রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামীকাল ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আজ রোববার প্রদত্ত এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের নিকট সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দেশের তরুণ প্রজš§ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি গঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে এই প্রত্যাশা করি।’
আবদুল হামিদ ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবস উদ্যাপন, দেশের তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুজিবনগর দিবস আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমি এ দিনে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার। স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান-কে যাঁদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালিত হয়। সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক-সংগঠকসহ আপামর জনগণকে যাঁরা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন।’
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ২৬ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারির মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যাত্রা শুরু করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাসহ বিশ্ব দরবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানোসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় এ সরকার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। মুজিবনগর সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা ও রণকৌশল মুক্তিযুদ্ধকে সফল পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় ‘আমাদের’ কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
১৭ এপ্রিল শপথ অনুষ্ঠান ও মুজিবনগর সরকার গঠন এবং সরকার পরিচালনায় যাঁরা সহযোগিতা করেছিলেন তিনি তাঁদের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি। বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যে যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, বেসরকারি খাতে উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনে বিভিন্ন অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যর হার। সরকার বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হব, ইনশা-আল্লাহ।
রাষ্ট্রপতি মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।