শ্রীপুরে নিরব ভূমিকায় প্রশাসন ভেজাল খাবার ও নকল ঔষধের রমরমা ব্যবসা !

Slider গ্রাম বাংলা

জিনসিন এক দোকানের চিত্র

 

 

 

 

 

 

রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর):  গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ, ভেজাল খাবার। অন্য দিকে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন পন্যের দাম ইচ্ছামত বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে নিচ্ছে দোকানীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ঔষধের দোকান, ভেজাল খাবারের হোটেল। অপর দিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও কাঁচা বাজারে প্রশাসনের সঠিক তদারকি না থাকায় দোকানীরা ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি করে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। ঔষধ পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঔষধের অনুমোদনহীন লাইসেন্সবিহীন অনেক দোকান গড়ে উঠেছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই পাওয়া যায় সব ধরনের ঔষধ। অনেক সময় সহজ-সরল রোগীদের জোর করে ঔষধ দেওয়া হয় মেয়াদোত্তীর্ণ নামে বেনামে প্রতিষ্ঠানের। এসব ঔষধের মধ্যে রয়েছে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বা সিরাপ, ব্যথানাশক ট্যাবলেট, বলবর্ধক ট্যাবলেট বা সিরাপ প্রভৃতি।
এছাড়াও ডিআর (ড্যাগ রেজিষ্ট্রেশান) নম্বর বিহীন বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সম্পূরক (ফুড সাপ্লিমেন্ট) দেদারছে বিক্রি হতে দেখা গেছে। উপজেলার নয়নপুর বাজারে একটি ঔষধের দোকানের সামনে ঔষধ কোম্পানীর এক সরবরহকারীর সঙ্গে কথা হলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি জানান, উপজেলার বেশ কয়েটি বাজারে ঔষধের দোকানে যৌন উত্তেজক, ব্যথানাশক ও শক্তিবর্ধক ওষুধ বিক্রি করতে দেখা যায়। তিনি আরো জানান, নয়নপুর বাজারের এক ঔষধ ব্যবসায়ী ভারতীয় একটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট দেখিয়ে বলেন, এর প্রতিটি পাঁচ টাকায় কিনে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

এদিকে ভেজাল খাবার আর কাঁচা বাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ অবস্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ওলি গলিতে গড়ে উঠেছে নি¤œমানের, অপরিষ্কার ও স্বস্তা প্রকৃতির কিছু খাবার হোটেল। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাবার খেয়ে ক্ষুধা মিটিয়ে থাকে। কিন্তু খাবারের সাথে যে বিষ খাচ্ছে সে কথা কে জানে? দেদারচ্ছে এক দিকে খাবার বিক্রি করে খাবার পাতিল খালি করছে। আর অন্য দিকে সেই খালি পাতিল খোলা জায়াগায় ফেলে রাখায় কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন জন্তু খাবার তৈরির ওই পাতিলে মুখ দিচ্ছে। এগুলো আবার তেমন একটা পরিষ্কার না করে খাবার তৈরির কাজে ব্যবহার করে। অন্য দিকে কাঁচা বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সরকার ঠিক করে দিলেও সরকারের নির্দেশকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অধিক দামে বিক্রি করছে দোকানীরা। যেখানে গরু মাংসের দাম ৪২০ টাকা বেধে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। অন্যান্য পণ্যের দামও প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানীরা।

জৈনাবাজরে আসা এক ক্রেতা স্থানীয় এক পোশাক কারখানার শ্রমিক সুমন মিয়া জানান, প্রতি দিন পাঁচ দশ থেকে শুরু করে ২০ টাকা পর্যন্ত কাঁচা বাজরে যে কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়ে যায়। এগুলো যদি প্রশাসন সঠিক ভাবে গুরুত্ব দিতো তাহলে হয়তো পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারতাম। অনেক সময় অধিক দাম দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার টাকা পকেটে থাকে না।

পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক একেএম আবুল খায়ের বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যদি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা একটু কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে। তাই স্থানীয় প্রশাসন মাসে কয়েকবার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নকল ঔষধের ওপর অভিযান পরিচালনা করে। তাহলে ভেজাল খাবার, নকল ঔষধ যেমন কমে আসবে তেমনি বাজার দর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জীবনযাত্রার মান আরো অগ্রগতি হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ব্যথানাশক ও যৌন উত্তেজক ঔষধ প্রকাশ্যে বিক্রির বিষয়টি উদ্বেগজনক। এদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি। আমরা সরাসরি নকল ঔষধের অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাতে পারি না।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি নন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গেলেও কর্মকর্তা রেহেনা আকতারকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মোঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *