্ন। কেন এত বড় একটি অর্জনের হাতছানি থাকা সত্ত্বেও সাকিবকে আর বল করতে দিলেন না মুশফিক? বাংলাদেশের দাপুটে জয়ে হয়তো সে নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথাও নেই। তবে যারা রেকর্ড, পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাদের জন্য অনেক বড় এক ধাক্কাই ছিল মুশফিকের ওই দাম্ভিক সিদ্ধান্ত। কারণ দিন শেষে বাংলাদেশই এক অনন্য অর্জন থেকে বঞ্চিত হলো।
রেকর্ডের পাতায় যে কেবল সাকিবের নাম উঠত, তা কিন্তু নয়। বরং পাশে লেখা থাকত বাংলাদেশ নামটিও। যার কারণে যত দিন ক্রিকেট থাকবে তত দিন বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হতো। দিন শেষে ক্রিকেটীয় শিষ্টাচারের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের পাশে বসেই এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন সাকিব।
নিজেই বলেছেন, ‘আফসোস কেন থাকবে। প্রথম দুই টেস্টে যদি আমি ১৭ উইকেট না পেতাম, দশটা যদি হতো (হাসি)। ভাগ্যের সহায়তা দরকার হয়। এটা ছিল না এই টেস্টে। এই কারণে হয়নি। এটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। হলে ভালো লাগত। হয়নি, সমস্যা নেই।’
সিরিজ সেরার পুরস্কারটি সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে সাকিবকে। তাই জানালেন, ‘ভালো লাগে। অবশ্যই একটা ভালো অনুভূতি থাকে মনের ভেতরে। অন্তত দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। ওটারই একটা স্বীকৃতি। একেক সময় একেক জনের একেক লক্ষ্য তৈরি হয়। আগেও যেটা বলেছি, দলের জন্য অবদান রাখাই মূল লক্ষ্য থাকে। করতে পারলে খুশি। আর ভালো খেললে সব থেকে বড় জিনিস যেটা হচ্ছে, নিজের কাছে ভালো লাগে। যখন আমি ভালো খেলতে পারি না কিংবা দলের জন্য অবদান রাখতে পারি না তখন নিজের কাছে খারাপ লাগে, আমি ভালো খেলতে পারলাম না। মন খুশি থাকলে তো সবই খুশি।’
সাকিবকে দিয়ে বল না করানোর ক্ষেত্রে অনেকটা খোঁড়া যুক্তিই দিলেন মুশফিক। তার ভাষায়, ‘আমার হাতে আরো অপশন ছিল। সাকিবের বল তখন টার্ন পাচ্ছিল না। তাইজুল ও জুবায়েরের বল ভালো হচ্ছিল। তা ছাড়া, পেসাররাও বেশ ভালো বল করছিল। সব মিলে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’
এখানেই হয়তো বড় আক্ষেপ। কারণ সাকিব যে কোনো সুযোগই পেলেন না তৃতীয় টেস্টের শেষ দিনে। প্রথম সেশনের পর সারা দিন এমন একটা রেকর্ডের হাতছানি থাকা সত্ত্বেও আর বলই পেলেন না মিস্টার অলরাউন্ডার। বলা বাহুল্য, এই সেই সাকিব, যাকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মতো দলও সুপার ওভারে বোলিং করতে দেয়। এই সেই সাকিব, যে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ অাফ্রিকার মতো দেশে গিয়ে একাধিকবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়ে আসেন। আর তার এমন অর্জন থাকা সত্ত্বেও মাত্র একটা স্পেল বাজে বল করার অজুহাতে এভাবে বঞ্চিত করলেন মুশফিক? সাফল্যের ভেলায় ভাসতে থাকা সময়ে সবাই মুশফিককে ক্ষমা করলেও ইতিহাস হয়তো কোনো দিনই তাকে ক্ষমা করবে না। কারণ এমন সুযোগ একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে খুব কমই আসে।
সূত্র : বিএসপিএন২৪.কম